অন্যরকম মোস্তাফিজ শাহীন

মোস্তাফিজ শাহীন। থিয়েটার জগতের পরিচিত নাম। ২০০২ সাল থেকে সংযুক্ত আছেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়েরর সঙ্গে। থিয়েটার থেকে নানা জনে নানা রকম ব্যস্ততায় নিজেকে সরিয়ে রাখলেও মোস্তাফিজ শাহীন নিজেকে তার লক্ষ্য থেকে একবিন্দুও সরিয়ে আনেননি।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2019, 05:25 AM
Updated : 24 Nov 2019, 12:35 PM

২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালায় ‘নতুনের উৎসব ২০১৯’ শিরোনামে আয়োজিত এক নাট্যোৎসবে মোস্তাফিজ শাহীন আসছেন অভিনেতা হয়ে তো বটেই- এবার তার নির্দেশনাতেও থাকছে নতুন একটি সংযোজন।

থাকছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তার নির্দেশনায় নাটক- ‘লটারি’।

একই উৎসবে তিনি অভিনয় করছেন, মঞ্চ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন আবার নির্দেশনাও দিচ্ছেন। গ্লিটজের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি জানান তার নতুন নাটক না দেখা ভুবনের মাঝে আলো ছড়ানোর গল্প এবং কিছু ছাড়া ছাড়া রঙিন সুতোয় বাঁধা স্বপ্নের আভাস।

গল্পটা শুরু হলো ‘না দেখা ভুবনের গল্প’ দিয়েই।

এ কেমন গল্প? বললে ভালো হবে- এ তাদের গল্প যাদের চোখে পৃথিবীর আলো নেই। বা প্রতিবিম্বটা অস্পষ্ট। মোস্তাফিজ শাহীন তার নির্দেশনায় মঞ্চে আনছেন নতুন একটি নাটক ‘লটারি’ যেখানে অভিনয় করেছেন একদল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের মনে নেই কোনও প্রতিবন্ধকতা।

অভিনেতা-নির্দেশক মোস্তফিজ শাহীন

গল্পের শুরুটা সারা যাকেরের মাধ্যমে। নাট্য ব্যক্তিত্ব এবং নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সদস্য সারা যাকের একদিন মোস্তাফিজ শাহীনকে ডেকে বলেন, সমাজের বিশেষ মানুষগুলোকে নিয়ে একটা নাটক বানানোর কথা। নাটকের মানুষ মোস্তাফিজ শাহীন তখন থেকেই গবেষণা করা শুরু করেন। এশিয়াটিকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘মঙ্গল দীপ’য়ের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এরা মূলত সেবামূলক কাজ করে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ‘প্রেরণা’ নামের একটি সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়ে- যারা মূলত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়েই বিভিন্ন রকমের কাজ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ডালিয়া নওশীন সরাসরি সংযুক্ত। তিনি আবার সারা যাকেরের স্কুলের বন্ধুও বটে।

ডালিয়া নওশীনের অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দিয়ে সৃজনশীল কিছু করানোর। অবশেষে দুই বান্ধবী মিলে যার হাতে দ্বায়িত্ব দিলেন- তিনি হলেন মোস্তাফিজ শাহীন।

কোমর বেঁধে লেগে পরলেন। নির্দেশনা তো দিতেই পারেন। কিন্তু মঞ্চ মানেই ঘুরে ঘুরে অভিনয়- ‘লাইভ পারফরমেন্স’য়ের ব্যাপার, ব্যাপারটা সহজ ছিল না মোটেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘এক্সপার্ট’ আনার কথা ভাবলেও হালটা ধরতে হয় শেষ অবধি শাহীনকেই।

ব্যাস শুরু হয়ে গেল তাদের ওয়ার্কশপ এবং রিহার্সেল।

এই নাটকে যারা কাজ করেছেন, তাদের একজনের মাধ্যমেই অন্যজনকে পাওয়া- বলে জানান তরুণ এই নির্দেশক এবং অভিনেতা। কারণ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদেরও বিশাল ‘নেটওয়ার্ক’ আছে। সেই নেটওয়ার্ক দিয়ে অসংখ্য অভিনয় শিল্পী এবং আগ্রহীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত মূল দলটিকে নির্বাচন করেন তিনি।

অভিনেতা-নির্দেশক মোস্তফিজ শাহীন

‘লটারি’ নাটকটিতে চারজন আংশিক ভাবে দেখেন। এবং বাকীরা কিছুই দেখতে পান না। সেক্ষেত্রে মঞ্চ ডিজাইনের সময় ব্লক তৈরি করে স্পট মুখস্ত এবং আত্মস্থ করান সবাইকে দিয়ে এই পরিচালক। বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না তার বা কারও জন্যেই। টেকনিকাল শো হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটু হলেও ‘নার্ভাস’ মোস্তাফিজ শাহীন। কারণ নাটক দেখলে মনে হয় এই শিল্পীরা দেখতে পাচ্ছে – আসলে পাচ্ছে না।

শাহীন জানান- ‘নাটকটি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের উৎসবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একেবারে শো স্টপার হিসেবেই যাচ্ছে! শেষ দিন তথা ডিসেম্বরের ৫ তারিখে। অবশ্যই এত তরুণ নাটকের ভীড়ে নিজের অন্যরকম এই নাটক বিশেষ আয়োজনে যাচ্ছে বলে ভীষণ আনন্দিত।’

তিনি আরও বলেন, টেকনিকাল শো দেখে সবাই প্রশংসাই করেছেন। এখন উৎসবের রাতের অপেক্ষায় আছেন এ প্রজন্মের মেধাবী মঞ্চশিল্পী হিসেবে প্রবীন শিল্পীদের কাছে পরিচিত মোস্তাফিজ শাহীন।

মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি তিনি ব্যস্ত ওয়েব সিরিজ, টিভি নাটক নিয়েও।

প্রসঙ্গত, নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সাতজন তরুণ নির্দেশক মঞ্চে নিয়ে আসছে সাতটি নতুন মঞ্চনাটক। এই নাটকগুলো নিয়ে আগামী ২৯ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালায় ‘নতুনের উৎসব ২০১৯’ শিরোনামে এক নাট্যোৎসব আয়োজন করা হবে।

‘নতুনের উৎসব’ এর আহ্বায়ক সারা যাকের বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নতুন প্রজন্মের সাতজন নাট্যনির্দেশক সাতটি নতুন মঞ্চনাটক নির্দেশনা দিচ্ছেন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের থিয়েটার চর্চায় মেধা ও নান্দনিকতার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’