৫২ চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ব্যবসাসফল’ কেবল ‘পাসওয়ার্ড’

২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মোট ৫২টি চলচ্চিত্রের মধ্যে একমাত্র মালেক আফসারীর ‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে লাভের মুখ দেখেনি বলে জানিয়েছে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2019, 09:43 AM
Updated : 26 Dec 2019, 11:46 AM

সংগঠনটির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারত থেকে আমদানীকৃত চলচ্চিত্রসহ মোট ৫২টি চলচ্চিত্র এবার মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া আর কোনো চলচ্চিত্র ব্যবসাসফল হয়নি।

‘মনের মতো মানুষ পাইলাম না’ চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েক সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে চললেও সেটিকে ব্যবসাসফল বলা যাবে না। এর বাইরে বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই দর্শক টানতে পারেনি।”

প্রদর্শক সমিতির ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ‘ব্যবসাসফল’র তকমা পাওয়া চলচ্চিত্র ‘পাসওয়ার্ড’ চলতি বছরের জুনে মুক্তির পরপরই নকলের অভিযোগ উঠে; সেন্সর বোর্ডে পাঠানো এক চিঠিতে এটিকে কোরিয়ান চলচ্চিত্র ‘দ্য টার্গেট’র নকল বলে অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ আমলে নিয়ে পুনঃপ্রদর্শনের পর দুই চলচ্চিত্রের মধ্যে আংশিক মিল পেয়ে ‘পাসওয়ার্ড’র প্রযোজক ও পরিচালককে সতর্ক করে চিঠি দেয় চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড।

নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসকে ফিল্মসের প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান; বিপরীতে আছেন বুবলী।

‘পাসওয়ার্ড’র মতো ব্যবসাসফল না হলেও এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘যদি একদিন’, ‘আলফা’, ‘নোলক’, ‘আবার বসন্ত’, ‘সাপলুডু’, ‘ন ডরাই’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে দর্শকমহলে।

কেবল ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবসাসফল কেন?

‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত বেশিরভাগ চলচ্চিত্রকে ‘সিনেমা’ বলতে নারাজ ‘আম্মাজান’, ‘ইতিহাস’র মতো হিট চলচ্চিত্রের পরিচালক কাজী হায়াত।

তার বয়ানে সিনেমার সংজ্ঞা হলো, “যা প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শনের জন্য নির্মাণ করা হয় ও দর্শনীর বিনিময়ে দর্শকরা দেখে-সেটাই হলো সিনেমা।”

এ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া বেশিরভাগ চলচ্চিত্রই সেই সংজ্ঞায় পড়ে না বলে দাবি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ পরিচালকের; “ওগুলো চলচ্চিত্র হতে পারে কিন্তু সিনেমা না। চলচ্চিত্র আর সিনেমা আলাদা জিনিস।”

“হলিউডের তুলনায় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রের ধারা একদম আলাদা। আমাদের দর্শকরা সিনেমায় গান, মারামারি, নাটকীয়তা দেখতে চায়। নিজের ভালোলাগার কথা চিন্তা করে নয়; দর্শকদের ভালোলাগার কথা চিন্তা করে সিনেমা বানাতে হয় পরিচালকদের।

“সত্যজিত রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু দর্শকদের জন্য আলাদা ধরনের সিনেমা বানিয়েছি। আমার ছবি অনেক সময় আমিই দেখতাম না।”

দর্শকরা যে ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে অভ্যস্ত ‘পাসওয়ার্ড’ সেই ধরনের চলচ্চিত্র বলেই দর্শকরা এতোটা গ্রহণ করেছে বলে ধারণা কাজী হায়াতের।

তবে একটি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে টিকে রাখতে আরও বেশি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দেওয়ার তাগিদ দিলেন তিনি।

অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে মাত্র একটির ‘ব্যবসাসফল’ হওয়াকে ‘হাতাশাজনক’ বলছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার।

“চলচ্চিত্রে এক ধরনের হতাশা কাজ করছে। লগ্নীকৃত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রযোজকরা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন না। প্রকৃত পক্ষে যারা প্রযোজক তারা এখন সিনেমা বানাচ্ছেন না। ফলে ভালো ছবি কম হচ্ছে।”

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সিনেপ্লেক্স চালু হওয়ায় চলচ্চিত্রের মন্দাভাব কেটে যাবে বলে আশার কথা শোনালেন গুলজার।

বছরজুড়ে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের তালিকা

আমদানীকৃত ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘বিসর্জন’ বছরের প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পায় ১১ জানুয়ারি; কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালনায় ছবিতে অভিনয় করেন জয়া আহসান। এরপর ধারাবাহিকভাবে মুক্তি পায় এম আজাদের ‘আই অ্যাম রাজ’, তারেক শিকদার পরিচালিক বাপ্পী-মিম জুটির ‘দাগ’, আরজু-পরীমনি অভিনীত ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, হাবিবুল ইসলাম হাবিব পরিচালিত চলচ্চিত্র ও মৌসুমী অভিনীত 'রাত্রির যাত্রী’, তৌকির আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’, বদিউল আলম খোকনের ‘অন্ধকার জগত’, রাজিবুল হোসেনের ‘হৃদয়ের রঙধনু’, বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত পূজা চেরি অভিনীত ‘প্রেম আমার টু’, মোস্তফা কামাল রাজ নির্মিত তাহসান-শ্রাবন্তী জুটির ‘যদি একদিন’, ‘বয়ফ্রেন্ড’, ‘কারণ তোমায় ভালোবাসি’, ‘লাইভ ফ্রম ঢাকা’, ‘প্রতিশোধের আগুন’, ‘তুই আমার রানী’, ‘আলফা’, ‘নোলক’, ‘আবার বসন্ত’, ‘পাসওয়ার্ড’, ‘আলোয় ভূবন ভরা’, ‘ভালোবাসার উত্তাপ’, ‘আব্বাস’, আমদানীকৃত চলচ্চিত্র ‘কিডন্যাপ’, ‘অনুপ্রবেশ’, আমদানীকৃত চলচ্চিত্র ‘শেষ থেকে শুরু’, ‘গোয়েন্দাগিরি’, ‘কালো মেঘের ভেলা’, আমদানীকৃত ‘বিবাহ অভিযান’, ‘আকাশমহল’, ‘ভালোবাসার রাজকন্যা’, ‘ভালোবাসার জ্বালা’, ‘মনের মতো মানুষ মানুষ পাইলাম না’, ‘ভালোবাসা ডটকম’, আমদানীকৃত ‘প্যান্থার’, ‘মায়াবতী’, ‘অবতার’, ‘পাগলামী’, ‘সাপলুডু’, আমদানীকৃত ‘বচ্চন’, ‘ডনগিরি’, ‘পদ্মার প্রেম’, ‘বেগমজান’, আমদানীকৃত ‘কণ্ঠ’, ‘ইতি, তোমরাই ঢাকা’, আমদানীকৃত ‘জানবাজ’ ও ‘পাসওয়ার্ড’, ‘ইন্দুবালা’, ‘ন ডরাই’ ‘প্রেমচোর’, ‘গার্মেন্টস শ্রমিক জিন্দাবাদ’, ‘গহীনের গান’, ‘ফরায়েজি আন্দোলন ১৮৪২’।

২৭ ডিসেম্বর বছরের শেষ চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তি পাচ্ছে মাসুদ পথিকের চলচ্চিত্র ‘মায়া দ্য লস্ট মাদার’। এছাড়া আরেক চলচ্চিত্র ‘কাঠবিড়ালী’র মুক্তির সম্ভাবনা থাকলেও তারিখ নিশ্চিত জানাতে পারেনি প্রদর্শক সমিতি।