বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘অন্য জীবন’, ‘শঙ্খমালা’, ‘গোলাপী এখন ঢাকা’, ‘জীবন সংসার’সহ শতাধিক ছবির মেকআপম্যান কাজী হারুণ। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হৃদয় থেকে হৃদয়’ ছবির জন্য সেরা মেকআপম্যান হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ মেকআপম্যান পুরস্কারটি তিনি যখন গ্রহণ করেন তিনি নিজেও জানতেন না একসময় তাকে প্রিয় পেশাটি ছেড়ে দিতে হবে। ২০০৯ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর শারীরিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
অর্থ সংকটে পড়ে ২০১১ সালে নামেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এক বস্তিতে স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টকর দিন যাপন করছিলেন হারুণ। গণমাধ্যমে সম্প্রতি তার ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন ধারণের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে শিল্পী ঐক্যজোটের। সংগঠনটির মধ্য দিয়ে নিয়মিতই প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসছেন দুস্থ শিল্পীরা, পাচ্ছেন অনুদান।
চলতিবছর আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কাজী হারুণসহ চার শিল্পীর জন্য অনুদানের আবেদন করে সংগঠনটি। তারই প্রেক্ষিতে শনিবার এ শিল্পীর হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আশ্বাস দিলেন ভবিষ্যতেও পাশে থাকবেন। তথ্যটি গ্লিটজকে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক জিএম সৈকত।
তিনি গ্লিটজকে বলেন, “মেক আপ আর্টিস্ট কাজী হারুণকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের নজরে আসার পর গত ২৫ দিন আগে আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করি। প্রধানমন্ত্রী আবেদনটি গ্রহণ করেন। এবং কাজী হারুনের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেয়ার পাশাপাশি তার পাশে ভবিষ্যতে দাঁড়ানোর আশ্বাসও দেন। উনি এখন থেকে আর ভিক্ষাবৃত্তি করছেন না। ”
এদিকে, অনুদানপ্রাপ্তির পর পরিবারের পক্ষ আবেগাপ্লুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন থেকে কাজী হারুণের ছোট ভাই কাজী ফারুক। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এ জন্য আমরা তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে অনেক বড় করুক। আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে নিয়ে দীর্ঘদিন আমরা সংগ্রাম করেছি। যতোটুকু সাধ্য ছিলো অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। গত ছয় সাত মাস তাকে ভিক্ষা করতে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অর্থে তাকে আপাতত এক খণ্ড জমি কিনে দেয়ার পরিকল্পনা করছি। তার একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দরকার।”
কাজী ফারুক আরও জানান, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়। সুপার শপ ‘স্বপ্ন’ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা সমমানের গৃহস্থালী পণ্য সহযোগিতা করছে তাকে।
কাজী হারুণ ছাড়াও একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে অনুদান গ্রহণ করেণ ক্যান্সার আক্রান্ত শিল্পী পলি সায়ন্তনী, অন্ধ ও বধির হয়ে পড়া মেকাপ আর্টিস্ট আব্দুর রহমান এবং পক্ষাঘাতগ্রস্থ অভিনেতা মহিউদ্দিন বাহার। তাদের প্রত্যেককেই ৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।