এলআরবি’র একমাত্র মালিক আইয়ুব বাচ্চু

প্রয়াত ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চুই ‘এলআরবি’র একমাত্র মালিক বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস; তিনি বা তার উত্তরাধিকারের অনুমতি ছাড়া ব্যান্ডটি পরিচালনার আইনগত অধিকার কারও নেই।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 April 2019, 12:12 PM
Updated : 16 April 2019, 12:19 PM

কপিরাইট অফিস জানিয়েছে, ২০১০ সালে আইয়ুব বাচ্চু ‘এলআরবি’র লোগোর নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তার উত্থাপিত নথি পর্যালোচনা করে কপিরাইট আইনের ৫৬/২ ধারার বলে একক মালিক হিসেবে তাকে চূড়ান্ত করা হয়।

কপিরাইট অফিসের পরিদর্শক আতিকুজ্জামান আতিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লোগোর নিবন্ধন একমাত্র তার নামে হওয়ায় তিনিই ‘এলআরবি’র একমাত্র মালিক। প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন হলে ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের আইনগত অধিকার থাকত কিন্তু ব্যক্তির নামে নিব্ন্ধন হওয়ায় বাকিদের ‘এলআরবি’ পরিচালনার অধিকার নেই। সত্বাধিকারীর অবর্তমানে তার উত্তরাধিকাররা সত্বভোগ করতে পারবেন।”

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর গত ৫ এপ্রিল এলআরবির ভোকাল হিসেবে যুক্ত হন সংগীতশিল্পী বালাম। তার দিন দশেক পর বাচ্চু পরিবারের আপত্তির মুখে ‘এলআরবি’ থেকে বেরিয়ে এসে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লেগাসি’ নামে আরেকটি ব্যান্ড গঠন করেছেন তারা।

নাম বিষয়ক জটিলতার মুখে ব্যান্ডটি এবার পহেলা বৈশাখের কোনো কনসার্টে পারফর্ম করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন এলআরবি’র ম্যানেজার শামীম আহমেদ।

তিনি জানান, ‘এলআরবি’ নামেই কনসার্টগুলো বুকিং ছিল। কিন্তু বসের (আইয়ুব বাচ্চু) পরিবার বলেছে, এলআরবি নামে পারফর্ম করা যাবে না। ফলে সেগুলো স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি।

১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এলআরবি’। সে সময় তার সঙ্গী ছিলেন জয়, স্বপন ও এসআই টুটুল। জয় ও এসআই টুটুল ‘এলআরবি’ ছাড়লেও প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য স্বপন প্রায় তিন যুগ ধরে যুক্ত আছেন এলআরবির সঙ্গে। ম্যানেজার শামীম আহমেদসহ দলের বাকি সদস্যরাও ব্যান্ডটির সঙ্গে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্ত ছিলেন।  

আইয়ুব বাচ্চুর নামে একক মালিকানা চূড়ান্ত হওয়ায় ব্যান্ডটি পরিচালনার আইনগত অধিকার হারিয়েছেন বাকি সদস্যরা।

তার নামে মালিকানা নির্ধারণের বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন শামীম আহমেদ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এটা নিয়ে কোনও কাদা ছোঁড়াছুঁড়িও করিনি।...এগুলো নিয়ে ভাবিনি। ভাবার কথাও না। জিনিসগুলো এরকম হবে-মাথায়ও আসেনি।”

“আমরা বৈষয়িকও না। জিনিসটা উনি হয়তো আমাদের ভালোর জন্যই করেছেন। আমরা মিউজিক যখন করি, ওটাকেই ইনভলভ থাকি। আমরা উনার লেগাসিটাকে ধরে রাখতে চাই।”

একক মালিকানা নিয়ে তাদের কোনও আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি।

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারসূত্রে এখন ব্যান্ডটির মালিকানা তার দুই সন্তান আহনাফ তাজওয়ার ও ফাইরুজ সাফরার।

গত বছরের অক্টোবরেও বাবার গিটার কাঁধে এলআরবির সঙ্গে মঞ্চে উঠেছিলেন আহনাফ তাজওয়ার।চট্টগ্রামের এম আজিজ স্টেডিয়ামের উত্তাল জনসমুদ্রে নিজের কণ্ঠে বাবার গান তুলে আলোড়ন তুলেছিলেন তিনি। এলআরবিভক্তরা আইয়ুব বাচ্চুর শূন্যস্থানে আহনাফকে ভাবা শুরু করলেও গত ৫ এপ্রিল সেখানে আবির্ভাব ঘটে আরেক সংগীতশিল্পী বালামের। তার দিন দশের পর ব্যান্ডটির সদস্যদের সঙ্গে বাচ্চু পরিবারের মতানৈক্য প্রকাশে আসে।

আহনাফ ‘এলআরবি’তে যাত্রা শুরুর পরও থিতু হলেন না কেন? এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এলআরবিভক্তদের মনে।

“আহনাফ লেখাপড়ার জন্য দেশের বাইরে থাকে। বসও (আইয়ুব বাচ্চু) চাইতেন, ও লেখাপড়া করবে। আমরাও কখনও প্রেশার দিইনি। যে কয়েকদিন ঢাকায় ছিল পারফর্ম করেছে।এখন পড়াশোনার জন্য বাইরে আছেন।”, বললেন শামীম।

এলআরবি ছাড়লেও আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক পাওয়ার অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানালেন তিনি।

“আমরা আশায় আছি, উনারা যেন মন থেকে এলআরবি’র জন্য আমাদের ডাকেন; আমরা চলে আসব। উনারা ভালোবেসে আমাদের গ্রহণ করুক। আমরাও তো এলআরবিরই একটি পরিবার। আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায় রইলাম।”

এলআরবির নাম বদল নয়, ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লেগাসি’ নতুন ব্যান্ড

সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, এলআরবি’র নাম বদলে ‘বালাম অ্যান্ড দ্য লেগাসি’ করা হয়েছে। কিন্তু কপিরাইট আইনে আইয়ুব বাচ্চু বা তার উত্তরাধিকার ছাড়া এলআরবি’র নাম বদলের আইনগত অধিকার কারো নেই।

বিষয়টি নিয়ে শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “আমরা এলআরবি কন্টিনিউ করতে পারছি না। ফলে ‘বালাম অ্যান্ড লেগাসি’ নামে নতুন ব্যান্ড করেছি। এটি এলআরবি’র নাম বদল নয়।”

তিনি জানান, এলআরবির সদস্যরা নতুন এ ব্যান্ডে ভিড়েছেন বলে ভক্তরা ধরে নিয়েছেন এলআরবি’র নাম পরিবর্তন হয়েছে।