গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে থাকা এ প্রযোজকের কোনও খোঁজ দিতে পারেনি জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্মকর্তারা।
ওই মামলায় ভাই ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ কাদেরকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই আত্মগোপনে আছেন আব্দুল আজিজ। তার একাধিক মোবাইল নম্বরে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়; হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার এক কর্মকর্তা সোমবার বিকেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজিজ স্যারের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই।”
তিনি এখন দেশে আছেন কি না জানতে চাইলে সেই কর্মকর্তা বলেন, “আমি জানি না, উনি কোথায় আছেন। আমার কাছে তার কোনও আপডেট নেই।”
ওই কর্মকর্তাও বলেন, “উনি কোথায় আছেন, আমিও বলতে পারছি না। বসের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার কথা হয়েছিল। তারপর আর কোনো কথা হয়নি।”
দেশের শীর্ষস্থানীয় এ প্রযোজক লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়ায় ফেইসবুকে অনেকে বলছেন, আব্দুল আজিজ দেশের বাইরে উড়াল দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে এমএ কাদের ও তার ভাই আব্দুল আজিজসহ ক্রিসেন্ট গ্রুপ সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি ১৩ জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্রিসেন্ট গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি বিলের বিপরীতে জনতা ব্যাংক থেকে নেওয়া অর্থের মধ্যে ৯১৯ কোটি ৫৬ লাখ দেশে ফেরত আসেনি।
এর মধ্যে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ৪২২.৪৬ কোটি টাকা, আবদুল আজিজের রিমেক্স ফুটওয়্যার ৪৮১.২৬ কোটি টাকা ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ ১৫.৮৪ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৯১৯.৫৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাব্যবস্থাপক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মুদ্রাপাচারের প্রমাণ পেয়ে ক্রিসেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ কাদের, রিমেক্স ফুটওয়্যারের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিটুল জাহান (মিরা), ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস ও ক্রিসেন্ট ট্যানারিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুলতানা বেগম মনিসহ জনতা ব্যাংকের ১৩ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়।
আসামিদের মধ্যে এম কাদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকি আসামিদেরও খোঁজে মাঠে নেমেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা।
খোকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে তিনি অবকাশযাপনে কানাডায় অবস্থান করছেন। কবে ফিরবেন-তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
২০১২ সালে জাজ মাল্টিমিডিয়ার দায়িত্ব নেন আব্দুল আজিজ। জাজের হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র ডিজিটাল চলচ্চিত্রের যুগে প্রবেশ করে। ঝকঝকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে শুরুর দিকে দর্শকদের প্রশংসা কুড়ালেও যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে তোপের মুখে পড়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটি। প্রেক্ষাগৃহগুলোতে এককভাবে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অভিযোগও আছে জাজের বিরুদ্ধে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তি মামলার মুখে পড়ায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার ভবিষ্যত কী? আজিজের বিরুদ্ধে মামলার পরপরই আলিমুল্লাহ খোকনের একটি স্ট্যাটাস আলোচনার খোরাক জুগিয়েছেন ফেইসবুকে।
২ ফেব্রুয়ারি এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে খোকন লেখেন, “চলচ্চিত্রের স্বার্থে জাজ নতুন ঘোষণা দিতে যাচ্ছে শিগগিরই।”
কমেন্টে অনেকে শুভকামনা জানালেও কেউ কেউ জাজ মাল্টিমিডিয়া বন্ধ হওয়ার শঙ্কার কথাও বলেছেন। একজন কমেন্টে লিখেছেন, “জাজকে কখনও বন্ধ হতে দেখতে চাই না। আপনার এগিয়ে যান।”