কলকাতায় বিটিভির সম্প্রচার ‘সুদূরপরাহত’

কলকাতায় শিগগিরই বাংলাদেশ টেলিভিশন সম্প্রচারের কথা তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানালেও তা খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2019, 11:38 AM
Updated : 25 Feb 2019, 11:38 AM

ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ে ই মেইল পাঠানো হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের মহাপরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

তিনি বলেন, এখনও ভারতের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাদের তরফ থেকে থেকে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র পেলেই যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করব।

তবে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পেলেই বিটিভি কলকাতায় সম্প্রচার শুরু করতে পারবে না বলে মনে করছেন কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার পারভেজ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, “কলকাতার কেবল অপারেটররা যদি বিটিভি ডাউনলোড না করে, তাহলে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষেও কলকাতায় বিটিভি চালানো সম্ভবপর নয়।”

ফলে ছাড়পত্র পেলেও কলকাতায় বিটিভির সম্প্রচারের বিষয়টি পুরোপুরিই নির্ভর করছে ওই দেশের কেবল অপারেটরদের উপর।

সেক্ষেত্রে বিটিভির সম্প্রচার বাধ্যতামূলক করে ভারত সরকার নির্দেশ দিলেই পথ খুলতে পারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত টিভি চ্যানেলটির।

“নইলে ছাড়পত্র কিংবা সমঝোতা চুক্তি শুধু কাগজেই থাকবে; বাস্তবায়ন কঠিন হবে,” বলেন আনোয়ার পারভেজ।

ছবি: ফেইসবুক ও বিটিভির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

ভারত বিটিভির সম্প্রচার বাধ্যতামূলক করবে কি না তা নিয়েও সংশয়ী সংশ্লিষ্টরা।

কারণ ভারতের একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘দূরদর্শন’ ছাড়া দেশটির অন্য কোনো টিভি চ্যানেল সম্প্রচারে কেবল অপারেটরদের বাধ্যবাধকতা নেই।

আনোয়ার পারভেজ বলেন, “ভারতের কেবল অপারেটররা যথেষ্ট স্বাধীন। দূরদর্শনের টিভি চ্যানেল ‘ডিডি বাংলা’ ছাড়া আর কোনো চ্যানেল বাধ্য হয়ে চালায় না কলকাতার কেবল অপারেটররা। দেশের বাকি চ্যানেলগুলোর ব্যাপারে অপারেটররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু বাংলাদেশের কেবল অপারেটররা দেশের সব চ্যানেল সম্প্রচারে বাধ্য থাকে।”

কলকাতার কেবল অপারেটররা কতটা আগ্রহী?

কলকাতার কেবল অপারেটরদের উপর যখন বিটিভির সম্প্রচার নির্ভর করছে, তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে কলকাতার শীর্ষস্থানীয় একজন কেবল অপারেটরের সঙ্গে কথা বলা হয়।

পাওয়ান জাজোদিয়া নামে সেই কেবল অপারেটর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নিজেদের আগ্রহ-অনাগ্রহ নয়, বরং তারা দর্শকের আগ্রহের উপর নির্ভর করে বাইরের টিভি চ্যানেলগুলো ডাউনলোড করেন। দর্শক আগ্রহ দেখালেই শুধু বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল ডাউনলোড করবেন তারা।

তাহলে বাধা কোথায়?

বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল কলকাতায় সম্প্রচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা-তদবির চলেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই আলোর মুখ দেখেনি।

২০০২ সালে কলকাতায় একটি ক্যাবল টিভি শো’তে অংশ নিয়ে ক্যাবল অপারেটরদের নেতা আনোয়ার পারভেজ বিষয়টি আলোচনায় তুলেছিলেন। পরবর্তীতে আরও দু’চারবার আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।

সরকার কিংবা টিভি মালিকদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতাও পাননি বলে জানান কেবল টিভি অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এ শীর্ষব্যক্তি।

বছর চারেক আগে বৈশাখী টিভি, এটিএন বাংলাসহ তিন-চারটি টিভি চ্যানেল কলকাতার চালানো হয়েছিল। কিন্তু অজানা কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় কলকাতায় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়।

ছবি: ফেইসবুক ও বিটিভির ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া।

“তারা হয়ত ফিল করেছে আমাদের চ্যানেল তাদের মার্কেটে প্রয়োজন নেই,” বলেন বাংলাদেশের এক কেবল অপারেটর।

পৃথিবীর সব দেশেই বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল দেখা গেলেও শুধু ভারতেই দেখা যায় না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন তিনি।

“কানাডায় গিয়েও বাংলাদেশি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি কিন্তু ইন্ডিয়ায় দেখতে পাচ্ছি না। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।”

আরেক কেবল অপারেটর বলেন, একসময় আয়োময়, সংশপ্তক নাটক দেখার জন্য কলকাতার দর্শকরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন। কিন্তু এখন আমাদের অনেক চ্যানেল আছে, কিন্তু দুই-চার চ্যানেল ছাড়া কোনোটিই মনে দাগ কাটতে পারে না। দেশের চ্যানেলে কনটেন্টের দুর্বলতার কারণে কলকাতার দর্শকদের টানতে ব্যর্থ হচ্ছে।

তবে আসাম-ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু বাংলাদেশি চ্যানেল প্রচার করা হয় বলে জানান তিনি।

ভারতের কেবল অপারেটরদের আকাশ ছোঁয়া লাইসেন্স ফি দাবি করাকেও বাধা হিসেবে দেখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ভারতীয় টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচারে ২ লাখ টাকা নেওয়া হলেও ওই দেশটির কেবল অপারেটররা বাংলাদেশে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেছেন।

কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এখানকার কেবল অপারেটররা প্রতি চ্যানেলে পাঁচ কোটি টাকা চাইছে অথচ আমরা ভারতীয় চ্যানেলগুলো থেকে মাত্র দুই লাখ টাকা নেই।… আপনাদের মাধ্যমে এখানকার কেবল অপারেটরদের বলতে চাই, টাকার অঙ্কটা কমান, তাহলেই বেসরকারি চ্যানেলগুলো আসতে পারবে।”