অনুসরণ করার মতো সামনে কেউ ছিল না: রাবা খান

যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-৩০ ক্যাটাগরিতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে নির্বাচিত ৩০ তরুণ উদ্যোক্তাদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের ‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’র উদ্যোক্তা, তরুণ ইউটিউবার, এন্টারটেইনার রাবা খান; যিনি সমাজের নানা বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও বানিয়ে তরুণদের মাঝে পরিচিতি পেয়েছেন।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2020, 11:44 AM
Updated : 2 April 2020, 12:53 PM

গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রায় ছয় বছর আগে মাত্র ১৫ বছর বয়সে ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণ শুরুর পর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসার আদ্যোপান্ত জানালেন তিনি; শোনালেন আগামীর পরিকল্পনার কথাও।

যখন খবরটি পেলেন…

পুরো বিষয়টি আমি জানতে পেরেছিলাম চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে, তখন আমাকে ফটোশুটের জন্য ডাকা হয়েছিল। সেই তখন থেকে এখন পর্যন্ত পুরো বিষয়টা সিক্রেট রাখা অনেক কষ্টকর ছিল। বাবা বাসায় শুধু ফোর্বসই পড়েন। আই থিংক এটিই (নির্বাচিত হওয়া) সবচেয়ে বেশি প্রাইড হওয়ার মতো বিষয়।

ফোর্বসের কাভারে থাকতে পারাটা ভেরি বিগ ডিল। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আগামীতেও হয়তো আরো বেশিবার ফোর্বসে থাকতে পারব। আই হোপ বাংলাদেশেকে রিপ্রেজেন্ট করে ভালোই করতে পারব।

যে কাজের জন্য ফোর্বসের তালিকায়

ছয় বছর আগে ভিডিও বানানো শুরু করেছিলাম।‘দ্য ঝাকানাকা প্রজেক্ট’ চ্যানেল থেকে নিয়মিত ভিডিও বানাচ্ছি। এই প্রজেক্টটিই ওদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। ভিডিও নিয়ে আমার পরিকল্পনার কথাও ওদের বলেছিলাম। বলেছিলাম, আমাদের এই জেনারেশন আগে আগেই কাজের পরিকল্পনা করে রাখে। আমরা ‘প্ল্যান এ’, ‘প্ল্যান বি’ সবকিছুই চিন্তা করেই আগাই। বিষয়টি ওদের কাছে ভালো লেগেছে। সঙ্গে আমার অনেক বিজনেসও আছে। সেই বিষয়গুলোও হয়তো ওরা ভাবনায় রেখেছিল।

ফেইসবুক থেকে নেওয়া

স্বীকৃতি বনাম মানুষের প্রত্যাশার চাপ

এটি আমার জন্য অনেক বড় একটি স্বীকৃতি। স্বীকৃতির সঙ্গে সঙ্গে প্রেশারও নিয়ে আসে। মানুষ এখন আমার কাছ থেকে আরো ভালো কিছু প্রত্যাশা করবে। ছয় বছর আগে মনে করেছিলাম, ভিডিও বানাবো; দেখি কী হয়। কিন্তু এখন ওই রকম আর চলবে না। মানুষের প্রত্যাশার বিষয়টি মাথায় নিয়ে কোনো না কোনো উপায়ে আরো ভালো কাজের পরিকল্পনা করেছি। আশাকরি, সামনে ভালো কিছুই হবে।

সবচেয়ে কম বয়সীদের তালিকায়

অনূর্ধ্ব-৩০ ক্যাটাগরিরর মধ্যে অনূর্ধ্ব-২১ তালিকায় আমি স্থান পেয়েছি। শুধু তাই নয়, আমাকে ফিচার্ড অনারারি করা হয়েছে। মিডিয়া, মার্কেটিং আ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিং ক্যাটাগরির ফিচার্ড অনারারি আমাকে করা হয়েছে। সেই ক্যাটাগরিতে পুরো এশিয়ার এতগুলো দেশের মধ্যে থেকে বাংলাদেশ থেকে একজনকে নেওয়া হয়েছে তাও আবার আমি-এটি কখনোই আমার মাথায় আসেনি।

ভিডিও কনটেন্ট নির্মাণের শুরু যেভাবে

আমার উদ্দেশ্য খুব সাধারণ ছিল। কাছে একটি ক্যামেরা আরেকটি একটি ট্রাইপড ছিল। আমার ভাই তখন অ্যাডোব ফটোশপে ছবি এডিট করা শুরু করল। আমি পরে ভাবলাম অ্যাডোব ফটোশপের কাজ পারলে প্রিমিয়ার প্রো’র কাজ কেন পারব না। ওভাবেই আস্তে আস্তে শিখতে থাকলাম।

এতো বছর পর নিজের ভিডিও নিজে এডিট করতে পারি; এটি আমার কাছে খুব বড় বিষয়। সেই থেকে শুরুর পর অনেক মানুষই আমাকে দেখেছে, পছন্দ করেছে। মানুষের ভালোবাসাই বেশি পেয়েছি। যে কারণেই হয়তো আমি আজ এখানে আসতে পেরেছি।

চলার পথ মসৃণ ছিল না

এই পথে অনেক বাধা ছিল। যেহেতু মিডিয়া বলতেই একটুখানি খারাপ চোখে দেখেন অনেকে। আমাদের সোসাইটির মধ্যে এখনও ধারণাটি আছে। আমি এটিকে নতুন নাম দিতে চাচ্ছিলাম। নতুন নামটা এরকম হয়েছে যে, মিডিয়ার মেয়েরা খারাপ না। মিডিয়া মানেই সবসময় খারাপ হবে-এই ধারণার পরিবর্তন দরকার।

ছবি: ফোর্বস ম্যাগাজিন

যারা আমার কাজ নিয়ে সমালোচনা করছে তাদের ব্যাপারে চিন্তাই করছি না। কারণ যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন আমার জীবনে তাদের ভূমিকা অনেক বেশি। যারা আমার সমালোচনা করেছে তারা যেটা ভাবার সেটা ভাববেই কিন্তু  আমার কাজে আমাদে তরুণ প্রজন্ম কোনো না কোনোভাবে অনুপ্রাণিত হয়।

তার সামনে কোনো উদাহরণ ছিল না

ভিডিও কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে আমিই দেশের প্রথম ফিমেল কমেডিয়ান। ফলে অন্য কারো ক্যারিয়ার ট্র্যাক ফলো করার কোনো সুযোগ আমার ছিল না; ফলো করার মতো সামনে কেউ ছিল না। আমি এভাবেই টিভি শো করেছি; পরে রেডিও শো করেছি।

এখন পুরো একটা জেনারেশনের সামনে আমার কাজগুলো উদাহরণ হিসেবে আছে। মানে, তারা বুঝতে পারবে- এটা করলে মানুষ নিতে পারবে না আর এটা করলে ভালো হবে। আমার ছয় বছরের অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কীভাবে কাজ করতে হবে, মানুষের সঙ্গে কীভাবে বিহেভ করতে হবে-সেটা তারা দেখতে ও বুঝতে পারবে।

আমি চাই, ভিডিও বানানোর কাজগুলো ভালোভাবেই এগিয়ে যাক। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা যারা এই ক্যারিয়ারে আসতে চাচ্ছেন তারা আমার কোনো উদ্যোগ ব্যর্থ হতে দেখলে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।

ফলে এখন চিন্তা করি, এটি এখন আর শুধুমাত্র আমার পথ না; এটি এখন আমার হয়ে অন্য মেয়েদের জন্যও কনটেন্ট তৈরির উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে।

ক্যারিয়ারের বাঁকবদলের পরিকল্পনা

এখন থেকে যে কাজগুলো আমার ভালো লাগবে শুধু সেই কাজগুলোই করবো। মাঝখানে অনেক ব্র্যান্ডের জন্য অনেক কাজ করেছি, যেগুলোর জন্য আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রাউড ছিলাম না। আবার অনেক কিছু বলাতে আশেপাশের মানুষজন হয়তো বলতে পারে, ‘হ্যাঁ এখন এটা করছো’।

ছবি: ফোর্বস ম্যাগাজিন

এখন এই জায়গায় চলে আসার কারণে আমার নিজেরটা নিজে চুজ করতে পারবো। এখন রাবা যেগুলো পোস্ট করবে সেটা ভালোই হবে। একজন যাতে ট্রাস্ট করতে পারেন, ট্রাস্ট বিল্ড করার জন্য সেই সময়টা দরকার ছিল।

‘ভাইরাল হওয়া মানেই ক্যারিয়ার হয়ে যাওয়া নয়’

আমাদের অনেকে বলে, অনেক ভিডিও অডিয়েন্স খায় না। কিন্তু ভালো কনটেন্ট বানালে ভাইরাল হওয়া কোনো ব্যাপার না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার ভাইরাল হওয়াই কিছুই যায় আসে না। ইন্টারনেটের দুনিয়া খুবই ঠুনকো। তিনবার চারবার ভাইরাল হওয়া মানেই ক্যারিয়ার হয়ে যাওয়া নয়।

২০১৬ সালে আমার অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতেও সেটা অব্যাহত রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ভিডিও বানিয়ে মানুষের মাঝে থাকতে হবে। ভিডিও বানানোর সময় বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে; যেমন, আমার ভিডিওতে কখনো কাউকে গালি দিই না।

থাকল কিছু সূত্র

কয়েকটা তো অবশ্যই আমার সিক্রেটস হবে। সেগুলো আমি বলব না। আর ওই যে বললাম, ভিডিওতে আমি কখনোই গালি দিই না। ভিডিওগুলো যাতে ফ্যামেলি ফ্রেন্ডলি হয়-সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে যেন দেখা যায়। কয়েকটা বিষয় চিন্তা করলে অটোমেটিক সব শ্রেণির দর্শকের সঙ্গে কানেক্ট থাকা যায়।

পরিবারের বড়, ছোট, মেঝ-সবাই কিন্তু কোনো না কোনোভাবে আমাকে চেনেন। কারণ আমি তার গল্পটা বলছি, ফলে আমার ভিডিওর সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পান।