প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি

জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ (এফএফএসবি)।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2019, 03:46 PM
Updated : 25 March 2019, 03:46 PM

জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি পুনঃউচ্চারণ করতে সোমবার বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশের সকল চলচ্চিত্র সংসদসমূহের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন এফএফএসবি।

সংবাদ সম্মেলনে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ আগামী ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদানের ঘোষণা দেয়। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বর্তমানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির ঘটমান পরিস্থিতির বিষয়ে এফএফএসবি’ র পর্যবেক্ষণ ও অবস্থান তুলে ধরা হয়।

এফএফএসবি’ র সভাপতি স্থপতি লাইলুন নাহার স্বেমির সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেষ্ঠ্য চলচ্চিত্র সংসদকর্মী সিরাজুল ইসলাম খান, চলচ্চিত্রকার প্রসূন রহমান, চলচ্চিত্রকার রাজীবুল হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে  এফএফএসবি’ র  এর লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়াত হোসেন মামুন।

‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবির পাশাপাশি ফেডারেশনের লিখিত প্রস্তাবনায় দেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক সকল নীতিনির্ধারণী জাতীয় কমিটিতে এফএফএসবি এর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও দেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে দেশের সকল চলচ্চিত্র সংসদকে বাৎসরিক আর্থিক অনুদান ও পৃষ্ঠপোষকতা করার আহবানও জানানো হয়।  এফএফএসবি’র নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মলনে চলচ্চিত্রকে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে ‘সংস্কৃতি’ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

লিখিত বক্তব্যে এফএফএসবি মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে এবং বিশ্বচলচ্চিত্রের সাথে দেশীয় চলচ্চিত্রের মেলবন্ধনে জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের বিকল্প নেই। জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র হবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মুক্ত, স্বাধীন চলচ্চিত্র-সংস্কৃতিচর্চার অবাধ স্পেস। আমরা এমন একটি স্পেস বা পরিসর গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি যেখানে চলচ্চিত্রকে বিশ্বসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদানরূপে জানতে, বুঝতে এবং চর্চা করতে উৎসাহ প্রদান করা হবে। আমরা ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে এমন একটি পরিসর গড়ে তোলার দাবি জানাচ্ছি যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সকল মানুষের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রূপে বিবেচিত হবে।”

এর আগে ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা ভবনের সেমিনার কক্ষে  উদ্যোগে এবং সারাদেশের সকল চলচ্চিত্র সংসদ, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনসমূহ একত্রিত হয়ে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তৎকালিন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন।

এছাড়া চলতিবছর ১৯ মার্চ এফএফএসবি’ র একটি প্রতিনিধি দল বর্তমান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছেও  ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ এর খসড়া রূপরেখা তুলে দেন। 

“দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই দাবিটি নিয়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার, লেখালেখি, আলোচনা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আমাদের প্রস্তাবটি লিখিতভাবে জানানোর পরেও তেমন কোনো উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর না হওয়াতে আমরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা মনে করি, একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই পারেন এ বিষয়ে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করতে।”-বলেন এফএফএসবি’ র মুখপাত্র বেলায়াত হোসেন মামুন।

সভায় ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার জন্য এফএফএসবি প্রণীত খসড়া রূপরেখা সংযুক্ত করে একটি বিশেষ স্মারকলিপিটি আগামী ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে প্রদানের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “বিগত দিনগুলোতে চলচ্চিত্রের সার্বিক বিকাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যা বাংলাদেশ আগামীতে অনুভব করবে। আমরা বিশ্বাস করি, চলচ্চিত্রকে ‘সংস্কৃতি’ হিসেবে বিবেচনা করে সামাজিক স্তরে চলচ্চিত্রের শৈল্পিক বিকাশ ও সৃজনশীল উদ্যম প্রসারে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠায় তিনি আমাদের চাওয়াকে আমলে নেবেন এবং জাতীয় জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।”

বক্তারা জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের চলচ্চিত্র বিষয়ক সকল নীতি নির্ধারণী কার্যক্রমে তথা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ড কমিটি, চলচ্চিত্র অনুদান প্রদানের দুটি কমিটি (স্বল্পদৈর্ঘ্য এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জুরি কমিটি, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ পরিচালনা পরিষদ, জাতীয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী কমিটিতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জাননো হবে।

এছাড়াও দেশব্যাপি পরিচালিত চলচ্চিত্র সংসদ কার্যক্রমকে ‘সাংস্কৃতিক কার্যক্রম’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দেশের সকল চলচ্চিত্র সংসদকে নিয়মিত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করার দাবিও অন্তর্ভুক্ত হবে তাদের স্বারকলিপিতে।