‘রিয়েলিটি শো থেকে পারফরমার নয়- প্রডাক্ট বের করা হয়’: রিয়াজ (ভিডিওসহ)

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। জানালেন তার ব্যস্ততা, বড়পর্দায় অনুপস্থিতির কারণগুলো। করলেন সিনেমাকেন্দ্রিক চলমান বাস্তবতার বর্ণনা নিজের বয়ানে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2019, 06:39 AM
Updated : 6 Oct 2019, 07:05 AM

প্রথমেই জানতে চাই, নায়ক রিয়াজকে এখন আমরা পাচ্ছি না কেন?

রিয়াজ: একজন শিল্পীর যখন ম্যাচিউরটি আসে, সেই সময়কার গল্প নিয়ে হয়তো পরিচালকরা ভাবছেন না। আমার কাছে যে ছবি আসছে না তা না। আমার কাছে যে ছবিগুলো আসছে সেগুলো খুবই ফানি টাইপের গল্প।

বাংলাদেশের ডিরেক্টরদের মাথার মধ্যে প্রোগ্রাম হয়ে আছে, সিনেমা মানেই নায়কা-নায়িকা প্রেম করবে, বাবা বাধা দেবে। ভিলেন থাকবে, ভিলেনকে মেরে নায়ক-নায়িকার মিলন হবে। এটা রোমান্টিক গল্পের ছবি। আর অ্যাকশন হলে নায়ক গরীবের সন্তান হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে। ভিলেনকে মেরে কিংবা পুলিশে দিয়ে নায়কের জয় হবে। এটা দুইটা ঘরানা বা জনরা। কিন্তু এর বাইরে অসংখ্য গল্প আছে সিনেমার। অভিনয়ের সুযোগ আছে। যেগুলো নেটফ্লিক্সের ছবিতে দেখতে পাই। আমাদের পরিচালকদের সেই ধরনের ছবির কনসেপ্ট বা সেই ধরনের ছবির ম্যাচিউরিটি আসে তাহলে হয়তো আমি ছবি করতে পারব।

দুই ঘরানার বাইরে গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র এখন দেশে হচ্ছে।

ছবি: নয়ন কর

রিয়াজ: ছবিগুলো নিয়ে আশাবাদি। অনেকে বলছেন, ছবিগুলো টেলিভিশনের ছবি। হলমালিকরা বলছেন, সিনেমাহল নির্ভর বানানো হয়নি। যারা বানাচ্ছেন কিংবা হলমালিকরা কী ভাবছেন সেটাও বিষয়। কনটেন্টের খুব অভাব। ভালো কনটেন্টের ছবি মানুষ দেখতে চায়। হলমালিক যখন সিনেমার কনটেন্টের বিরুদ্ধে বলেন, তার সঙ্গে হলটাকেও আপডেট করতে হবে। সবকিছু চেইনের মতো। কোথাও যেন স্থবিরতা চলে এসেছে। সিনেমা তৈরি হয় ভালো গল্পকে ঘিরে। সেই স্ক্রিনে দেখানোর দায়িত্ব পরিচালকের। যিনি এই সময়ে মানুষ কী দেখতে চায় সেটা বুঝতে পারবেন। বাংলাদেশের মানুষ সিনেমা দেখতে চায়। হয়তো সেখানে পরিচালক আমাদের হতাশ করছেন। হলমালিক কিছু কিছু দর্শকদের হতাশ করছেন। সবার হাতেই মোবাইল আছে। অল্প টাকায় শতশত বিদেশি ছবি দেখতে পারেন। কিন্তু সিনেমা হলে সিনেমা দেখার বিষয়টা তৈরি করতে হবে।

আপনি এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করছেন। সেখান থেকে কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন?

রিয়াজ: বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে আমরা হয়তো একটা সিনেমা তৈরি করবো। অনেকদিন ধরে আমরা সে কনটেন্টের ছোটখাটো ডিটেইলিংগুলো নিয়ে কিছু করার চেষ্টা করছি। সবকিছু যদি ঠিক থাকে তাহলে আমরা হয়তো বানাবো। স্বপ্ন তো আমাদেরই দেখতে হবে। সেই স্বপ্ন অনুযায়ী বাস্তবতাও বদলাতে হবে।

হাতেগোণা কয়েকজন নায়ক ছাড়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আর কোনো তারকা নেই এই মুহূর্তে। ইন্ডাস্ট্রিতে তারকা তৈরি না হওয়ার কারণ কী?

ছবি: নয়ন কর

রিয়াজ: আমি যেটা বলব সেটা শুনে হয়তো দর্শক আঁতকে উঠতে পারেন বা আপনার আঁতকে উঠতে পারেন বা এটা বলাটা ঠিক কিনা আমি জানিনা সো ফার আমি যেটা বলব যে, বর্তমানে সিনেমাতে একজন প্রযোজক এক কোটি টাকার মতো লগ্নি করেছেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উনি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন হয়ত দশ থেকে পনের লাখ টাকা নিয়ে। অনেক সময় শূন্যহাতে বাড়ি ফিরছেন।

সেই কারণে হয়তো চেইন রিয়্যাকশনের কথা বলছিলাম।

আমার জানামতে, এখন বেশ কিছু সিনেমা তৈরি হচ্ছে যেটাতে একজন হয়তো কোনওভাবে ম্যানেজ করে বাবার কিছু জমিজমা বিক্রি করে ২০-২৫ লাখ টাকা নিয়ে পরিচালকের হাতে দিচ্ছেন।

বলছেন, আমাকে সিনেমার নায়ক বানাতে হবে। তারা একজন নায়িকা কাস্ট করছেন। যে নায়িকাটিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রযোজক সিলেক্ট করে দিচ্ছেন। আরও কয়েজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে  ৬০ লাখ টাকা যোগাড় করে পরিচালক ৪০ লাখ টাকার মধ্যে ছবিটি বানাচ্ছেন।

এমন আধাখেচড়ার ছবি হলে যাচ্ছে। এখন আমাকে বলেন, সেই ছবি কিভাবে মানুষের মনে দাগ কাটবে?

এখন তো রিয়েলিটি শো থেকেও গ্রুমিং করে নায়ক-নায়িকা বেরিয়ে আসছে..

রিয়াজ: আসল সত্যটা হচ্ছে যা কিছু কনটেস্ট বা যতগুলো রিয়েলিটি-শো আমরা করি সবগুলোর পেছনে একটা স্পন্সর কোম্পানি। স্পন্সরের টার্গেট থাকে যে কিভাবে আমার প্রোডাক্ট কত বেশি হাইলাইট হলো চ্যানেলে টার্গেট থাকে যে কিভাবে আমার চ্যানেলের টিআরপি বেশি হচ্ছে।

এই যে দশটা বারোটা ছেলে বা মেয়ে বের হয়ে আসছে একটা কন্টেস্টের থেকে হাজার হাজার ছেলে মেয়ের সঙ্গে কমপ্লিট করে এদের দুই মাস পরে চ্যানেলও খোঁজ রাখেনা। স্পন্সর কোম্পানিও খোঁজ রাখেনা; বিচারকও খোঁজ রাখে না।

ছবি: নয়ন কর

এই ছেলেমেয়েগুলো আসছে এবং হারিয়ে গেছে।ওদেরকে পেট্রোনাইজ করার মতো কেউ নেই। কারণ এটা যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে তখন সবার পারপাস সার্ভ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর ১শ জন ছেলে মেয়ে আসছে। রিয়েলিটি শো’র পর তারা কোথায় যাচ্ছে?

এই হারিয়ে যাওয়া রিয়েলিটি শো’য়ের প্রতিযোগী নিয়ে কিন্তু আরেকটি অসাধারণ রিয়েলিটি শো হতে পারে।  তারা এখন ভিষণ দোটানায় আছে। কারণ তারা না পারছে সেলিব্রেটি লাইফ লিড করছে না পারছে সাধারণ জীবনযাপন করতে।

ফিরে আসি রিয়াজের কাছে। আপনাকে আসলেও কেন পাচ্ছি না।

রিয়াজ: আমি শুধু টাকার জন্য কাজ করতে চাইনা। নেহায়েৎ বিপদে না পড়লে শুধু কাজের জন্য কাজ করতে চাই না। বরং পরিবারকে সময় দিচ্ছি। বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে সময় দিচ্ছি। নাটকে কাজ করার ইচ্ছা সবসময় ছিল। কিন্তু সিন সিকোয়েন্সে সামঞ্জস্য প্রায়ই থাকেনা। আমি পাজলড হয়ে যাই। আমার পক্ষে আসলে এভাবে কাজ করা অসম্ভব প্রায়। কিন্তু একেবারে হারিয়ে যাইনি। হারাবো না। আমি তো বিশ্রাম নিতে আসিনি। বলতে পারেন পথ যেমনই হোক- ‘আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ’।

একদম আলোচনার শেষে আমরা। জানতে চাই শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কাকে সমর্থন করবেন?

রিয়াজ: আমার সমর্থন থাকবে শিল্পীর প্রতি। এছাড়া এর বাইরে আর কিছু বলতে পারছি না।