হুমায়ূন আহমেদের নিজেরই কমিক্স নিয়ে পরিকল্পনা ছিল: আহসান হাবীব

লেখার মাঝে ছবি বা ছবি দিয়ে লেখা – যে পরিবারের সবাই মোটামুটি এই বিষয়টায় পারদর্শী সেটি হুমায়ূন আহমেদের পরিবার।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2019, 11:46 AM
Updated : 14 Nov 2019, 12:57 PM

একবার এক সাক্ষাৎকারে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেছিলেন, “তারা সব ভাইবোনই বেশ ভালো আঁকিয়ে। এমন কী তার পরের প্রজন্মও।”

হুমায়ূন আহমেদ শব্দ নিয়ে খেলায় বেশি ব্যস্ত হয়ে যাওয়া পরে টুকটাক আঁকতেন বটে- কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল কোনো একদিন কমিক্স নিয়ে ফিরে আসবেনই ক্যানভাসের বুকে।

আর এই স্বপ্নের কথাটি গ্লিটজকে জানালেন ছোট ভাই, কমিক্স শিল্পী- কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে ব্যাঙ্গরসাত্মক পত্রিকার শিরোমণি এই শিল্পী কার্টুন এবং কমিক্স নিয়েই আছেন সারা জীবন। আর সঙ্গী ছিলেন তার অন্যান্য ভাই বোনদের “পাগলামির”।

উল্টা পাল্টা সৃজনশীলতার অপর নাম তো পাগলামিও বটে! তবে কালের স্রোতে এই পাগলামির নতুন কোনো পথ; যে পথে হাঁটার ইচ্ছা হুমায়ূন পরিবারের আগে থেকেই।

আলাপের শুরুতেই বোমা ফাটালেন, মুচকি হেসে বললেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের তো ইচ্ছে ছিলোই কমিক্স নিয়ে কাজ করার। পরিকল্পনাও করছিলেন..”

‘উন্মাদ’য়ের সম্পাদক আহসান হাবীব বললেন, “হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কিন্তু নিয়মিত কাজ করেছি। তার ‘সূর্যের দিন’ বইটির গ্রাফিক্সের কাজ আমি করেছি।”

শুধু যে গ্রাফিক্স – বিষয়টা সেখানেই আটকে নেই। হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্রগুলো যে চরিত্র এখন এক একটি বর্ণাতীত ছায়া। যেমন- শুভ্র, মিসির আলী বা হিমু- এই শব্দের চরিত্র নিয়ে কমিক্স করার পরিকল্পনাও গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

প্রথমেই এই পরিকল্পনাকে এক কথায় বললেন চমৎকার, তারপরে জানালেন, “আমি নিজে হয়তো এককভাবে ভাবিনি এই চরিত্র দিয়ে কমিক্স করার, কিন্তু যারা আমার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, যেমন মেহেদী হক এবং অন্যান্যরা- তারা কিন্তু ঠিকই এমনটা ভাবছে। কীভাবে কাজটাকে এগিয়ে নেওয়া যায়- সেটার পরিকল্পনাও করছে।”

কমিক্সের এমনিতেও খুব বেশি চরিত্র বাংলাদেশে প্রচলিত নেই। ওদিকে বিশ্বজুড়ে চলছে আহসান হাবীবের ভাষায় কমিক্সের ‘রেনেসাঁ’র যুগ, এমনকী বইও গ্রাফিক্স দিয়েই দৃশ্যত সামনে আসতে পারে বলে জানান।

বর্তমানে শিশু কিশোরদের জন্য এধরনের কমিক্স দারুণ একটি বিষয় হতে পারে বলে তিনি আশা করছেন। পাশাপাশি পাঠকে পরিণত করে হুমায়ূন আহমেদের কাছে একটু বিশ্রাম নেওয়ারও অবকাশ তৈরি হবে মনে করে আপনমনেই হাসলেন।

সদাই মুচকি হাসি ঠোঁটে নিয়ে চলা আহসান হাবীব তার ভাইকে যতটা না ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরলেন, তারথেকেও বেশি তুলে ধরলেন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে।

কারণটাও খুবই স্বাভাবিক। প্রয়াণের পরেও তার কাজ হয় সমাদৃত, তার গল্পের বইয়ের নাম নিয়ে হয় গান, বা অন্য কোনো কবিতা।

অথচ লেখক আরও একধাপ এগিয়ে অনেক আগেই কমিক্স করার কথা ভেবেছিলেন।

আহসান হাবীব জানান, “তার ‘বোতল ভূত’ নিয়ে অ্যানিমেইশন মুভি করার ইচ্ছা ছিল। সেটা নিয়ে কাজও শুরু করেছিলেন। আর আমিও ছিলাম সেই মিটিং-এ। এরপর তার চলে যাওয়ার কারণে কাজটি আর এগিয়ে যায়নি। কিন্তু, তার কাজ নিয়ে এমন কিছু একটুত হবেই। সেটা ‘বোতল ভূত’ নিয়েই হতে পারে।”

এমনই টুকরো টুকরো স্বপ্ন নিয়ে, পরিকল্পনা নিয়ে আজও আহসান হাবীব তার ভাইকে স্মরণ করেন, শুধু জন্মদিনে নয়, জন্মদিনের বাইরেও। প্রতিটা দিন। অসংখ্য কাজের ফাঁকে। অথবা একটু অবসরে। গৎবাঁধা নিয়মের মাঝে নুহাশপল্লীতে জন্মদিনের জন্য ছোট্ট আয়োজন তো হয়ই। এছাড়াও হঠাৎ হঠাৎ মনে পরে তখনকার কথা, যখন কমিক্স দিয়ে আন্তর্জাতিক একটি পুরস্কার অর্জন করেন আহসান হাবীব।

সেসময় নানা রকমের জটিলতায় সেই পুরস্কারের সম্মানি হাতে না পৌঁছালেও তার কাছে পৌঁছে ছিল আরেকটি উপহার, তা হলো ‘হুমায়ূন আহমেদ’য়ের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকা! সেটাও ছিল সেই অর্জনের জন্যই।

কমিক্সের প্রতি ভালোবাসা কোনো কালেও কম ছিল না বড়ভাইয়ের। তাই আহসান হাবীবও মনে করেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন বইকে বিভিন্ন রূপে সব পাঠকের জন্য মেলে ধরতে হবে। এটা যুগের চাহিদা, পাঠকের চাহিদাও বটে!

আলাপ শেষে একটু হেসে তিনি এভাবেই বললেন, “তার প্রমাণ তার না থাকার পরেও তার বই বেস্ট সেলার হওয়া..”