হরহামেশাই যখন মিডিয়ায় সংসার ভাঙছে তার বিপরীতে একই ছাদের নিচে ২৫ বছর কাটিয়ে দিলেন আপনারা। আপনাদের দাম্পত্য জীবনের মূলমন্ত্র কী?
নাঈম: আমাদের দাম্পত্য জীবন আর দশটা সাধারণ মানুষের দাম্পত্য জীবনের মতোই। আমার মনে হয়, দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, বোঝাপড়া থাকাটা খুব জরুরি। কম-বেশি ঝামেলা বেশিরভাগ সংসারেই থাকে।
সংসারের বন্ধন অটুট রাখার জন্য আরেকটি নিয়ামক হলো-সন্তান। বাচ্চার ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে অনেক সংসার টিকে থাকে। সন্তান জন্মের পর বাবা-মার যাবতীয় ফোকাস বাচ্চার উপর চলে যায়। তখন চিন্তা থাকে, কীভাবে তাকে লালন-পালন করব, কীভাবে তাকে শিক্ষা দেব, সুন্দর পরিবেশে মানুষ করবে। এই চিন্তার মাঝে সংসারের বড় বড় ঝামেলাগুলো হারিয়ে যায়।
ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে বিয়ের কয়েক বছর পর দু’জন অভিনয় ছাড়লেন কেন?
নাঈম: বিয়ের পর পরই আমাদের দুই মেয়ের জন্ম হয়। বড় মেয়ে নামিরা নাঈম আর ছোট মেয়ে মাহদিয়া নাঈম। দুইজনকে মানুষ করতে গিয়েই আমরা আর সিনেমা করিনি। ওদেরকে ঘিরেই আমাদের পৃথিবীটা গুছিয়ে এনেছিলাম। ওদের জন্য শাবনাজও অনেক স্যাক্রিফাইস করেছে। বাচ্চা দুটিকে মানুষ করতে গিয়ে কখন যে ২৫ বছর চলে গেল টেরই পেলাম না।
আপনাদের দুই মেয়ে নামিরা ও মাহদিয়া এখন কী করছেন?
নাঈম: নামিরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে পড়াশোনা করছে। আর মাহদিয়া এ লেভেলের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। নামিরা ফুটবল খেলতে ভালোবাসে; বিভিন্ন টুর্নামেন্টেও অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি পেইন্টিং করে। আর মাহদিয়া শখের বশে গান করে। বেশ কিছু কাভার সং দু’জনকেই পরিবার থেকে পরিপূর্ণ সমর্থন দিয়েছি আমরা। ক্যারিয়ার করবে ওরা সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের দিক-নির্দেশনা সবসময়ই পাবে।
নাঈম: এটা ভুল। বিয়ের পরে তো শাবনাজ সবার সঙ্গেই কাজ করেছে। মান্না থেকে শুরু করে আমিন খান, সালমান শাহ, অমিত হাসানের সঙ্গেও কাজ করেছে। হয়তো কোনো গল্পের কারণে কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করেনি। সেটা নিয়ে তো আমি কিছু বলতে পারি না।
অভিনয় ছাড়ার পর এফডিসি কেন্দ্রিক বিভিন্ন আয়োজনে আপনাদের খুব কম দেখা যায়।
নাঈম: আমরা এখন কাজ করছি না বলে এফডিসিতে আর খুব একটা যাওয়া হয় না। আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটছে আমাদের। ইচ্ছা করে যে যাই না-ব্যাপারটা এমন না। আসলে যাওয়ার সুযোগ হয়ে উঠে না।
কী ব্যবসা করছেন?
নাঈম: আগে থেকেই কিছু পারিবারিক ব্যবসা ছিল। এখন ফিশারিজ, ডেইরি ফার্ম করছি; টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির ব্যবসাও আছে।
এখনকার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী
নাঈম: আমাদের সিনিয়ররা যখন কাজ করতেন তখনও বলা হতো, ভালো ছবি হয় না। ক্রাইসিসটা সবসময় ছিল। প্রত্যাশাও সবসময়ই ছিল। আজ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি ভালো করছে বলেই সেখানকার মালিক-শ্রমিকরা চাচ্ছে আরও ভালো করতে। তেমনি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিও এখন পরিবর্তন হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন এসেছে। আমরা এখন দেশে বসে বলিউড-হলিউডের ছবি দেখি। পুরো আকাশ খোলা; ইন্টারনেটও চলে এসেছে।
অনেকে বলছেন, নায়ক-নায়িকা নির্ভর এই ইন্ডাস্ট্রিতে জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।
নাঈম: আগে দেশে সামাজিক ছবি নির্মাণ করা হত। সেখানে বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ির চরিত্র থাকত। চলচ্চিত্রের সেই গল্পগুলো এখন টিভিনাটকে উঠে আসছে। দর্শকরা যে গল্প টিভিতে দেখছে সেটা দেখতে হলে যাবে কেন? মূলত সেকারণেই সিনিয়র আর্টিস্টরা মূল্যায়ন পাচ্ছে না। সময়ের সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে।
এখান থেকে উত্তরণ কীভাবে সম্ভব?
নাঈম: হঠাৎ করে এর পরিবর্তন আনা যাবে না। বেশ সময় নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শুধু দুই-একটি সেক্টরের উন্নতি করলেই হবে না পুরো ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন আনতে হবে।
নাঈম: আমার আমার শাবনাজের অভিনয়ের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। শাবনাজ হয়তো করবে কি না সেটা ওর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমি অভিনয় করব না। তবে আমার নির্মাণের ইচ্ছা আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে এত বছর ধরে কাজ করেছি সেই জায়গা থেকে নির্মাণে হাত দিতে চেয়েছি। কবে নাগাদ নির্মাণ করব সেটা ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে।