আমার একাকিত্ব ভালো লাগে: নোবেল

কলকাতার সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা’য় কণ্ঠের দ্যুতি ছড়িয়ে আলোচনায় এসেছেন তরুণ সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেল। শুটিংয়ের বিরতিতে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরেই গ্লিটজের সঙ্গে আড্ডা দিলেন তিনি। আলাপচারিতায় উঠে এলো, সারেগামাপা’য় গ্রুমিংয়ের অভিজ্ঞতা, সংগীত নিয়ে তার ভালোলাগা-মন্দলাগা, সংগীতে তার জীবন-যাপন ও নিজের ব্যান্ড ‘নোবেলম্যান’ নিয়ে পরিকল্পনার কথা।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Jan 2019, 11:20 AM
Updated : 21 Jan 2019, 02:57 PM

গ্লিটজ: ‘সারেগামাপা’য় অংশ নিয়েই রাতারাতি তারকা বনে গেলেন; এই তারকাখ্যাতি কীভাবে যাপন করছেন?

নোবেল: আমার নিজের আসলে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগেও যেমন ছিলাম এখনো তেমন আছি। আমি আগে যে খারাপ গাইতাম- তা তো না। তবে আমাকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিটা পরিবর্তন হয়েছে মানুষের।

তবে আমাকে ঘিরে চারপাশে উচ্ছ্বাস দেখলে ভালোই লাগে। কিন্তু আমি যেহেতু মিউজিক করি, গান লিখি, কম্পোজ করার চেষ্টা করি-সে হিসেবে বলি, আমার একাকিত্ব ভালো লাগে।

প্রত্যেকটা বিষয়ের ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। মানুষ তো মিউজিক করে খ্যাতির জন্যই। কে কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারল সেটাই অনেকের কাছে দেখার বিষয়।

গ্লিটজ: রিয়েলিটি শো’টির গ্রুমিংয়ে অংশ নিয়ে নিজের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখছেন?

নোবেল: ওই রকম কোনো পার্থক্য পাচ্ছি না। দেশে থাকতেও যেমন দিন-রাত প্র্যাকটিস করতাম; ওখানে দিন-রাত প্র্যাকটিস করছি। ঢাকায় যে ধরনের মিউজিক করেছি এখানেও তেমনই করছি। ‘সারেগামাপা’য় আমি তো ক্লাসিক্যাল মিউজিক করছি না; ফলে তেমন পার্থক্য দেখছি না।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া।

গ্লিটজ: ‘সারেগামাপা’র এতদিনের গ্রুমিংয়ে কী শিখলেন?

নোবেল: পাঙ্কচুয়ালিটি; আমি বলব, ৫ ভাগ হলেও উন্নতি হয়েছে। ঢাকায় থাকতে আমি পাঙ্কচুয়েলিটি মেইনটেইন করতে পারতাম না। তার কিছুটা হয়তো উন্নতি হয়েছে। আমার সমস্যা হলো, প্রেশারে রাখলে গান গাইতে পারি না। গান আমার মুডের উপর নির্ভর করে। যদি রাত ২টায় গাইতে ইচ্ছা করে তাহলে ২টায় গাই।

গ্লিটজ: বিচারকদের সঙ্গে আপনার অনস্ক্রিন রসায়ন তো টিভির পর্দায় দর্শক দেখেই; তাদের সঙ্গে আপনার অফস্ক্রিন রসায়নটা কেমন?

নোবেল: সবার সঙ্গেই আমার সম্পর্ক ভালো। গান কম্পোজে আমার আগ্রহ দেখে শান্তনু মৈত্র আমাকে বলেছেন, ‘সারেগামাপা শেষ হলে বড় বড় কম্পোজারদের কাছ থেকে দীক্ষা নিতে পারো। দখলটা আরো বেড়ে যাবে।’ উনার পরামর্শটা ভালো লেগেছে আমার।

মোনালী ঠাকুর আমার গান খুব পছন্দ করেন। অফস্ক্রিনে আমার সঙ্গে ফ্যানের মতো রিঅ্যাকশন করেন।

শ্রীকান্ত আচার্য বুকে জড়িয়ে ধরেন। অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় আমাকে একটু বেশিই পছন্দ করেন তিনি। উনি ভারী গলায় যে ধরনের মিউজিক করেন আমার মধ্যে হয়তো সিমিলারিটি দেখতে পান।

গ্লিটজ: কিন্তু ফেইসবুকে আপনার ভক্তরা অভিযোগ করেন, ঢাকার একটি রিয়েলিটি শো’তে আপনাকে যথোপযুক্ত মূল্যায়ন করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

নোবেল: ‘নেক্সট টিউবার’; সেটি কোনো গানের রিয়েলিটি শো ছিল না। আমার মনে হয়, ওখানে আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হয়েছে। আমি সেখানে গায়ক হিসেবে নয়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে প্রতিযোগিতা করেছিলাম। আমার নিজের ইউটিউব চ্যানেল না থাকার পরও তারা আমার ভিডিও দেখে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেন।

ওই শো’র মধ্যে আমার ইউটিউব চ্যানেলটা বিল্ডআপ করতে পেরেছি। শো’টাকে আমি রেসপেপ্ট করি। সেখানকার বিচারকদের মধ্যে তামিম ভাই আমার খুব ক্লোজ, সালমান মুক্তাদির ভাই খুব সহায়তা করেছেন। ওখানে যারা ছিলেন সবার সঙ্গেই আমার ভালো সম্পর্ক।

ভক্তরা যদি অভিযোগ করেন তাহলে সেটা নিজেদের আবেগ থেকে করছেন; ‘নেক্সট টিউবার’র কারো প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া।

গ্লিটজ: দশ বছর আগে ফিরি; ২০০৯ সালে আপনার সংগীত জগতের বিস্তৃতি কেমন ছিল?

নোবেল: তখন আমি গোপালগঞ্জে ছিলাম। একদম আলাদা ছিলাম তখন। ইউটিউব, ব্রডব্যান্ডের সুবিধা না থাকায় গান শুনতে পারতাম না। এখনকার মতো মিউজিক লাভারও ছিলাম না। ২০১১ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ায় গান শোনার নেশাটা খুব করে চাপে। এখন তো রাতে গান না শুনলে ঘুমই আসে না।

গ্লিটজ: সেখান থেকে এই অবস্থানে আসতে কী ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে আপনাকে?

নোবেল: আমার জীবনে কোনো স্ট্রাগল ছিল না। যদি স্ট্রাগলের অভিযোগ করি, তাহলে সেটি খুব ক্ষুদ্র হবে। সামনে ছোটখাট যে স্ট্রাগল এসেছে সেটা হ্যান্ডেল করেছি। বাবা বলতেন, পড়ালেখায় মনোযোগ দাও; ওতটুকুই। স্ট্রাগল মানে, আমার টাকা পয়সার কোনো সমস্যা ছিল না; আবার প্রেমিকাও চলে যায়নি।

গ্লিটজ: ‘সংগীত’ আপনার আছে কী?

নোবেল: ভাতের মতো। ভাত না খেলে যেমন ক্ষুধা মেটে না গান গাওয়াও আমার কাছে তেমনই গুরুত্বপূর্ণ। গাওয়ার চেয়ে গান বেশি শুনি; ৬০ ভাগ গান শুনতে হবে আর ৪০ ভাগ গাইতে হবে। ভালো গায়ক হওয়ার জন্য ভালো শ্রোতা হওয়াটা জরুরি।

গ্লিটজ: সংগীতে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন কার কাছ থেকে?

নোবেল: গান গাওয়ার ক্ষেত্রে আজম খান, আইয়ুব বাচ্চু, হাসান। আর গান লেখার ক্ষেত্রে প্রিন্স মাহমুদকে অনুসরণ করি; যদিও পারি না তবে চেষ্টা করি। আর বাইরে জিম মরিসন, পিঙ্ক ফ্লয়েড, নির্ভানাসহ আরো বেশ কয়েকজন শিল্পী ও ব্যান্ডের গান ভালো লাগে; শুনি।

গ্লিটজ: আপনি নাকি বাউন্ডুলে জীবনযাপন করেন; এর পেছনে জেমস কিংবা জিম মরিসনের জীবনযাপনের কোনো প্রভাব আছে?

নোবেল: এই ধরনের লাইফস্টাইল আমার ভালো লাগে। জিম মরিসনকে দেখে এই ধরনের লাইফস্টাইলে যে আগ্রহী হয়েছি-তা না। তবে তার পার্সোনালিটির সঙ্গে নিজের অনেকটা মিল পাই। জিম মরিসনের ব্যক্তিত্ব, জীবনযাপন আমার ভালো লাগে।

উনাদের মতো ব্যক্তিকে আদর্শ হিসেবে সামনে পেলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই ট্রাকে থাকা যায়; মানে কাজটা সহজ হয়। উনাদের সামনে পেলে মনে হয়, আমি রাইট ট্রাকেই আছি।

গ্লিটজ: একটি ব্যান্ড গঠনের কথা বলেছিলেন; কাজটা কতদূর এগোলো?

নোবেল: ব্যান্ডের নাম ঠিক করেছি, ‘নোবেলম্যান’। লাইনআপে ভোকালিস্ট হিসেবে থাকছি আমি, গিটারিস্ট জাহিন রশিদ, বেইজিস্ট সঞ্জয়, কি-বোর্ডিস্ট স্টিফেন, ড্রামসে শিশির। ব্যান্ডের রিহার্সেল চলছে। সবকিছু গুছিয়ে এপ্রিলের শেষে নাগাদ ব্যান্ডের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেব।

সলো আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে সামনে নিয়ে ব্যান্ডে কাজ করব-এমন কোনো ইচ্ছা আমার নেই। ব্যান্ড হিসেবেই এগিয়ে যেতে চাই আমরা।

ছবি: ফেইসবুক থেকে নেওয়া।

গ্লিটজ: ব্যান্ডের নাম ‘নোবেলম্যান’ কেন?

নোবেল:  মানুষজনই এটা ঠিক করে দিয়েছে। ২০১৭ সালে ইউটিউবে এই নামে একটা চ্যানেল খুলেছিলাম। শুরুতে কোনো নাম পাচ্ছিলাম না। পরে ‘নোবেল’ নামের সঙ্গে ‘ম্যান’ শব্দটা জুড়ে বানালাম ‘নোবেলম্যান’ মানে ‘মহৎ মানুষ’।

তারপর থেকে ‘নোবেলম্যান’ নামটা বেশ পপুলার হলো। নতুন আরেকটা নাম নিয়ে ব্যান্ড তৈরি করলে নামটা পরিচিত হতেই অনেক সময় লাগবে। তাই মানুষের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে ‘নোবেলম্যান’ নামটায় নির্বাচন করেছি।

গ্লিটজ: ‘সারেগামা’র পাট চুকিয়ে দেশে ফিরে গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

নোবেল: এই বছরের এপ্রিলের দিকে প্রাথমিকভাবে পুরোপুরি দেশে ফেরার কথা। দেশে ফিরে ব্যান্ডটা নিয়েই কাজ করব। আমার ব্যান্ডের অর্থ যোগাড়ের জন্য স্টেজশো করব। ইতোমধ্যে টুকটাক ব্যান্ডের কম্পোজিশন শুরু করেছি। দলের সবাই সিনিয়র মিউজিশিয়ান। নিজেদের মতো করে কম্পোজিশন করতে চায়। আশা করি, এখান থেকে ১০টা ভালো গান ছাড়লে মানুষের কাছে পৌঁছাবে।

গ্লিটজ: ফেইসবুকে আপনার নামে প্রচুর অ্যাকাউন্ট। নিজে কোনটি হ্যান্ডেল করেন?

নোবেল: আমি ফেইসবুক চালাই না; ফেইসবুকে আমার কোনো অ্যাকাউন্ট নাই। আমার একটি পেইজ আছে; ওটা আমার এক বন্ধু হ্যান্ডেল করে।

গ্লিটজ: ফেইসবুক চালান না কেন?

নোবেল:  স্যোশাল মিডিয়া থেকে যত দূরে থাকবেন কাজের দিকে তত বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন। আপনি কতটা পাবলিক অ্যাটেনশন পাচ্ছেন এটা দেখার দরকার নেই। ফেইসবুক হ্যান্ডেলের জন্য শিল্পীদের ম্যানেজার রাখা উচিত। নিজে হ্যান্ডেল করা উচিত না। এটা আমার মত; অনেকে হয়তো নাও নিতে পারে।