চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে অনুতপ্ত মীর

ভারতের টিভি চ্যানেল জি বাংলার টিভি শো মীরাক্কেল এর জনপ্রিয় উপস্থাপক মীর আফসার আলী। হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনায় জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ব্যক্তিজীবনে তিনি চারবার আত্মহত্যা করার চেষ্টা  করেছিলেন।  সম্প্রতি কলকাতার রেডিও চ্যানেল রেডিও মির্চি’র অতিথি হয়ে এমন তথ্যই উন্মোচন করলেন তিনি।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Sept 2019, 11:20 AM
Updated : 14 Sept 2019, 11:20 AM

জানা যায়, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন তিনি। বারবারই মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন পরিবার ও বন্ধুদের সহযোগিতায়। তিনবার আত্মহত্যা প্রচেষ্টায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিলো কলকাতার আনোয়ার শাহ রোডের হসপিটালে। একবার নিজ বাড়িতেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন মীর। রেডিও মির্চিতে উপস্থিত হয়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে মীর এ ঘটনার স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, “আমি এই কথাগুলো শেয়ার করছি আপনার সঙ্গে আপনারাও আমার পরিবারের অন্য একটি অংশ। এবং আমার এই  বিশ্বাসটা রয়েছে আপনারা আমাকে এ দিয়ে বিচার করবেন না। আপনারা আমাকে প্রশ্ন করবেন না কেন ‘সকালম্যান’, তোমার লাইফে তো সব কিছু রয়েছে, তুমি সবদিক দিয়ে আশীর্বাদপুষ্ট। তাহলে কেন? আপনাদের কাছে আমি সবকিছু খুলে বলবো। অত গভীরে ঢুকতে চাই না। তাহলে ক্ষতগুলো আরও তাজা হয়ে যাবে। হ্যাঁ সব কিছু রয়েছে আমার। আল্লাহ তালা সব কিছু দিয়েছেন। আমি যা যা কিছু স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি সে সব কিছু আমার দখলে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কিছু একটার পেছনে ছুটতে থাকা, কিছু একটা তাগিদ, কোনও একটা জেদের বশে, করেছি এই কাজ। একবার নয়, দু’বার নয়, চার-চারবার।”

শনিবার কলকাতার এক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে  মীর জানান, সর্বশেষ ৮৭টি ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে তিনি তার পেশাগত জীবনের নিরাপত্তাহীনতকেই দায়ি করেন। মীর বলেন, “যিনি লোকাল ট্রেনে করে অফিস আসেন বা যিনি বড় অফিসে বছরে একবার ইনক্রিমেন্টের অপেক্ষায় পাগলের মতো খাটছেন, তিনি মনে করতেই পারেন আমি যা করেছি তা বড়লোকদের বিলাসিতা বা পাগলামি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটা স্টেজে আমাদের সবার ইনসিকিউরিটি, ভয় কিন্তু এক। ইনসিকিউরিটি, ভয়, পারফরম্যান্সের প্রেশার- এগুলো কিন্তু টাকা বা প্রতিপত্তি দেখে না। ইট ক্যান অ্যাফেক্ট এনিবডি।”

তবে, পরিবার ও চিকিৎসকদের সহায়তায় যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন মীর। লম্বা ছুটিতে গিয়েছেন আমেরিকায়। সুস্থ হয়ে মীর এখন লজ্জিত তার এমন কর্মকাণ্ডে। আর কাউকে এ ধরণের কাজ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “দয়া করে এই কাজটা করবেন না। আমি লজ্জিত আমি এই কাজটা চার-চারবার করেছি। আই অ্যাম অ্যাশেমড।”

তার মতো আত্মহত্যাপ্রবণতায় আক্রান্ত মানুষদের জন্য তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন মীর।  তিনি বলেন, “ এরকম সুইসাইডের চিন্তা সত্যি কখনও মাথায় আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে কাছের কোনও মানুষকে সেটা জানান। পাশে কেউ না থাকলে তাকে ফোন করে কথাটা বলুন। সেই মানুষটির সঙ্গেই কথা বলবেন যিনি আপনাকে জাজ করবেন না, যিনি আপনাকে অপমান করবেন না।

তার দুই নাম্বার পরামর্শ এমন- “নিজের মনের ভিতর যদি ঝড় শুরু হয়, সেটাকে দয়া করে আটকাবেন না। ইংলিশে যাকে বলে, ডোন্ট বট্‌ল ইট আপ। আপনি যত ভেতরের ঝড় আটকে রাখবেন নিজের ভেতরে, মনে রাখবেন সেই ঝড় কিন্তু বিস্ফোরণের মতো ফাটবে একদিন। তাই কিছুতেই সেই স্টেজ অবধি নিজেকে নিয়ে যাবেন না।”

মীরের সর্বশেষ পরামর্শ- “যদি কোনও সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যান, প্রথম দিন থেকে তাকে সবটা বলুন। আমি প্রথম প্রথম অনেক কিছু বলতাম না। পরে বুঝেছি আমি কত বড় ভুল করেছি। তাই যাঁরা ডাক্তার বা মনোবিদের সাহায্য নিচ্ছেন, তাদের পায়ে পড়ে বলছি, কিছু লুকোবেন না ডাক্তারের কাছে।”