বড় পর্দার নায়ক হলেও ছোট পর্দাতেও ছিল ইমন ওরফে সালমান শাহ’র অবাধ বিচরণ।
Published : 06 Sep 2019, 05:50 PM
অথচ আসল নামে নয়, চলচ্চিত্রের পোশাকি নামেই তার জনপ্রিয়তা।
চলচ্চিত্র-বিষয়ক লেখক বিধান রিবেরুর এই বিষয়ে একটা লেখা আছে। শিরোনাম ছিল লেখাটার- ইমন কেনো সালমান?
লেখাটায় মূলত বিশ্লেষণ করার চেষ্টা হয়েছে নির্মোহভাবে, কেনো সালমান শাহকে নিয়ে আমাদের এত আবেগ উচ্ছাস, কেনো বাজার অর্থনীতির চাহিদার কারণে ইমনদের সালমান শাহ হতে হয়।
কিন্তু লেখাটা আমাদেরকে একটা জিনিস পরিষ্কার করবে সেটা হল এফডিসির পুঁজির ক্রমাগত জীবনীশক্তি শুষে নেওয়ার ক্ষমতা, যখন যাকে দিয়ে ব্যবসা হয়েছে, তাঁকে দিয়ে মূলত অমানুষিক পরিশ্রম করিয়েছে।
সে জাফর ইকবাল ধরেন কিংবা সালমান শাহকেই আনেন না কেনো? তবুও এই এত বছর পরে এসেও সালমান শাহকে এড়ানো যাচ্ছে না কোনোভাবেই।
সাড়ে পাঁচ বছরের চলচ্চিত্র-জীবনে সালমান শাহ সিনেমা করেছেন ২৭টি।
শহুরে তারুণ্যের রোল করে বিখ্যাত হলেও তিনি শুধু গৎবাঁধা সেই চরিত্রেই থামেন-নি। গ্রামীণ চরিত্রেও অভিনয় করেছেন সাবলীলভাবে।
এই ক্ষমতা সাম্প্রতিক সময়ে আর কোথাও কারও কাছে পাবেন না। সালমান শাহ মূলত বাংলা সিনেমারই সোনালি প্রজন্মের ধারক ও বাহক।
বলিউড থেকে অনুকরণের প্রবণতা আছে প্রবলভাবে। সেই অল্প সময়ের ভেতরে সালমান শাহ নিজেকে উপস্থাপন করেছেন একদম আলাদা আঙ্গিকে।
২৭টি ছবির ভেতর ৯টি ছবি মুক্তি পেয়েছিল তার প্রয়াত হওয়ার পরে।
নয়টি সিনেমার ভেতরে কয়েকটা সিনেমা এত কাঁচাভাবে সম্পাদনা করা, দেখলে মনে হবে শুধু টাকা তোলার জন্যই এসব বানানো।
নায়িকা শাবনূর একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “সালমান নেই, কিন্তু সালমানের মতো দেখতে কোনো ডামির সঙ্গে অভিনয় করা যে কী মানসিক যন্ত্রণার ছিল তা কেউ কল্পনাই করতে পারবে না।”
সালমান শাহকে নিয়ে যে জিনিসটা কম বলা হয় সেটা হল তার অভিনয় দক্ষতা।
ইউটিউবে খুঁজলেই তার অভিনীত কিছু নাটক পাওয়া যাবে। দেখবেন কি পরিচ্ছন্ন সাবলীল অভিনয়।
এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পাথর সময়’ ও ১৯৯৪ সালে ‘ইতিকথা’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন।
শুধু মাত্র টেলিভিশনে কাজ করলেও তিনি অমরত্বের চাবিকাঠিটা পেয়ে যেতেন অবলীলায়। কিন্তু তিনি তো সালমান শাহ, এত সামান্যতে থামবেন কেনো। স্টাইলে, চলনে বলনে তিনি পরিণত হয়েছেন কাল্ট ফিগারে।
সালমান শাহ প্রয়াত হওয়ার পরের সিনেমাগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, সালমান শাহর যে ইমেজ তা থেকে বের হতে পারে নি, নানান অভিনেতাদের দিয়ে চেষ্টা চলেছে, কিন্তু কেউ সালমানের ধারে কাছেও কিছু করতে পারেন নাই।
অশ্লীল যুগের সিনেমা যখন আসলো তখন আসলে আমাদের আর কিছুই থাকলো না, স্মৃতিচারণের জন্য রইলো বাকী সালমান শাহ। তার মতো স্টাইল, ফ্যাশন, রুচিশীল একটা নায়ক আর পেল না আমাদের সিনেমার জগত।
আজকে যারা অভিনয় করছেন, নায়ক হচ্ছেন তাদের কাছেও তিনি আইডল। আজ যে মেয়েটি অভিনয় করবে সেও হয়ত স্বপ্ন দেখে মনে মনে, ‘ইশ! যদি সালমান শাহর সাথে অভিনয় করতে পারতাম।’
এটাই সালমান শাহর মহত্ব, যে চলে যাওয়ার দুই যুগ পরেও বাংলাদেশের অন্যতম সেরা নায়ক, তার কীর্তি ভুলে যাওয়াটাও অসম্ভব।
চলচ্চিত্র শিক্ষক জাকির হোসেন রাজুর কথাটাই আসলে আমাদের বলতে হবে, “সালমান শাহ এসেছিলেন এক পালা-বদলের সময়ে, সালমানের তারুণ্যের উচ্ছাস ছিল।”
যতদিন বাংলাদেশের সিনেমা ও তারুণ্য থাকবে ততদিনই আসলে সালমান শাহ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে আমাদের কাছে। প্রয়াণ দিবসে তাঁর প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
ছবি: ফেইসবুকের ফ্যান পেইজ থেকে।
লেখক: আলি আরাফাত শান্ত।