আমার সবচেয়ে বড় ‘ক্ষতি’ করেছেন হুমায়ূন আহমেদ: রিয়াজ

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যারা কাজ করেন- তারা না কি তার সঙ্গে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যান।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2019, 05:08 AM
Updated : 13 Nov 2019, 10:32 AM

এটা বেশ প্রচলিত- অন্তত তার সঙ্গে কাজ করা- অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর মানুষগুলো একথাই বলেন। অভিনেতা রিয়াজও আছেন হুমায়ূনগণ্ডীর বাসিন্দা হয়ে। হুমায়ূনের একাধিক ছবির নায়ক তিনি। গ্লিটজকে বললেন হুমায়ূনকে নিয়ে তার মেঘঢাকা মনের একটু রোদের উত্তাপমাখা কথা!

কাজের জগতে তখন তিনি তুঙ্গে। কাজ করছেন দুই হাতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে। তিনি রিয়াজ। এমন সময়েই ডাক পান হুমায়ূন আহমেদের সিনেমা ‘দুই দুয়ারী’র জন্য। গতানুগতিক কাজের ফাঁকে তিনি হয়ে গেলেন, ‘দুই দুয়ারী’র অন্যতম সদস্য।

রিয়াজ হেসে বললেন, “তখন তো ব্যস্ত সময়! তো আমি দুই দুয়ারীর কাজটা শুরু করি রাতের শিফটে। ঢাকায় কাজ করতাম সারাদিন। দশটায় শুরু করতাম ‘দুই দুয়ারী’র কাজ।”

সারা রাতের কাজের পর যখন ফিরতেন ঢাকায়, বহনকারী বাহনেই হত তার ঘুম! কিন্তু এতটুকু ক্লান্তি ছিল না সেই খাটুনিতে। কেন? কারণ ওই রাতের কাজেও পেয়েছিলেন দারুণ এক হাতছানি- অন্যরকম কিছু করার।

আর তাতেই নাকী যত অঘটন। রিয়াজ যেন তার সেই দিনে ফিরে গেলেন, আর জানালেন, “আমার জীবনের সবচেযে বড় ক্ষতিটা হুমায়ূন আহমেদই করেছেন।”

কারণটাও বললেন, “তার সঙ্গে ‘দুই দুয়ারী’ ছবিটা করা পর কমার্শিয়াল ছবি নিয়ে আমার যে চিন্তা ভাবনা সেটার আমূল পরিবর্তন ঘটে। আমি এরপরে কমার্শিয়াল ছবি বলতে যা বোঝায়- সেটার প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেললাম। বলুন এটা ক্ষতি কি না।”

‘মেজর ড্যামেজ’ বলে ফিক করে হাসলেন। জানালেন এরপর থেকে লেখকের প্রতি তার যে ভালোবাসা সেটা রীতিমত আকর্ষণে পরিণত হয়।

রিয়াজ বলেন, “এরপর আমি শুধু তার সঙ্গেই কাজ করতে চাইতাম। কোনো এক অদ্ভুত ভালোবাসার টানে নুহাশপল্লীতে ছুটে যেতাম। দিনরাত পড়ে থাকতাম।”

এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে অন্য ছবি যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তা নয়। রিয়াজ স্বীকার করেন, হুমায়ূন মোহ’র কারণে তার তখন চলমান ক্যারিয়ার হুমায়ূনের ভাষায় জোছনামুখীই হয়ে গিয়েছিল।

দুই দুয়ারীর পর জাতীয় পুরস্কার পেয়ে রিয়াজ যেন তার জীবনের সঠিক চাওয়াটা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই মজা করে হুমায়ূণ আহমেদকে ‘ক্ষতির কারণ’ বললেও রিয়াজ বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের অমর এই লেখক সত্যিকার অর্থে তাকে পথ চিনিয়েছেন। ভালো সিনেমা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।

হুমায়ূন আহমেদের প্রয়াণের পরেও তার জন্মদিনে যেভাবে দেশজুড়ে তাকে স্মরণ করা হয়- সেভাবেই তাকে স্মরণ করেন সহকর্মীরাও। তাই আজও রিয়াজ একটু হাসিতে একটু দীর্ঘশ্বাসে স্মরণ করে যাচ্ছেন প্রিয় লেখক, প্রিয় সিনেমাবাজ, প্রিয় মানুষ হুমায়ূন আহমেদকে।

কারণ যে ভালোবাসা তিনি ছড়িয়ে গেছেন, সেই ভালোবাসা কখনও কৃষ্ণপক্ষ দেখেনি। সেই ভালোবাসা চীর -জোছনাময়ী ভালোবাসা। রিয়াজ গ্লিটজের মাধ্যমে সেই ভালোবাসাই জানালেন; আরেকটি বার।