ফুটবল মাঠ থেকে রকের মঞ্চে সাকি

বাংলাদেশ আর পশ্চিম বাংলা তথা কলকাতার সঙ্গে ভালোবাসার বন্ধনটা তুঙ্গে উঠেছে সম্প্রতি। সৃজিত আর মিথিলার বিয়ে নিয়ে বেশ আলাপ হলেও- ভালোবাসার বন্ধনে আগেই নিজেদের এক সুতোয় গেঁথেছেন এশা ইউসুফ এবং পশ্চিম বাংলার রক গায়ক সাকি ব্যানার্জি।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 04:38 AM
Updated : 1 Jan 2020, 04:40 AM

সাকি ব্যানার্জি পরিচিত গীতিকবি এবং গায়ক হিসেবে। পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা ব্যান্ড ক্যাকটাসের ভোকাল হিসেবে আছেন তিনি। লিখছেন গানও। বাংলাদেশে কাজ করছেন – তাও বেশ কয়েক বছর হল।

২০১৮ সালে ঢাকা থিয়েটারের আয়োজনে মঞ্চায়িত ‘পুত্র’ নাটকটির আবহ সঙ্গীত তৈরি করেন তিনি। সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ ‘বিউটি অ্যান্ড দ্যা বুলেট’য়ের জন্য সুর সঙ্গীত আয়োজন করেন সাকি। এরমাঝেই বিয়ের বাদ্য। সব মিলিয়ে সাকির বাদ্য বাজছে এপার –ওপার দুই বাংলাতেই।

সেই বাদ্যের ডাক পড়লো পৌষের এক সন্ধ্যায়। ধোঁয়া ওঠা চায়ের মগ আর সাকীর গান – সব আয়োজন শুধু ছিল গ্লিটজের জন্যেই।

তাই গল্পের শুরুতেই জানা গেল- সাকি আসলে খেলতো ফুটবল। সেটাই ছিল তার নেশা। আর তার বাবা অভিজিৎ ব্যানার্জি ব্যাঙ্গ রসাত্মক গান করতেন। গানে–সুরে-কথায়-সমালোচনায় উড়িয়ে দিতেন সমাজ ব্যবস্থার অনাচার।

ওদিকে ছোট্ট সাকি ছিলেন পায়ের জাদুকর। ক্রিড়াচক্রতেও খেলতেন। তবে কবিতা লিখতেন। শব্দে শব্দ মেলাতে পারতেন দারুণ। ‍ওমনি বাবার ইচ্ছা হল- তবে তাই হোক। শব্দের জাদুতেই থিতু হোক সাকি। সেসময় এক বড় ভাই একটা ব্যান্ড করেন যেখানে গীতিকার আর গায়ক দরকার ছিল। সাকি ভিড়ে গেলেন সেই দলে। হয়ে গেল শুরু তার রকযাত্রা।

তখন সব ধরনের গান করতেন তিনি। বলেই ফেললেন বাংলাদেশের ব্যান্ডগুলোর কথা। পশ্চিমবঙ্গের অনেকের মতো তাকেও অনুপ্রাণিত করেছে এলআরবি, নগরবাউল। আর নিজের দেশের মহীনের ঘোড়াগুলি, ক্যাকটাস, ফসিল্স তো আছেই।

২০০৭ সালে ক্যাকটাসের ফাউন্ডার মেম্বার সিধুর সঙ্গে দেখা হওয়ার পরেই তার রকযাত্রা নতুন স্টেশন খুঁজে পায়। দশবছর সিধুর সঙ্গে থাকা হল তার। শুরু হল একসঙ্গে গান গাওয়া। লেখাও। প্রতিদিন চারটি করে গান লেখার রীতিমত ক্লাস চলতো তার। সেই অভ্যাস এখনও তার আছে।

সাকির ভাষায়, “সেই গানগুলো এখনও আমাকে সাহায্য করে।”

২০০৯ সালে ‘প্রেম বাই চান্স’ সিনেমায় প্রথম গীতিকার হিসেবে সুযোগ পান সাকি। ততদিনে রূপঙ্কর ব্যানার্জির অ্যালবামসহ বিভিন্ন অ্যালবামে কাজ করছেন তিনি।

২০১২ সালে ‘নামতে নামতে’ সিনেমার একটি গানের সঙ্গীত পরিচালনার সুযোগ পান সাকি। তবে ২০১৩ সালের ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় দুটি রক গান তার পায়ের নিচের মাটিকে শক্ত করে দেয়।

পাশাপাশি নিজের ব্যান্ড তো ছিলই। নিজের ব্যান্ডে গান করতে করতে ক্যাকটাসে যোগ দেন ২০১৭ সালে। ব্যান্ডে কাজ করা, সিনেমায় কাজ করা, ক্যাকটাসের ঘরানার কাজ করা। সবকিছুর পরেও কিছু গান থাকে বলে সাকির মতামত।

সাকি বলেন, “এই গানগুলো নিয়ে কিছু করার জন্যই আমার একক প্রয়াস।”

অতএব ইশারা এবার একক ক্যারিয়ারের দিকে। ২০১৬ সালের দিকে প্রথম একক গান প্রকাশিত হয়। ‘বিষাক্ত চাঁদ’ প্রকাশিত হয় নারী দিবস উপলক্ষ্যে। বাংলাদেশের ‘গান বাংলা’ চ্যানেলেও গানটি প্রচারিত হয়।

অতএব এদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক পুরানো। রক গানের ক্ষেত্রে এই দেশ অবশ্যই ‘পাইওনিয়ার’- বলে মনে করেন সাকি। ‘মাইলস থেকে প্রমিথিউস অবধি সবকিছুই শুনতাম’- যোগ করেন তিনি।

 

এর পরেই ‘‍বিউটি অ্যান্ড দ্যা বুলেট’ এবং ‘গার্ডেন গেইম’ ওয়েব সিরিজে সুর সঙ্গীত করেছেন। এবার একক যাত্রা শুরু করতে তাই প্রস্তুত তিনি।

কারণ হিসেবে সাকী বলেন- “আমার গান আমি শোনাতে চাই। কারণ ঢাকার গান শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছি- তাই ঢাকাকে আমার গুরুদক্ষিণা দেওয়া দরকার।”

এমন কী তার ব্যান্ডের অ্যালবাম ‘ভারতবর্ষ’য়ের অ্যালবাম প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের জি সিরিজের আয়োজানে. তাও ২০১৫ সালে। ৩০ অক্টোবর অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়।

সেখান থেকেই গান শুনে অবসকিউরের টিপু তাকে গান করার আমন্ত্রণ জানান। সেই থেকে শুরুই হয়ে গেল- বলে মনে করেন সাকি।

কিন্তু এপার ওপার বাংলার কাজ করার – বাস করার প্রতিবন্ধকতা কেমন বোধ করছেন?

এই প্রসঙ্গে সাকি বলেন, “এখানে শুরুটা আবার ‘ঠিক শুরু’র মতন। নবীনের মতো শুরু করা। সেটা পরিবার হোক, সঙ্গীত– সব অঙ্গনে।

তবে সাকি আশা করেন, কোনো একদিন দুই বাংলাকে তিনি একসঙ্গে উপস্থাপন করবেন সুর এবং শব্দ দিয়ে। সেই অবধি তার রকযাত্রা চলতেই থাকবে।