উদ্ভূত জটিলতা নিয়ে বুধবার বৈঠকের পর কেবল অপারেটরদের এই সংগঠনটি বলেছে, এ নিয়ে তারা তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
বাংলাদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলের পরিবেশক (ডিস্ট্রিবিউটর) নেশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেডের কর্ণধার আফসার খায়ের মিঠুও অপারেটরদের এই বৈঠকে ছিলেন।
মঙ্গলবার আকস্মিকভাবে বাংলাদেশে জি সিনেমা, জি অ্যাকশন, জি বাংলার মতো জি নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলো সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।
এই চ্যানেলগুলোর ডিস্ট্রিবিউটর নেশনওয়াইড মিডিয়া হলেও তাদের কাছ থেকে লিংক নিয়ে আরেক পরিবেশক জাদু ভিশনও তাদের গ্রাহকদের (কেবল অপারেটর) মাধ্যমে দর্শকদের এগুলো দেখিয়ে আসছে।
জি নেটওয়ার্ক বন্ধের পর টিভির পর্দায় পরিবেশক প্রতিষ্ঠান যাদু মিডিয়া ভিশন ঘোষণা দেয় যে ‘সরকারের নির্দেশে’ এই পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।
কিন্তু তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কোনো চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার খবর নাকচ করে দিলে বুধবার জি নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলো খুলে দেওয়া হয়।
সরকার টিভি চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ না দিলেও বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের বিষয়ে একটি নোটিস দিয়েছিল, তাতেই এই বিপত্তি ঘটে বলে কোয়াব নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইনের ১৯(১৩) ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশি কোনো চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্প্রচার বা সঞ্চালন করা যাবে না।
যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের আগে সেসব দেশের পরিবেশকরা বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন ছেঁটে শুধু অনুষ্ঠান প্রচার করে।
কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছিল না বলে দেশি প্রতিষ্ঠান বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় দেশি চ্যানেলগুলো যেমন বিজ্ঞাপন হারাচ্ছে, তেমনি সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
এই পরিস্থিতিতে ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ডাউনলিংক করা বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় নেশনওয়াইড মিডিয়া ও জাদু ভিশনকে সোমবার কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়।
ওই নোটিস পাওয়ার পরই জি নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।
তবে এরপর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “সরকার কোনো চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করেনি। আমরা নোটিস দিয়েছি, বিজ্ঞাপন ছাড়া যেন দেখানো হয়। নোটিসের জবাব পাওয়ার প্রেক্ষিতে আমাদের সিদ্ধান্ত হবে।”
মন্ত্রীর কথার পর পরিবেশকদের নিয়ে বুধবার বিকালে ঢাকার বাংলামোটরে নিজেদের কার্যালয়ে বৈঠকে বসে অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব), যাদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে দর্শকরা চ্যানেলগুলো দেখে আসছেন।
বৈঠকের পর কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কেবল অপারেটররা মূলত প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞাপন ছেঁটে ফেলে শুধু অনুষ্ঠান সম্প্রচারের প্রযুক্তি না থাকায় বাধ্য হয়ে পরিবেশকরা টিভি চ্যানেলের সম্প্রচারই বন্ধ করেছিল।
বৈঠকে থাকা পরিবেশক প্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে এ কোয়াব নেতা বলেন, “বিদেশি বিজ্ঞাপন বন্ধ করা জন্য শোকজ করেছে, ফলে বাধ্য হয়ে তারা চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে।”
বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের পরিবেশকরা কেন বিজ্ঞাপন বাদ দিতে পারছেন না-এ প্রশ্নের উত্তরে সাইফুল বলেন, এদেশে পরিবেশকদের প্রযুক্তি এখনও সেই পর্যায়ে পৌঁছেনি।
“এর জন্য আগে আমাদের টেকনোলজি ডেভলপ করতে হবে। আমরা অ্যানালগ সিস্টেমে আছি, সিস্টেমটা ডিজিটাল হয়ে গেলে এটা সম্ভব।”
ততদিন কোনো চ্যানেল বন্ধ রাখার পক্ষপাতিও নন কোয়াবের এই নেতা। তিনি বলেন, “মাথা ব্যথা হলে তা না কেটে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে, প্রযুক্তির উন্নয়ন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
ওই প্রযুক্তি পাওয়ার আগে করণীয় ঠিক করতে শিগগিরই তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চান বলে জানিয়েছেন কোয়াবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শোকজের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকরা সরকারের কাছ থেকে সময় চেয়েছে।”
বেঙ্গল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নেশনওয়াইড মিডিয়া ১৯৯৮ সাল থেকে দেশে পরিবেশক হিসেবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। জি নেটওয়ার্ক, সনি, স্টার স্পোর্টসের একমাত্র পরিবেশক এ প্রতিষ্ঠান।
আরেক পরিবেশক প্রতিষ্ঠান জাদু ভিশন স্টার জলসাসহ অন্যান্য চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে পরিবেশন করে। জাদু ভিশনের মালিকানা ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রয়াত আনিসুল হকের ছেলে নাভিদুল হকের।
কোয়াব নেতা সাইফুল বলেছেন, কেবল অপারেটরদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই জি নেটওয়ার্কের চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছিল পরিবেশকরা।
“আমাদের মতামত ছাড়া তারা কেন এটা করল, সেটাও বোধগম্য নয়। বন্ধের পর জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাহকদের একটা চাপ আছে, বিভিন্ন মাধ্যমে চাপের কারণে ব্রডকাস্টারা আবার চালু করেছে।”
কী বলছেন পরিবেশকরা?
জি নেটওয়ার্ক বন্ধের কারণ জানতে চাইলে নেশনওয়াইড মিডিয়ার কর্ণধার আফসার খায়ের মিঠু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এর আগেও তো একাধিকবার চ্যানেল বন্ধ হয়েছে। এবার এত হাঙ্গামা কেন? বুঝছি না।।”
বিষয়টির সুরাহার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, “অ্যাটকোসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বসে সবাই মিলে সমন্বয় করতে হবে। বিজ্ঞাপনের রেভিনিউ নষ্টের জন্য আমি ব্যবসা করছি না।”
বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার তো বেআইনি- বিষয়টি জানানো হলে আফসার বলেন, “আইন বহির্ভূতভাবে করছিও না। সবাইকে ঠিক করার জন্য সময় দরকার।”
“২০০৪ সালের আইন ২০১৯ সালে এসে চাপ দিচ্ছে কেন? আগে করেনি কেন?” এই প্রশ্নও ছোড়েন তিনি।
এ বিষয়ে জাদু ভিশনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।