বাসা থেকে টাকা লুকিয়ে নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর ক্যাসেট কিনতাম: ঋদ্ধি বড়ুয়া

“আরে বাবা, আইয়ুব বাচ্চুর অবদান অস্বীকার করার উপায়ই নেই”- বলেই আলাপে জমে গেলেন কলকাতার ঋদ্ধি বড়ুয়া।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Oct 2019, 12:28 PM
Updated : 18 Oct 2019, 12:28 PM

পশ্চিম বাংলার ঋদ্ধি বড়ুয়া এখন সফল একটি নাম। গানে, প্রযোজনায়, ওয়েব সিরিজে আর চিত্রনাট্য রচনায় কাজ করে যাচ্ছেন সব্যসাচীর মতন। সম্প্রতি দেবের ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার ‘ট্রিপি লাগে’ গানটি লিখে জায়গা করে নিয়েছেন টপ চার্টে। গ্লিটজের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় জানালেন তার জীবনে আইয়ুব বাচ্চুর প্রভাবের কথা।

ছোটবেলা থেকেই ঋদ্ধি বড়ুয়া তার পরিবারে দেখে এসেছেন ব্যান্ড মিউজিকের চর্চা। বলা যায় তার বাসা থেকেই কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড ‘ক্যাকটাস’ জন্ম নিয়ে রীতিমত এখন কলকাতার ব্যান্ডের বটগাছে পরিণত হয়েছে। ভাইদের সান্নিধ্যে থাকা ঋদ্ধির ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা তখনই জন্ম নেয়।

বলেন, “আমি তখন অনেক ছোট, যখন থেকে এলআরবির গান শুনি। বাংলাদেশ তো বটেই- বিশ্বাস করুন, কলকাতার অনেকের কাছেও আইয়ুব বাচ্চু বস হিসেবে সম্মানিত হন।”

তখন এতটা হয়ত এপার-ওপার বাংলার ক্যাসেট আনা নেওয়া হত না। তারপরেও সুযোগ পেলেই এলআরবি, মাইলসের ক্যাসেট সংগ্রহ করতেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চুর সিঙ্গেলস শুনে শুনে বাজানোর চেষ্টাও সেই তখন থেকেই।

অকপটে জানালেন আইয়ুব বাচ্চুর জন্য তার মনে জমে থাকা অনুরাগ।

“অনেকেই বলেন আইয়ুব বাচ্চু উপমহাদেশের অন্যতম সেরা গিটার বাদক। আমি নিজে অনেক গান শুনি। মিউজিক আমার ধ্যান-জ্ঞান। এজন্যই আমি বিশ্বাস করি, আইয়ুব বাচ্চু শুধু উপমহাদেশ নয়, সারাবিশ্বের মাঝে অন্যতম সেরা গিটারিস্ট। তার আঙুলের যাদু, তার সুরের মূর্ছণা, তার প্রতিটা কম্পোজিশন আন্তর্জাতিক মানের।”

আরও বলেন, “বিশ্বাস করুন, ছেলেবেলায় রীতিমত বাসা থেকে টাকা সরিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর ক্যাসেট কিনতাম আমি।”

আইয়ুব বাচ্চুর ব্যাপারে এমনই বেপরোয়া ছিলেন ঋদ্ধি ছোটবেলা থেকে। শুধু সঙ্গীত নয়, স্টাইলেরও ভিষণ ভক্ত তিনি এখনও।

তিনি উল্লেখ করেন, “একজন লিজেন্ডের ট্রেন্ড সেট করার জন্য যা যা গুণ থাকা দরকার, আইয়ুব বাচ্চুর মাঝে সবগুলোই ছিল। তার হ্যাট, তার সানগ্লাস, তার হাতের রিস্টব্যান্ড, তার গিটারগুলো- প্রতিটি উপাদান এক একটি ট্রেন্ড সেটার উপাদান। তিনি নিজেকে একজন সঙ্গীত শিল্পীর পাশাপাশি একটি একক ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের সামনে উদাহরণ রূপে রেখে গেছেন।”

ঋদ্ধি মনে করেন, তাই তার ভক্তরা আজও জানেন কোন স্টাইলে ‘বস’ আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করলে একজন মানুষ দূর থেকেও বুঝবে – ‘হ্যা সামনের মানুষটি আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত।’

আবেগের চাদর গায়ে জড়িয়ে ঋদ্ধি বলেন, “আইয়ুব বাচ্চু নিজেও মনে হয় জানতেন না তিনি জীবদ্দশায় কত মানুষকে প্রভাবিত করেছেন। এমনকী তার প্রয়াণের পরেও তাকে অনুসরণ করে সঙ্গীত শিখে যাবে তরুন প্রজন্ম- এই আমার বিশ্বাস।”

যার জীবনে আইয়ুব বাচ্চুর বিশেষ প্রভাব, তার কেমন লেগেছিল মৃত্যু সংবাদ শুনে! এই প্রশ্নে এবার থমকে একটু দম নিলেন ঋদ্ধি বড়ুয়া।

স্বভাবসুলভভাবে বললেন, “সত্যি বলছি, আমি কেঁদছিলাম! এত কম বয়সে আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণ মেনে নেওয়া কষ্টের। আরও কষ্টের তার মতো এতটা গুণি শিল্পীকে আরও অনেক কিছু পাওয়ার আগে অন্তিম বিদায় জানানো।”

জানালেন তার প্রিয় গান, ‘সেই তুমি কেনো এত অচেনা হলে’র মতই আইয়ুব বাচ্চু যেন অজানায় অচেনা হয়ে গেলেন। এক নিমিষে।

এই বলে যখন ঋদ্ধি থামলেন, তখন কোনো শর্ত বা অনুরোধ ছাড়াই চারপাশে এক মিনিট নীরবতা। এবং তা আইয়ুব বাচ্চুর জন্যই।

ঋদ্ধি বড়ুয়া আপাতত বেশ ব্যস্ত।  কাজ করছেন কলকাতা এবং বাংলাদেশে। ‘অগ্নি’ সিনেমার ‘ম্যাজিক মামনি’ গানটি ছাড়াও লিখেছেন হাবীব ওয়াহিদের গান। কলকাতার প্রথম ওয়েব সিরিজের পরিকল্পনাও করেন তিনি।

বর্তমানে টপ লিস্টে আছে ‘পাসওয়ার্ড’ সিনেমার ‘ট্রিপি লাগে’ গানটি। এছাড়াও কলকাতার ওয়েব নির্ভর প্লাটফর্ম ‘আড্ডা টাইমস’য়ের দর্শকপ্রিয় সিরিজ ‘ক্ষ্যাপা’র চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা তিনি। কাজ করছেন ‘আড্ডা টাইমস’য়ের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে।

আরও পড়ুন-