রবিউল হুসাইনকে নিয়ে স্মারকগ্রন্থ আসছে

একুশে পদকজয়ী কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছেন, কবিতার পাশাপাশি স্থপতি হিসেবেও স্বাক্ষর রেখে গেছেন তিনি। তাকে ভালোভাবে পড়তে বিশেষত্বগুলো তুলে ধরা সবার কর্তব্য। শিগগিরই কবির রচনা নিয়ে স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 05:47 PM
Updated : 4 Dec 2019, 05:47 PM

বাংলা একাডেমির রবীন্দ্রচত্বরে বুধবার বিকেল ৪টায় রবিউল হুসাইনের স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

২৬ নভেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‍মৃত্যু হয় বাংলা একাডেমির ফেলো, কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের।

আনিসুজ্জামান বলেন, “ব্যক্তিজীবনে রবিউল মৃদু স্বভাবের ছিলেন, মৃদু হাসি হাসতেন। সজোরে কথা বলতেন না। আমার বিশ্বাস, রবিউল হুসাইনের কবিতা ভালোভাবে পঠিত বা আলোচিত হলে তার বিশেষত্বগুলো সবার কাছে তুলে ধরা সম্ভব হবে। সেটা আমাদের কর্তব্য। রবিউল স্থপতি হিসেবেও তার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। সেটাও সকলকে জানাতে হবে।”

“আমি আশা করি তার রচনা সংকলন, স্মারকগ্রন্থ অচিরে প্রকাশ করা সম্ভবপর হবে। আমি রবিউল হুসাইনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।”

সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। স্মৃতিচারণ ও আলোচনায় অংশ নেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি ফারুক মাহমুদ, কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু, কবি আসলাম সানী, কবি আমিনুর রহমান, রবিউল হুসাইন-এর অনুজ তাইমুর হুসাইন, নিকটাত্মীয় খন্দকার রাশিদুল হক নবা প্রমুখ। প্রয়াত কবির স্মরণে নিবেদিত কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি তারিক সুজাত, কবি খোরশেদ বাহার। 

স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত কবির পুত্র জিসান হুসাইন রবিন, কবি সানাউল হক খান, ড. ইসরাইল খান, কবি নাহার ফরিদ খান, কবি লিলি হক প্রমুখ।

সভার শুরুতে রবিউল হুসাইনের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “কবি-স্থপতি রবিউল হুসাইনের প্রয়াণের পর সঙ্গতভাবেই বাংলা একাডেমি থেকে তার রচনাবলি প্রকাশের দাবি উঠেছে। এ দাবির সঙ্গে আমরাও একমত।

“তবে একই সঙ্গে মনে করি যে কোনো কবি বা লেখকের নিবিষ্ট পাঠই তাকে তার প্রয়াণের পরও উত্তরপ্রজন্মের কাছে বাঁচিয়ে রাখে। আমরা বহুমাত্রিক রবিউল হুসাইনের রচনার নিরন্তর পাঠ প্রত্যাশা করি এবং এই সদাহাস্যময়, সজ্জন, সুপ্রিয় স্বজনের আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।” 

স্মরণসভায় রবিউল হুসাইনের লেখা মা কবিতা পাঠ করেন সায়েরা হাবীব। সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা পিয়াস মজিদ।

ঝিনাইদহের শৈলকূপার সন্তান রবিউল হুসাইনের জন্ম ১৯৪৩ সালে। কুষ্টিয়ায় মেট্রিক আর ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে তিনি ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজির (বর্তমান বুয়েট) আর্কিটেকচার ফ্যাকাল্টিতে।

ষাটের দশকে ছাত্র থাকাকালেই তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস মিলিয়ে দুই ডজনের বেশি বই রয়েছে তার।

স্থপতি রবিউলের ঝোঁক ছিল ইটের কাজের দিকে। তার নকশায় বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) ভবনটি ছিল তার প্রিয় একটি কাজ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তি ও স্বাধীনতা তোরণ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট, ভাসানী হল, বঙ্গবন্ধু হল, শেখ হাসিনা হল, খালেদা জিয়া হল, ওয়াজেদ মিয়া সায়েন্স কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম ও একাডেমিক ভবন কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে রবিউল হুসাইনের নকশায়।

বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য রবিউল শিশু কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কচি কাচার মেলা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটেও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। 

একুশে পদক ছাড়াও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কবিতালাপ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ও সার্চ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই কবি।