আমরা দর্শকদের ‘মিসজাজ’ করি: মাহমুদুল ইসলাম

আলাপের শুরুটা শেষ খবর দিয়েই হলো। নেটফ্লিক্সের ‘অরিজিনাল কন্টেন্ট’ হিসেবে ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ অচীরেই দেখা যাবে অন্যান্য ‘কন্টেন্টের’ পাশাপাশি। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ‘কমলা রকেট’ সিনেমাটিই আছে এই বিশ্ববাজারের প্লাটফর্মে।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2019, 04:54 AM
Updated : 10 Dec 2019, 04:54 AM

এভাবেই জানালেন মাহমুদুল ইসলাম। সবার কাছে পরিচিত মাহমুদ ভাই হিসেবে। ‘ইতি তোমারই ঢাকা’ যে এগারোটা গল্প নিয়ে একই মালায় গাঁথা- সেই এগারো মালী তথা পরিচালকের একজন। আর তার গল্পটির নাম ‘ঢাকা মেট্রো’।

গ্লিটজ’য়ের সঙ্গে আলাপে দর্শক- সিনেমা এবং নিজের কাজ নিয়ে আলাপ করলেন। জানালেন দর্শক কি চায়- আর নির্মাতারা কিভাবে সেই চাওয়ার চারপাশে ঘুরছেন- সেই গল্প!

শেষের গল্প শেষবেলার সূচনা করলেও শুরুটা জানতেই হয়। আর প্রসঙ্গ যখন ‘ইতি তোমারই ঢাকা’- সেই গল্পটা জানলেও মন্দ না। তাই শুরু হলো সেখান থেকেই!

শুরু হলো সেই গল্প – যে গল্পের শুরুর ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসার আবু শাহেদ ইমনের জল্পনা থেকে। ইমপ্রেসেরে কাছ থেকে পরিকল্পনা পাশ করিয়ে নির্মাতা খুঁজে খুঁজে এক টেবিলে বসানোর পরিকল্পনাও তার। নির্মাণ আর নির্মাতাদের সঙ্গে আলাপ শেষ করে এগারো জন ভিন্ন ভিন্ন মতের পরিচালককে একই টেবিলে বসানো চাট্টিখানি কথা না। সেই কঠিন কাজটা করে ফেলার পর ‘ইতি তোমারই ঢাকা’র ‘প্রিয়তমেষু’ পর্ব শুরু হলো- অর্থ্যাৎ শুভ সূচনা।

এই সূচনার পর যা হয়-, মাহমুদুল ইসলাম বেলেন, ‘ইমনের প্রথম পরিকল্পনা ছিল রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গল্পগুলো বাধার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবার ভাবনা আর চিন্তার স্টাইল বিবেচনা করে আমরা সবাই ঢাকার ভিন্ন রূপ নিয়ে গল্প বানানোর পরিকল্পনা করি।”

এর পরের গল্প সায়াহ্নের মতন রঙিন কিন্তু চমকপ্রদও বটে। নিজেদের সিনেমার গল্প যেমন নিজেরা তৈরি করেছেন, এই নির্মাতারা সেই গল্প নিয়ে দিনের পর দিন একই টেবিলে বসে আলোচনা- সমালোচনার ঝড়ও তুলেছেন।

 

মাহমুদ জানান, ‘এমনও হয়েছে- যে গল্পটা এখন রূপালী পর্দায়- সেটা প্রথমে এরকম হয়তো ছিলই না। সবাই বেশ উৎসাহের সঙ্গে একে অপরের চিত্রনাট্য এবং গল্পকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়- দুটোই দিয়েছেন। একেবার তৈরি গল্পটাও এই টেবিলে এসে বদলে গেছে বলে জানান মাহমুদ।

ছবিটি মুক্তি পায় নভেম্বরে। সকল দর্শকের জন্য। দর্শকরা কিভাবে সিনেমাটিকে নিচ্ছে- সেই প্রশ্নে সোজাসাপ্টা উত্তর দেন মাহমুদ।

বলেন, ‘সিনেমার সাড়া আমি নিজের চোখে গিয়ে দেখেছি। ছোটখাটো বিষয়ে – সংলাপে, শিল্পীদের অভিনয়ে দর্শকরা হেসে উঠেছে- তালি দিয়েছে, সিনেমার সঙ্গে থেকেছে। আমরা আসলে দর্শকদের মিসজাজ করি। বা মূল্যায়ন করতে ভুল করি। আমি নিজে সরেজমিনে দেখেছি আন্তর্জাতিক দর্শক এবং আমাদের দেশি দর্শকরা একই সঙ্গে একই ভাবে একই দৃশ্যে একই রকমের রিঅ্যাকশন দেয়। তাহলে তারা সিনেমা বোঝে না- এটা তো বলা রীতিমত অন্যায়।”

তাই সিনেমা কেমন বা দর্শক কিভাবে নেবে- এটা নিয়ে আগেই এতো না ভেবে সিনেমাটিকে কিভাবে হলে আনা ও দির্ঘ সময় রাখা যায়- এটার দিকে গুরুত্ব দেওয়া বেশি দরকার বলে মনে করেন এই পরিচালক।

আর হলের ছবি মানেই দর্শকদের ছবি- উৎসবের জন্যই শুধু না।

কিন্তু এই সিনেমার গল্পে ঢাকার শুধু হতাশার চিত্রই ফুটে উঠছে কিনা- সেই প্রসঙ্গে ঢাকার ঐ রূপটা নিয়ে নিজের অবস্থান জানান পরিচালক। বলেন, ‘জীবন মানেই শুধু আনন্দ বা নটে গাছটি মুড়ালো-ধরনের না। এর বাইরেও জীবনের খূঁটিনাটি বিষয় আছে। প্রেমিকার হতাশা, ঢাকার মাঝেও লুকিয়ে থাকা কোনও একটি সামাজিক বন্ধ্যাত্ব বা কোনও তরুণের হাসির পেছনে কষ্ট আর চাপা দির্ঘশ্বাস। মিথ্যে আশার শহর হিসেবে ঢাকাকে দেখানো হয়নি এই সিনেমায়। এটাই ইতি তোমারই ঢাকার গল্প। ’

‘ইতি তোমরই ঢাকা’ সিনেমার ‘ঢাকা মেট্রো’ গল্পটি মাহমুদের নিজের। যেটিতে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব দিনার, শতাব্দী ওয়াদুদ এবং অন্যান্য। এটার পাশাপাশি এই আয়োজনেরই দুটি গল্প নিজের মাথায় কেন আসেনি সেটা নিয়ে নিজের সঙ্গেই ঝগড়া করেছেন মাহমুদ। তার একটি কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ‘জিন্নাহ ইজ ডেড’ এবং অন্যটি হলো তানভীর হাসানের ‘আকাশের পোষা পাখি’।

‘এই দুটি গল্প দেখে মনে হয়েছে আমিও এমন ভাবে গল্পটা ভাবতে পারতাম’- মাহমুদুল ইসলাম।

এরপরের গল্পটি ঘুরে গেল চলচ্চিত্রের অন্যদিকে। এই সিনেমার সংশ্লিষ্ট সবাই এগারোটি গল্প নিয়ে মালা গাঁথার মতন সিনেমাটিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন শুধু এটাই দেখতে – এর সাড়া কেমন পরে! আর আদৌ এই গল্প কেউ নেয় কিনা তা বোঝার জন্য।

মাহমুদ বলেন, ‘“বাংলাদেশের মানুষ হলো পৃথিবীর অন্যতম সেরা অডিয়েন্স কারণ এতো বৈচিত্র আর কোথায় পাওয়া যাবে এতো ছোট সীমানার মাঝে! তাদের মতামত জানা খুবই জরুরি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে। আর সবার জন্য কিছু না কিছু থাকা অবশ্যই দরকার। কারণ তারা পয়সা খরচ করে সিনেমা দেখতে আসে। তারা পয়সা উশুল করতে আসে। তাদের দিকটা বিবেচনা না করা রীতিমত অন্যায়।”

ব্যবসাকেন্দ্রিক ছবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসকল কন্টেন্ট মুক্ত বাজারে প্রদর্শিত হবে – সেগুলো সবই কমার্শিয়াল। এখানে নন কমার্শিয়াল বলে কিছু নেই। বিশেষ করে সিনেমার ক্ষেত্রে লগ্নিটাই তো বিশাল। কি করে তা ব্যবসার চিন্তা ছাড়া বানানো হতে পারে?”

“আর অডিয়েন্স দেখে মজা পায়- ইন্টারেক্ট করলেই সেটা কমার্শিয়াল ছবি”- যোগ করেন মাহমুদ।

২০০৫ সালের ছবিয়াল উৎসব থেকে এককভাবে কাজ করতে শুরু করা মাহমুদুল হক সিনেমা এবং দর্শক নিয়ে যেমন স্বচ্ছ ধারনা পোষণ করেন- তেমনই নিজের কাজ নিয়েও পরিকল্পনা তার ছকে কাটা।

নগদের বিজ্ঞাপনের সিরিজ করে বিজ্ঞপান নির্মানেও নড়েচড়ে বসেছেন এখন তিনি। আর নাটক বানানোর বাজেট এবং আয়োজন নিয়েও তার একটু দোনোমনা আছে বলে একটু অপেক্ষা করছেন তিনি।

বলেন, ‘কোনও পরিবর্তনের সময় স্রোত বোঝার জন্য একটু অপেক্ষা করা দরকার। যেমন ওয়েব সিরিজের স্রোতটা। যেমন খুশি তেমন কাজ না করে একটু অপেক্ষা করে ভালো কাজ করা দরকার।’

কিন্তু ভালো কাজে তো আরও ভালো নির্মাতাও দরকার। সেই জায়গায় কি করছেন এই প্রজন্মের নির্মাতারা? প্রশ্ন-তীরটা ‘ভাই ব্রাদার’ দলের দিকেই।

এর উত্তরটা দিয়েই শেষ করলেন মাহমুদুল ইসলাম।

মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সান্নিধ্যে থাকা মাহমুদুল ইসলাম এবং তার “ভাই ব্রাদার” দল এখন নিজেদের পাশাপাশি অন্যান্য তরুণদের সঙ্গে নিয়েও কাজ করছেন। এই পরম্পরাকে ধরে রাখার জন্য অবশ্যই। এতে উৎসাহ পেলে অবশ্যই গল্পের কখনো ‘ইতি’ হবে না।

‘পুনশ্চঃ’দিয়ে চলতে থাকবে বাংলাদেশের নানা রঙের গল্প।