‘ভালা লইয়া থাইকো’র মালিকানা টিটু পাগলের

‘আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকো’ গানের মূল সুরকার ও গীতিকার টিটু পাগল হলেও মাহবুব শাহ নামে আরেক বাউল শিল্পী বছরখানেক ধরে গানটির মালিকানা দাবি করে আসছিলেন; সম্প্রতি কপিরাইট অফিস টিটু পাগলের পক্ষে রায় দিয়েছে।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2019, 04:53 PM
Updated : 28 March 2019, 05:59 PM

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঈগল মিউজিকের ব্যানারে প্রকাশিত এ গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে মাহবুব শাহ’র নাম জুড়ে দেওয়া হয়। এতে কণ্ঠ দেন তরুণ সংগীতশিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বি।

টিটুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আমলে নিয়ে বাদী টিটু পাগল ও বিবাদী মাহবুব শাহ, কামরুজ্জামান রাব্বি ও ঈগল মিউজের কর্ণধার কচি আহমেদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে এ রায় দেয় কপিরাইট অফিস।

শিগগিরই গানের স্বত্ব সনদ টিটু পাগলকে দেওয়া হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।

টিটু পাগল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিজের গানের মালিকানার জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হলো। রায় আমার পক্ষে এসেছে এটাই আমার কাছে অনেক ভালোলাগার। মাহবুব শাহ গানটি নিয়ে প্রতারণা করেছেন। তার শাস্তি দাবি করছি।”

বছর সাতেক আগে গানটি লিখেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান বিক্রম পুরের এ বাউলশিল্পী।

তিনি জানান, ২০১২ সালের দিকে বিক্রমপুরের চানমস্তানের মাজারে প্রথম গানটি পরিবেশন করেন। গানটি লিখেছেন চানমস্তানকে নিয়ে। এক অনুষ্ঠানে তার গানটি শুনে ভালো লাগে মাহবুব শাহর। মাহবুব তাকে শ্রীনগরে গানটি পরিবেশনের আমন্ত্রণ জানায়। একমঞ্চে গানটি পরিবেশন করেন দুইজন। বছর খানেক আগে গানের দুই তিনটি শব্দ এদিক-ওদিক পরে নিজের নামে গানটি ছেড়ে দিয়েছেন মাহবুব।

“বিষয়টি জানতে তার বাসায় গেলে তিনি আমার উপর চড়াও হন। হাতাহাতিও হয়। উপায় না দেখে কপিরাইট অফিসের দ্বারস্থ হয়েছি।”

কপিরাইট অফিসের রায়ে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি ডাকা শুনানীতে আবেদনকারী উপস্থিত থাকলেও প্রতিপক্ষ মাহবুব শাহ ও কামরুজ্জামান রাব্বি অনুপস্থিত থাকেন। তাদের পক্ষে ঈগল মিউজিকের পক্ষে কচি আহমেদ ও সারোয়ার শুভ উপস্থিত ছিলেন। 

কচি আহমেদ জানান, মাহবুব শাহ গানের গীতিকার ও সুরকার দাবি করায় ঈগল মিউজিকের ব্যানারে গানটি প্রকাশ করা হয়। তিনি সময় প্রার্থনা করলে ২৫ ফেব্রুয়ারি শুনানীর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়। শুনানীতে বাদী টিটু পাগল ও বিবাদী পক্ষে কামরুজ্জামান রাব্বি উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মূল বিবাদী মাহবুব শাহ অনুপস্থিত থাকেন।

বাদী টিটু পাগল তার বক্তব্যে বলেন যে, তিনি বিবাদীর অনেক আগে থেকেই প্রায় ৬ বছর ধরে এ গানটি মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশন করছেন। এছাড়া তার গানটি শিল্পী অবিনাশ বাউল তার অনুমতি নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবেশন করেছেন। সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দাখিল করেন।

বিবাদী কামরুজ্জামান রাব্বি জানান, এ গানটি লিখেছেন মাহবুব শাহ। মাহবুব শাহের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এ গানটি গেয়েছেন। তিনি বক্তব্যের স্বপক্ষে মাহবুব শাহ ও আনন্দ যাত্রা লিঃ-এর সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তিনামার ফটোকপি দাখিল করেন।

চুক্তিনামাটি আনরেজিস্ট্রার্ড ও নোটারি পাবলিক দ্বারা সত্যায়িত নয়। এতে মাহবুব শাহকে গীতিকার, সুরকার ও সম্পাদনকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে কপিরাইট অফিস জানিয়েছে, সাধারনত একটি গানের গীত রচনার জন্য গীতিকার ও সুর সংযোজনের জন্য সুরকার কপিরাইট স্বত্ব পেয়ে থাকেন। কন্ঠশিল্পী পারফরমার বা সম্পাদনকারী হিসেবে রিলেটেড রাইট পেয়ে থাকেন। কিন্তু মাহবুব শাহ এখানে গানটির কন্ঠশিল্পী বা গায়ক নন। গায়ক কামরুজ্জামান রাব্বি। তাই প্রশ্ন উঠছে এখানে মাহবুব শাহ কি সম্পাদনা করেছেন? গানের কথা না সুর? বিষয়টি বিবাদী পক্ষ পরিষ্কার করতে পারেননি।

বিবাদীর দাখিলকৃত চুক্তিনামাটি সম্পাদনের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। অন্যদিকে বাদীর পক্ষে গায়ক অবিনাশ বাউল ফেসবুকে ‘আমরাতো ভালা না ভালা লইয়া থাকো’ শিরোনামে ৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেন, “গানটি সংগ্রহ করেন এক গান পাগল মাটির মানুষ টিটু পাগলের কাছ থেকে যার কথা ও সুর তার নিজের।”

কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, “উপস্থাপিত তথ্য পর্যালোচনায় প্রমাণ হয়, গানটি বিবাদীর (মাহবুব শাহ) প্রকাশের আগেই অবিনাশ বাউল পরিবেশন করেছেন যাতে গীতিকার ও সুরকার হিসেবে বাদীর (টিটু পাগল) নাম উল্লেখ রয়েছে।

এ অবস্থায় গীতিকার ও সুরকার হিসেবে আবেদনকারী টিটু পাগলের আবেদন মঞ্জুর করা হলো।”

বিষয়টি নিয়ে মাহবুব শাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।