‘এলআরবি’ নিয়ে কী ঘটছে?
শামীম আহমেদ: আমার দোষটা কী? ইন্টারভিউয়ে দেখলাম, উনি আমাকেই দোষারোপ করেছেন। বস (আইয়ু্ব বাচ্চু) বেঁচে থাকতেও এলআরবিতে আমি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করতাম। পাশাপাশি আমার একটি সাউন্ড কোম্পানীও ছিল। কোনো অসুবিধা ছিল না; বসও আমাকে কিছু বলেনি। কারণ আমাকে ওখান থেকেই আনা হয়েছিল।
বস চলে গেছেন; বললাম, ব্যান্ডটাকে ধরেন। সুন্দরভাবে প্রাকটিস করেন। উনি (স্বপন) প্রাকটিসে যাবেন না, শুধু শো করবেন। এলআরবি কী খ্যাপের ব্যান্ড নাকি? বিয়েবাড়ির খ্যাপ মারবে এলআরবি? আর ট্রিবিউট করার জন্য তো মানুষের অভাব নেই পৃথিবীতে। যারা জানে আর যারা জানে না সবাই তো বসকে ট্রিবিউট করতে পারেন। বসকে সম্মান দিতে হলে এলআরবি সেই রকমভাবেই কাজ করবে। সময় নিয়ে করতে হবে। প্রাকটিস করতে হবে। কারণ উনি যেই জায়গায় রেখে গিয়েছেন উনাকে সেই জায়গা থেকেই কাজ করতে হবে। বসের মতো করে উপস্থাপন করতে হবে। বসের রিপ্লেস হবে না।
স্বপনের অভিযোগ, বালামকে নিয়ে এলআরবি’র অনুষ্ঠানে আইয়ুব বাচ্চুর ছবি না লাগিয়ে তাকে অসম্মান করা হয়েছে।
শামীম আহমেদ: উনি খুব বিচ্ছিরি একটা কথা বলেছেন। এটা অমূলক। উনার মতো সিনিয়রের কাছ থেকে এই ধরনের কথাগুলো আশা করিনি। মানুষ পয়সার জন্য পাগল হয়। কারো পেট চলতেছে না খুব ভালো কথা। আমার ব্যবসা আছে, পেট চলতেছে কিন্তু আমরা কী কিছু করিনি? আটমাস ধরে ব্যান্ডটির চালানোর জন্য আমরা কি কষ্ট করিনি? সবাই কষ্ট করেছে। মাসুদ, রোমেল, স্বপনভাইসহ সবাই কষ্ট করতেছে।
আমার অফিসের জায়গায় এলআরবির প্রাকটিস করেছি। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে প্রাকটিস করেছি। মিউজিক্যালি ওদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি ভেবেছিলাম, এলআরবির লাঞ্চিংটা বড় আয়োজনে হোক।
তাদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই সেইদিন ভোকাল হিসেবে বালামকে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
শামীম আহমেদ: তাহলে উনারা ছিলেন কেন সেই অনুষ্ঠানে? উনাদের ছাড়াই যদি সিদ্ধান্ত নিতাম তাহলে তো তাদের দুইজনকে ছাড়াই আমরা দাঁড়াতাম, উনারা থাকতেন না। প্রেস কনফারেন্সে উনিও ছিলেন। উনি নিজেই বালামের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আপনার হাতেই এলআরবিকে তুলে দিলাম। আপনিই এগিয়ে যাবেন।’ এগুলো তো দ্বিমুখী কথা হয়ে গেলে না? বালামকে পছন্দ না হলে তাকে নিতাম না। একজনের সিদ্ধান্তে এটা কোনো দিন হতে পারে না। অনুষ্ঠানে পাঁচজনই ছিলাম। তাহলে হঠাৎ কী এমন হলো যে বললেন, বালামের ব্যাপারে উনি জানতেন না। আমার মাথায় ঢুকতেছে না। বিষয়টি হাস্যকর। এতো সুন্দর একটা জিনিস, নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করে নষ্ট করে ফেলল। এটা কাম্য ছিল না।
আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে আবেগপূর্ণ কথাবার্তা বলতে গিয়ে আপনাদের তরফ থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শামীম আহমেদ: আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে অবশ্যই ইমোশনাল হওয়া যাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে শোককে তো শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। আমাদের বলার বিষয়টা ছিল, শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে উনার পথেই এগিয়ে যেতে হবে। আবেগ অবশ্যই থাকবে তবে সেটা আমাদের ভেতর থাকবে। আবেগ দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে সমবেদনা আদায় করে ‘এলআরবি’ চলতে পারবে না। এলআরবি এলআরবির জায়গায় দাঁড়াতে হবে এবং বসের লেগাসিটা ধরে রাখতে হবে।
এলআরবির মালিকানা দাবি করেছেন স্বপন; বিষয়টি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
শামীম আহমেদ: সেখানে আইয়ুব বাচ্চুর সম্মান কতটুকু রাখা যাবে সেগুলো উনারই ভাবা উচিত কারণ এলআরবিকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করছেন তিনি। ব্যাপারটা এমন, আমরা এলআরবির কেউ না; আমরা বাইরের কেউ ছিলাম। সেটাও যদি হয় তাহলে ভাবতে হবে।তবে এলআরবির টিকে থাকটা জরুরি। সম্মিলিতভাবে ভালোর দিকটাই দেখতে হবে।
আপনাদের ছাড়াই স্বপন ও রোমেল ‘এলআরবি’ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে আপনাদের তিনজনের পরিকল্পনা কী?
শামীম আহমেদ: আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। উনাদের বিপরীতে আরেকটা ‘এলআরবি’ করব সেটা তো হতে পারে না। এলআরবি একটাই হবে এবং একটাই হওয়া উচিত। উনারা যদি মনে করেন, উনারাই এলআরবি ভালো করবেন তাহলে সবার সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিক।…আমাদের যদি বাদ দিয়েও করতে চান সেটাও কথাবার্তার মাধ্যমেই করতে হবে। জিনিসটার সুন্দরভাবে সমাপ্তি টানতে হবে এবং যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। আমাদের যদি কোনো দোষ-ত্রুটি হয় তাহলে আমরা বলবো আপনারাই করেন।…
আর বালামের বিষয়ে আপনাদের করণীয় কী?
শামীম আহমেদ:…উনারা যদি না চান তাহলে বালামকে তো এখান থেকে নিষ্কৃতি দিতেই হবে। বালামের তো নিজস্ব পরিচয় আছে। উনার জীবন তো বরবাদ করে লাভ নেই। উনাকে সুন্দরভাবে এক্সিট পয়েন্টে এগোতে হবে। উনারা কীভাবে এগোতে চান সেটাও বোধগম্য হতে হবে।