গুগল ডুডলে রোজী আফসারী

হালের তরুণদের কাছে রোজী আফসারী নামটি অনেকটা অচেনা হলেও জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার গুরুত্ব তুলে ধরল সার্চ ইঞ্জিন গুগল।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2019, 04:21 PM
Updated : 23 April 2019, 04:32 PM

বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর ৭৩তম জন্মবার্ষিকীকে মঙ্গলবার তাকে নিয়ে ডুডল করেছে গুগল।

বিশেষ কোনো দিন কিংবা বিশেষ কোনো ব্যক্তির জন্য সার্চ বক্সের উপরে নিজেদের লোগো বদলে বিশেষ দিনটির সঙ্গে মানানসই নকশার যে লোগো তৈরি করে গুগল, তাই ডুডল।

মঙ্গলবার গুগলের বাংলাদেশের ডোমেইন হোম পেইজে দেখা যাচ্ছে রোজী আফসারীকে। এই সম্মাননা স্মারক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে প্রিয় নায়িকার প্রতি ভক্তদের স্মৃতিচারণের উপলক্ষ হয়ে।

রোজী আফসারীকে স্মরণের কারণ ব্যাখ্যা করে গুগল বলছে, সব বাধা ভেঙে বাংলাদেশের প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে চলচ্চিত্র নির্মাণে নারীদের আগমনের দ্বার উন্মোচন করেছেন তিনি। ১৯৮৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন ‘আশা-নিরাশা’ চলচ্চিত্রটি।

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে রোজী আফসারীকে ধরা হলেও স্বাধীনতার এক বছর আগে রেবেকা নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্র ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’।

তার কথা স্মরণ করে বর্তমান বাংলাদেশের সক্রিয় নারী নির্মাতাদের পক্ষ থেকে নির্মাতা সামিয়া জামান মূল্যায়ন করলেন দেশের চলচ্চিত্রে রোজি আফসারির অবদান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্বর্ণযুগের নায়িকা তিনি। প্রথমত তাকে আমি স্মরণ করব তার বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনের জন্য। ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘আলোর মিছিল’র মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তার পাশাপাশি তিনি যে কাজটি করতে পেরেছেন তা হলো ১৯৮৬ সালে ‘আশা নিরাশা’র মতো একটি চলচ্চিত্র তিনি নির্মাণ করতে পেরেছেন।”

সামিয়া বলেন, “এমনিতেই বাংলাদেশে নারী নির্মাতার সংখ্যা কম, সে জায়গায় তিনি যে পাইওনিয়ারের ভূমিকায় এসেছেন, এবং সে পথ ধরেই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশে অনেক নারী এগিয়ে এসেছেন নির্মাণে, আমিও চেষ্টা করেছি নির্মাতা হিসেবে প্রযোজক হিসেবে, করছি এখনও। কিন্তু এ পথটা বন্ধুর, এবং সংখ্যায় আমরা কম বলে প্রতিবন্ধকতাও বেশি। সে হিসেবে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন মাধ্যমে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগে নির্মাতা হিসেবে তার আবির্ভাব বর্তমান সময় পর্যন্ত নির্মাণে আসা নারীদের উৎসাহ যুগিয়েছে।”

অভিনেত্রী রোজী আফসারীর আসল নাম শামীমা আক্তার রোজী। জন্ম ১৯৪৬ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায়।

১৯৬৪ সালে ‘এই তো জীবন’ চলচ্চিত্র দিয়ে রুপালি জগতে পা রাখেন রোজী। ওই বছরই তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’ এ দেখা যায় তাকে।

১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এ অভিনয় করেন রোজী। বাংলার পাশাপাশি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি ‘আলোর মিছিল’-এ অভিনয় করেছেন ১৯৭৪ সালে।

প্রথমে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করলেও পরে চরিত্র অভিনেত্রীর রূপায়নেও তার জনপ্রিয়তার কমতি হয়নি। ১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান তিনি।

তিনি যখন অভিনয়ে আসেন তখন রোজী সামাদ নামে পরিচিত ছিলেন। তার প্রথম স্বামী এম এ সামাদও ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের মানুষ। পরে আরেক চলচ্চিত্র নির্মাতা মালেক আফসারীকে বিয়ের পর রোজী আফসারী হয়ে ওঠেন তিনি।

১৯৮৬ সালে ‘আশা নিরাশা’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালক হিসেবে আবির্ভূত হন রোজী। পরবর্তীতে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রোজী ফিল্মসের ব্যানারে অনেকগুলো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি।

২০০৭ সালের ৯ মার্চ মারা যান এই অভিনেত্রী ও নির্মাতা।