আমিও ভালো ইংরেজি পারতাম না: সুস্মিতা সেন

“এই, মাইকটা কোথায় রে”- প্রতিযোগীকে প্রশ্ন করার আগেই ঠিক এভাবে বাংলায় বলে উঠলেন সুস্মিতা সেন। সাবেক মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেন, ভারতের নানা রকমের সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে যার নাম জড়িয়ে আছে। দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন বলিউডেও। বাঙালি বলেই হয়তো- এভাবেই শুরু করেন প্রশ্নোত্তর পর্ব।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2019, 05:26 PM
Updated : 25 Oct 2019, 04:40 PM

তবে এটাকে প্রশ্নোত্তর পর্ব না বলে বেশ হয়. ‘অনুপ্রেরণার গল্প’ বললে। কারণ তিনি যেভাবে স্নেহের সঙ্গে কথা বলছিলেন, বোঝাই গেছে তিনি আসলেই এমন মানুষে পরিণত হয়েছেন যার অন্তরে শুধু স্নেহ আর ভালোবাসা।

শুরুতেই তিনি বাংলায় কথা বলে স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসেন হলজুড়ে। বলেন, “যখন মাত্র আঠারো বছর বয়সে যখন আমি মিস ইউনিভার্সের মঞ্চে যাই, একটু হলেও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সেই বয়সে অত বড় মঞ্চ! মা জানতে চাইলো, কথা বলতে ভয় পাবো কি না। আমি তো হেসে উড়িয়ে দিলাম! বললাম, হিন্দিতে কথা বলে নেব! তখন আমার মা বলেন- না গো, তুমি তোমার ভাষায় কথা বলবে, বাংলা ভাষায়..”

বাংলার ব্যাপারে বরাবরই সুস্মিতার অনুরাগ আছে। তা বোঝা যাচ্ছিল তার বিভিন্ন রকমের কথায়, সংযোগে। যেমন বিজয়ী শিলাকে প্রশ্নোত্তর পর্বে খাঁটি বাংলায় বলেই ফেললেন, “তোমার বাংলা কথা কিন্তু খুব সুন্দর। দারুণ করে কথা বলো।”

শিলাও উত্তর দেন বাংলাতে।

ধীরে ধীরে সেরা পাঁচ তরুণী, যারা মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার শেষ মুহূর্ত অবধি ছিলেন,তারা তার বন্ধু হয়ে উঠলেন।

এর মাঝে জেসিয়া বলেই উঠলেন, “আমাকে করা প্রশ্নটা কী ছিল!” সুস্মিতা হেসে উত্তর দেন- “আমিতো উত্তর পেয়ে গেছি।” কারণ প্রশ্নটি ছিল প্রেম নিয়ে! আর প্রেমিক হাতছাড়া করা নিয়ে। জেসিয়া যেই বলেন, “না, প্রেমিক হাতছাড়া করবো না”.. হেসে সেটাকে উত্তর হিসেবে নিয়ে নেন তিনি।

আরেকজনকে কঠিন প্রশ্ন করেন তিনি! তা ছিল, “বলো তো, ডিম, আগে না মুরগি আগে?”

বাংলাদেশের ভাষা বাংলা বলেই হয়তো, বিদেশী ভাষার ব্যবহারেও তিনি ছিলেন সতর্ক। এবং বারবার বললেন একই কথা।

সুস্মিতা বলেন, “বিদেশী মঞ্চে কথা বলার জন্য বিদেশী ভাষা জানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। জানলে ভালো। না জানলে তাদের জন্য দোভাষীরও ব্যবস্থা থাকে। তাই কোনো আরোপিত চর্চার প্রয়োজন নেই।”

সুস্মিতা এক পর্যায়ে লম্বা হাসি টেনে বলেন,  ‍“মুখের ভাষা না জানলেও চলবে, আত্মার যোগাযোগ না থাকলে চলবে না।”

 

সাবেক মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা জোর দেন কাজের ব্যাপারে। যেহেতু এবার প্রতিযোগিতায় সামাজিক দ্বায়িত্ববোধ ও পালনেরও বিষয় আছে, তাই তিনি জোর দেন ওই দিকে ধীরে সুস্থে ভেবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। আর বলেন, “এজন্য চাই সময়।”

এ প্রসঙ্গেই সুস্মিতা মঞ্চে থাকা সকল তরুণীর বন্ধুর মতো বললেন, “সবাই আশা করবে যে আজ থেকেই তুমি বিশ্বকে পরিবর্তন করবে। সবার আশা পূরণ করা তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি নিজের স্বপ্ন পূরণ করো। তাতেই কারও না কারও আশা পূরণ হয়ে যাবে।”

এই প্রশ্নোত্তরের পরই ঘোষণা করা হয় বিজয়ীর নাম। আর বাংলাদেশ পেয়ে যায় প্রথম ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ ‘সৈনিক কন্যা’ শিলাকে।

উল্লেখ্য, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ, গত ৬৭ বছর ধরে চলা বিশ্বের বৃহত্তম বিউটি পেজেন্ট প্রতিযোগিতা মিস ইউনিভার্স–এর ফ্র্যাঞ্চাইজি। প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে’তে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বলিউড অভিনেত্রী ও মিস ইউনিভার্স-১৯৯৪ খেতাব জয়ী সুস্মিতা সেন; কানিজ আলমাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পার্সোনা; তুতলী রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ হেরিটেইজ ক্রাফট; গায়ক ও অভিনেতা তাহসান খান; রুবাবা দৌলা, পালস হেলথ কেয়ার, প্রতিষ্ঠাতা; ফারজানাহ চৌধুরী, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ব্যবস্থাপনা পরিচালক; রফিকুল ইসলাম, ফ্লোরা ব্যাংক লিমিটেড, ব্যবস্থাপনা পরিচালক; ডা. জারীন দেলাওয়ার হুসেন, আতাহার আলী খান, প্রাক্তন ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার, অভিনেতা ফারুক এবং প্রাক্তন মিস ভেন্টুরা কাউন্টি ক্যালিফোর্নিয়া এবং জনসন কাউন্টি ইউএসএ।