সুরের মূর্ছনায় লোকসংগীতের আসর শুরু

সিলেটের ধামাইল গানের তালে নুপুরের নিক্কণে নৃত্যের ছন্দে; আর বাউল শিল্পী শাহ আলম সরকার, জর্জিয়ার গানের দল ‘শেভেনেবুরেবি’ ও দালের মেহেন্দির সুরের মূর্ছনায় শুরু হল প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের জীবনের কথা, আবেগ ও সুখ-দুঃখে মোড়ানো লোক গানের উৎসব।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 06:43 PM
Updated : 14 Nov 2019, 06:46 PM

বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’র উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ সংগীত পরিবেশন করছেন জর্জিয়ার গানের দল শেভেনেবুরেবির সদস্যরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ফোক গান আমাদের হৃদয়ের কথা বলে, জীবনের কথা বলে। মানুষের অব্যক্ত কথাগুলো এই গানের মাধ্যমে তুলে ধরে। লোকগানের আবেদন কখনও শেষ হবে না। আমাদের দেশে অনেক কালজয়ী ফোকগান আছে। অনেক কালজয়ী শিল্পী আছেন, যাদের গান মানুষকে কাঁদায়।

“যারা সংগীত চর্চা করে, সংস্কতি চর্চা করেন তারা কিন্তু পরিশীলিত হন। মাদকের ছোবল, জঙ্গিবাদের কালো থাবা থেকে রক্ষা করতে সংগীত চর্চা, সংস্কৃতি বড় হাতিয়ার হতে পারে।”

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ সংগীত পরিবেশন করছেন জর্জিয়ার গানের দল শেভেনেবুরেবির সদস্যরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

লোকগানের এ আয়োজন ঢাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাছান মাহমুদ।

উদ্বোধনী আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের শিল্পীদের পরিবেশন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

অনুষ্ঠানে প্রয়াত ছয় খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী, বারী সিদ্দিকী, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, ফকির আব্দুর রব শাহ ও আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়।

এর আগে মঞ্চের পর্দা উঠে সন্ধ্যা সোয়া ৭টায়; সিলেট অঞ্চলের ধামাইল গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা এবং তার নৃত্যদল ‘ভাবনা’র শিল্পীরা।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের শিল্পীদের পরিবেশন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

শুরুতেই রাধারমনের ‘আমি রবো না রবো না গৃহে, বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে দলটি। ধামাইল, লাঠিখেলা এবং পুতুল নাচের আঙ্গিকে সমকালীন নাচ পরিবেশন করে তারা।

এরপর মঞ্চে উঠে জর্জিয়ার লোক গানের দল ‘শেভেনেবুরেবি’। দলের সদস্যরা উপস্থিত দর্শকদের ভাঙা ভাঙা বাংলায় শুভেচ্ছা জানান। “আমরা তোমাদের ভালোবাসি’ বললে আর্মি স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শক হাত নেড়ে তাদের স্বাগত জানান। এরপর জর্জিয়ার তিনটি লোকগান পরিবেশন করেন এই শিল্পীরা।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের শিল্পীদের পরিবেশন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

এক ঘণ্টারও বেশি সময় লোকযন্ত্র বাজিয়ে ভিন্নধর্মী সংগীতায়োজন করে ঢাকার দর্শকদের সুরের মায়াজালে ভাসায় জর্জিয়ার এ গানের দল।

মাঝে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পৌনে ৯টায় মঞ্চে উঠেন বাউল শিল্পী শাহ আলম সরকার। একে একে পরিবেশন করেন ‘আমি যারে ভালোবাসি কাজলের চেয়েও কালো বেশি’, ‘ওরে বাজাইয়া তার মোহনবাঁশি’সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় লোকগান।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদলের শিল্পীদের পরিবেশন। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

এরপর প্রথম দিনের আয়োজনে সবশেষ শিল্পী হিসেবে মঞ্চে আসেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী দালের মেহেন্দি। পরিবেশন করেন ‘হো যায়েগা বললে বললে’, ‘দমাদম মাস্ত ক্যালান্দার’, ‘ওয়ে হয়ে কি কুদিয়া শের দিয়া’র মতো জনপ্রিয় গান।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের মালেক কাওয়াল, ফকির শাহাবুদ্দিন, ম্যাজিক বাউলিয়ানার কামরুজ্জামান রাব্বি ও শফিকুল ইসলাম। দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ পাকিস্তানের হিনা নাসরুল্লাহ ও মালির হাবিব কইটে অ্যান্ড বামাদা।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবে’ সংগীত পরিবেশন করছেন জর্জিয়ার গানের দল শেভেনেবুরেবির সদস্যরা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ১২টা পর্যন্ত। বাংলাদেশসহ ছয় দেশের দুই শতাধিক শিল্পী অংশ নিচ্ছে এবারের উৎসবে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট’। বিগত চার বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এ উৎসবের আয়োজন করেছে সান কমিউনিকেশন। বাংলাদেশসহ ছয় দেশের দুই শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী এ উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।