“যেকোনো শো’  তৈরির সময় একটি আলাদা ক্রিয়েটিভ টিম প্রয়োজন”- তানভীর খান

পর্দার সামনের মানুষকে চেনা যত সহজ, পর্দার পেছনের মানুষকে জানা ততটাই দুষ্কর। কখনও কখনও হয়তো অজানাই থাকে পর্দার আড়ালের কারিগরেরা। বিশেষ করে রিয়েলিটি শো এর কারিগর যারা আছেন তারা কদাচিৎ সামনে আসেন।

রুম্পা সৈয়দা ফারজানা জামান গ্লিটজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2019, 12:31 PM
Updated : 7 Sept 2019, 01:35 PM

প্রতি শো থেকে অন্তত দশজন যখন শিরোনাম হয়ে যান পত্রিকার- তখনই আরেকটি শো’র জন্য- নতুনদের শিরোনামে পরিণত করার জন্য রাতদিন খাটা শুরু করেন এই শো-নির্মাতা ও তার দল। তেমনই একজন তানভীর খান।

ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ, পাওয়ার ভয়েস, সুপার হিরো সুপার হিরোইন, সানসিল্ক ডিভা বা সিলন সুপার সিঙ্গার- এসকল রিয়েলিটি শো’য়ের পেছনে আছে তার ও তার দলের কৌশল এবং পরিশ্রম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের গ্লিটজের আমন্ত্রণে তিনি প্রথমবারের মতো মুখোমুখি হলেন এমস একটি আলাপচারিতায় যেখানে তিনি তুলে ধরেছেন রিয়েলিটি শো’য়ের নানান দিক, সম্ভাবনা এবং সফলতার মূল মন্ত্র।

আলাপের শুরুতেই তানভীর খান তার নতুন এবং চলমান শো’য়ের সম্বন্ধে জানিয়ে বলেন- ”বিষয়টাই স্পর্শকাতর, আমরা কাজ করছি গৃহিনীদের নিয়ে। যারা কোনো কারণে একটা সময় নিজের স্বপ্ন থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। অবশ্যই স্বপ্নটা গান নিয়ে। সিলন সুপার ‍সিঙ্গারের মূল উদ্দেশ্য – এই গৃহিনীদের পর্দার সামনে এনে তাদের স্বপ্ন পূরণে আরেকবার উৎসাহ দেওয়া।”

তিনি জানান, এই শো এর উদ্যোক্তারা এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন- যা নিয়ে আর কেউ কাজ করেনি এখনও। তিনি নিজেও এমন একটি শোতে কাজ করার পর নিজের অভিজ্ঞতাকে আরও পোক্ত করেছেন বলে হেসে যোগ করেন তিনি।

রিয়েলিটি শো নিয়ে বর্তমানের টানাপোড়েন আর সমালোচনা প্রসঙ্গ এখানে চলে আসে স্বাভাবিক ভঙ্গীতেই।

তানভীর খান সহজ ভাবেই এর উত্তর দিলেন “আমাদের টিম যখন কাজ করে, সেটা যে রিয়েলিটি শো’ই হোক না কেনো, প্রতিটা সদস্যকে বলা থাকে যেন কোনো প্রতিযোগী বা প্রতিযোগীর সঙ্গে থাকা একজনকেও কোনো ভাবে অসম্মান না করা হয়।”

“প্রতিযোগিতা মানেই নির্বাচনের একটা বিষয় থাকে। সেটা যেমন দরকার, কোনো প্রতিযোগী যেন নিজেকে একেবারেই অযোগ্য না মনে করে- সেটাও আমাদের দেখা কর্তব্য”- বলেন তানভীর খান।

কথা প্রসঙ্গে তানভীর খান বলেন, “অবশ্যই কন্টেন্ট আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে একজন প্রতিযোগী যখন বিচারকের মোলায়েম কণ্ঠের না শুনে কেঁদে ফেলে সেটাও আমার কাছে কন্টেন্ট। আবার কোনো প্রতিযোগী যদি আনন্দে হেসে চোখের অশ্রু ফেলে সেটাও আমার কন্টেন্ট। প্রতিটা কন্টেন্টই কিন্তু উপস্থাপনের জোরে দর্শককে ছুঁয়ে যেতে পারে।”

দেশ এবং সংস্কৃতির বিষয়ও তুলে ধরেন এই নির্মাতা আলাপের মাঝে।

বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ কী চায়, সেটা কিন্তু আগে বুঝতে হবে, শুধু রিয়েলিটি শো’য়ের জন্য নয়। যেকোনো শো’র জন্য। কারণ আমাদের দেশের মানুষ স্বভাবতই একটু প্রতিক্রিয়াশীল। সেখানে বাইরে দেশে চলমান রিয়েলিটি শো’র মতোন খুব বেশি আক্রমাণত্মক বিচার বা উপস্থাপনা নিতে পারবে কিনা তাতে অবশ্যই সন্দেহ আছে।”

যেকোনো শো’য়ের মেধাস্বত্ব কিনে আনলেও তা দেশীয়করণের প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেন এই নির্মাতা।

একারণেই যেকোনো শো তৈরির সময় একটি আলাদা ক্রিয়েটিভ টিম প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। কারণ, ক্রিয়েটিভ টিমের কাজই তখন থাকবে কনসেপ্ট নিয়ে গবেষণা এবং আলোচনা করার, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কনসেপ্টে দেশীয় করণের সুযোগ করার।

তিনি বলেন, “বিভিন্ন রিয়েলিটি শো’য়ের সমালোচনা পেছনে এই ক্রিয়েটিভ টিমের অনুপস্থিতিও একটি বড় কারণ। ”

বিচারকদের ভূমিকা নিয়ে তানভীর যোগ করেন নিজের মতামত। তিনি মনে করেন, বিচারকের আসনে তাকেই রাখা বাঞ্ছণীয় যাকে দেখে প্রতিযোগীরা আপন মনেই “ওয়াও” বলে উঠবে। যারা তাদের আইডল। তাহলে তাদের ’হ্যা’ বা ‘না” দুটোই কিন্তু প্রতিযোগীরা যেমন মেনে নেবেন, তেমনই দর্শকরাও সহজে বিচারকদের যেকোনো সীদ্ধান্তে সায় জানাবে।

নানান ধরনের রিয়েলিটি শো দিয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী করলেও সঙ্গীত নির্ভর শো মানেই তানভীর খান কেনো?

তিনি জানালেন তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ। তার বাবা দেশের প্রথম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শব্দ প্রকৌশলী হওয়ার কারণে ছোটবেলা এবং কিশোর বেলার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে স্টুডিওতে। সুরের সঙ্গে তার সম্পর্ক তাই বহু বছরের। চ্যানল নাইনের অনুষ্ঠান প্রধান হওয়ার পাশাপাশি তাই রিয়েলিটি শো’য়ের কারিগর হিসেবে তাকে পাওয়া যায় হরদম।

তবে সামনে তাকে দেখা যাবে অন্যরকম একটি রিয়েলিটি শো এবং প্রতিযোগিতার নির্মাতার আসনে। আসন্ন ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার পেছনে আবারও কলকাঠি নাড়বেন তানভীর ও তার দল।