প্রবীর মিত্রের সত্যিকারের ‘বন্দি জীবন’

অস্টিওপরোসিসে (হাড়ক্ষয়) আক্রান্ত হয়ে চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে কয়েক বছর ধরে চার দেয়ালে বন্দিদশায় দিন কাটছে ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা পাওয়া বর্ষীয়ান অভিনয়শিল্পী প্রবীর মিত্রের।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 10:55 AM
Updated : 12 Nov 2019, 11:58 AM

মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ অভিনয়শিল্পী বলেন, “শেষ কবে ঘর থেকে বের হয়েছি মনে করতে পারছি না। আমি এখন আর একা চলাফেরা করতে পারি না। ঘরের মধ্যেই লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয় আমাকে।”

একাধিকবার অস্ত্রোপচার করেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় আর অস্ত্রোপচারের আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানালেন তিনি।

সেগুনবাগিচার বাসায় ছেলে ও ছেলের স্ত্রী তার দেখভাল করছেন। মাঝেমধ্যে সহকর্মীদের কেউ কেউ তার খোঁজখবর নেওয়ার ‘চেষ্টা’ করেন।

“সহশিল্পীরা খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করলেও নানা ব্যস্ততায় আসতে পারে না। সবাই তো ব্যস্ত। সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপার আছে। আমি কোনো অভিযোগ করি না। যাদের সময় হয় না বলে আসতে পারে না।”

স্কুলজীবনে প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে প্রহরীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়েছে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়।

প্রায় চার দশকের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিতাস একটি নদীর নাম, দুই পয়সার আলতা, বড় ভালো লোক ছিল, বেদের মেয়ে জোসনাসহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। সবশেষ এসডি রুবেলের পরিচালনায় ‘বৃদ্ধাশ্রম’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি; তবে ছবিটি এখনও মুক্তি পায়নি।

ছবি: আরিফ আহমেদ

বয়সের ভারে ন্যুব্জ এ অভিনয় শিল্পী আর কখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াবেন না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

চলচ্চিত্র ছেড়ে দিলেও চলচ্চিত্র এখনও তাকে ছাড়েনি; এখনও অখণ্ড অবসরে এফডিসির সেই সোনালী দিনের স্মৃতি রোমন্থন করেন তিনি।

“সারাক্ষণ ওই মুখগুলি মনে পড়ে; যাদের সঙ্গে এত বছর কাটিয়েছি, শুটিং করেছি। কো-আর্টিস্ট, ডিরেক্টরদের কথা সবসময়ই মনে পড়ে।”

অভিনয়ের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ১৯৮২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মোহাম্মদ মহিউদ্দিন পরিচালিত 'বড় ভালো লোক ছিলো' চলচ্চিত্রে অভিনয়ে জন্য পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান প্রবীর মিত্র।

এরপর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়ে ৭৮ বছর বয়সে এসে ২০১৮ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাকে।

পুরস্কার পাওয়ায় প্রতিক্রিয়ায় বললেন, “অনেক দেরিতে হলেও পেয়ে ভালোই লাগছে। এটা বেশ দেরি হয়ে গেল। তারপরও কোনো আক্ষেপ কিংবা কোনো দুঃখ নেই। আমার দর্শকরা খুশি হয়েছে। এটাই বড় কথা।“

১৯৪০ সালে চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া প্রবীর মিত্রের শৈশব কেটেছে পুরান ঢাকায়। পড়াশোনা করেন সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল ও জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)। তার তিন ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রী অজন্তা মিত্রকে ২০০০ সালে হারানোর পর ২০১২ সালে তার ছোট ছেলে আকাশও পরপারে পাড়ি জমান।

প্রবীর মিত্রের বাবা গোপেন্দ্র নারায়ণ মিত্র ও মা অমিয় বালা মিত্র। তার দুই বোন, সরস্বতী বসু ও রমা সরকার; ভাই সুবীর কুমার মিত্র।