নাট্যকার মমতাজউদদীনের চির বিদায়

বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা অভিনেতা, নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2019, 10:38 AM
Updated : 2 June 2019, 02:28 PM

শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ৮৪ বছর বয়সী মমতাজউদদীন।

রোববার বিকাল ৩টা ৪৮ মিনিটে চিকিৎসকরা একুশে পদকজয়ী এই নাট্যকারকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান।

১৯৩৫ সনে ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের মালদহে জন্মগ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পর তার পরিবার পূর্ববঙ্গে চলে আসে।

রাজশাহী সরকারি কলেজে পড়ার সময়ই রাষ্ট্রভাষার আন্দোলনে যুক্ত হন তিনি। রাজশাহীর তৎকালীন ছাত্রনেতা ভাষাসৈনিক গোলাম আরিফ টিপুর সান্নিধ্যে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে ভাষার দাবিতে আন্দোলন সংগঠনে তিনি ভূমিকা পালন করেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির রাতে রাজশাহী সরকারি কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ইট কাদামাটি দিয়ে যে শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল, তাতে মমতাজউদ্দীনও ভূমিকা রেখেছিলেন। তখন জেল খেটেছেন একাধিকবার।

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসেবে মমতাজউদ্দীনের কর্মজীবনের শুরু।  পরে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন কমিটিতে একজন উচ্চতর বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন তিনি।

তার লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল।

নাট্যচর্চায় অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক পান ১৯৯৭ সালে। এছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার  পেয়েছেন তিনি।

তার রচিত নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’।

তার লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের নাটকের ইতিবৃত্ত’, ‘বাংলাদেশের থিয়েটারের ইতিবৃত্ত’, ‘নীলদর্পণ’ (সম্পাদনা), ‘সিরাজউদ্দৌলা’ (সম্পাদনা)।

গোলাম কুদ্দুছ জানান, মমতাজউদদীন আহমদের মরদেহ রোবাবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে গুলশান আজাদ মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে গোসল শেষে মিরপুর রূপনগরের মদিনা মসজিদে এশার পর তার জানাজা হবে।

সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আরেক দফা জানাজা শেষে মমতাজউদদীন আহমদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। সেখানে বাবা-মায়ের করবের পাশে তাকে সমাহিত করা হবে।