শিল্পকলা একাডেমি, ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি ও বাংলাদেশ ফিল্ম স্কুলের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘আলমগীর কবির স্মরণ ও আলমগীর স্মৃতি বক্তৃতা’ এবং আলমগীর কবির নির্মিত চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী।
রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আলমগীর কবির স্মরণে আলোচনা করেন চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম এবং তার স্মৃতি বক্তৃতা প্রদান করেন নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল। স্মরণ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন।
স্মরণ আলোচনা শেষে আলমগীর কবির নির্মিত চলচ্চিত্র ‘রূপালী সৈকতে’ প্রদর্শিত হয়।
আলমগীর স্মৃতি বক্তৃতার বক্তা চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল আলমগীর কবিরের জীবন ও কর্ম বিশ্লেষণ করেন। তিনি আলমগীর কবির নির্মিত সবগুলো চলচ্চিত্র, তার লেখা চলচ্চিত্রগ্রন্থ এবং আলমগীর কবিরের কর্মময় জীবনের বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন করেন।
তানভীর মোকাম্মেল বলেন, “আলমগীর কবিরকে পাঠ না করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে পাঠ করা যাবে না। কারণ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যা কিছু নিরীক্ষা, চিন্তার নতুন দিগন্ত তা আলমগীর কবিরের দেখানো পথেই চলেছে। আলমগীর কবির শতভাগ অসাম্প্রদায়িক ও আন্তর্জাতিক মানুষ ছিলেন। আমাদের দেশে শতভাগ অসাম্প্রদায়িক মানুষ পাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। আলমগীর কবির মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তাঁর লড়াইয়ের ক্ষেত্রটি কখনও চলচ্চিত্র, কখনও সাংবাদিকতা, কখনও যুদ্ধে, কখনও সাংগঠনিক গুরুভার বহনের মধ্য দিয়ে বহমান ছিল। একাধারে এতটা ক্ষুরধার ব্যক্তিত্ব এবং কর্মমুখর মানুষ ইতিহাসে খুব বিরল। বিশ্বচলচ্চিত্রের সাথে আলমগীর কবিরের যে বোঝাপড়া, চলচ্চিত্রের ভাষার উপর তাঁর যে দখল তা অতুলনীয় ছিল। আমি, প্রয়াত বন্ধু তারেক মাসুদ ও মোরশেদুল ইসলাম যদি জীবনে কিছু করে থাকি তা কবির ভাইয়ের কাছ থেকেই শেখা এবং দীক্ষার ফল।”
এছাড়া স্মরণ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আলমগীর কবিরের প্রয়াণের ৩০ বছর উপলক্ষে গত ১৮-১৯ জানুয়ারি দুই দিনব্যাপি ‘আলমগীর কবিরের চলচ্চিত্র ও চিন্তা অধ্যয়ন” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় পাঠদান করেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক মাহমুদুল হোসেন। কর্মশালা সমন্বয় করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন।
চলচ্চিত্রকার, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, লেখক ও মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর কবির। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংস্কৃতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি দূর্ঘটনায় আলমগীর কবির প্রয়াত হন। বাংলাদেশে অন্যধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের নেতৃত্বদান করা ছাড়াও আলমগীর কবির নেতৃত্ব দিয়েছেন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে, নেতৃত্ব দিয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচনা ও চলচ্চিত্র গবেষণার মননশীল আন্দোলনে। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিক্ষার প্রসারে আলমগীর কবিরই প্রথপ্রদর্শক ছিলেন। আলমগীর কবিরকে ঘিরেই শুরু হয় বাংলাদেশেন বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের বাতাবরণ।