বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা বাউল প্রতিভা অন্বেষণের যে কার্যক্রম, সেই ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র ২০১৬ আসরের দুই শিল্পী শফিকুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান রাব্বি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শুক্রবারের আসর।
ময়মনসিংহের সন্তান শফিকুল ইসলাম শুরু করেন ‘বাউল সম্রাট’ শাহ আবদুল করিমের ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’টি দিয়ে।
কুদ্দুস বয়াতির ‘কী সুন্দর এক গানের পাখি’ দিয়ে পরিবেশনা শেষ করেন শফিকুল।
২০১৬ সালে ‘ম্যাজিক বাউলিয়ানা’র আসরে নজর কাড়েন কামরুজ্জামান রাব্বি। তিনি শুরু করেন শচীন দেব বর্মণের ‘তাকডুম তাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ গানটি দিয়ে। ততক্ষণে দর্শক গ্যালারিতে শ্রোতা সমাগম বাড়ছে।
বাউল রাব্বির গানে ততক্ষণে মজেছে দর্শক। তারা কখনও সমস্বরে গাইলেন, কখনও দল বেঁধে নাচলেন গানের তালে।
এরপর রাব্বি শোনান হালের জনপ্রিয় ফোক গান, মাহবুব শাহের লেখা ‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকো’।
শাহ আবদুল করিমের ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ গানটি রাব্বি শুরু করতেই দর্শকরা তাতে গলা মেলান।
গুরু ও কবি মাতাল আব্দুল রাজ্জাকের ‘দিন ফুরাইলে ভেঙ্গে যাবে এই রঙের মেলা’ গানটি দিয়ে শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি শোনান জনপ্রিয় ফোক গান ‘পিরিতির বাজার ভালো না’ ও ‘যত দুঃখ দিলি বন্ধু রে’।
কাজল দেওয়ানের পরে মঞ্চে আসেন মালিয়ান লোকসংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি হাবিব কইটে আর দল হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রথম অ্যালবাম ‘মুসো কো’র পর মালিয়ান সঙ্গীতে বিশ্ব মাতিয়ে চলেছেন হাবিব কইটে। ১৯৯৪ সাল থেকে ব্যান্ড বামাদাকে নিয়ে তিনি পারফর্ম করেছেন বিশ্বের সব বড় মঞ্চে।
ঢাকায় এসে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ এর বাংলাটি শিখেছিলেন। দর্শকদের উদ্দেশে ‘ধন্য ধন্য’ বলে খানিক চেষ্টা করেও পারলেন না পুরোটা বলতে।
আফ্রিকান ডিজাম্বে, হ্যান্ড ড্রামসের সঙ্গে বেইজ ও গিটারে আফ্রিকার লোকজ সুরের সঙ্গে সমকালীন সঙ্গীতের মেলবন্ধন করলেন আফ্রিকান দল হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা। আফ্রো-পপের ধারাটির সঙ্গে তিনি ফিউশন করলেন ব্লুজ আর ফ্ল্যামেঙ্গো। একে একে চারটি গান পরিবেশন করেন তারা।
দুই ভাই-বোন প্রথমে গেয়ে শোনান ওস্তাদ ফাহিম মাজহারেরর সঙ্গীতায়োজনের ‘সোবহানআল্লাহ ইশক দা জালওয়া’। ভৈরবী ঠাঁটে এই হামদের পরে তারা শোনান নাত ‘ইয়া রাসূল ইয়া রাসূল’।
তবে পাকিস্তানি গায়িকা অন্যদের মতো ঢাকার দর্শকপ্রিয়তা পাননি। তিনি যখন মঞ্চে উঠেছিলেন তখন স্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারি শূন্য হতে শুরু করে। তৃতীয় গানটি যখন গাইছেন, তখন উৎসব প্রাঙ্গণ ছিল অনেকটা ফাঁকা। মঞ্চের সামনে ভিআইপি গ্যালারিও ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল ততক্ষণে।
এরপর তারা পরিবেশন করেন হামদ ‘আল্লাহ হু’, হযরত বাবা বুল্লে শাহ’র গজল ‘চারদে সুরজ ভালদে ভেখে’। শাহবাজ কালান্দারের সুফি গান ‘দামা দাম মাস্তা কালান্দার’ গেয়ে পরিবেশনা শেষ করেন তারা।
ফোক ফেস্টের সমাপনী দিনে মঞ্চ মাতাবেন বাংলাদেশের কাজল দেওয়ান, চন্দনা মজুমদার, পাকিস্তানের জুনুন এবং রাশিয়ার সাত্তুমা।