কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বলেছেন, পরিবারের অনুমতি ছাড়া ভিডিওটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছে।
জহির রায়হানের পরিবারের ক্ষোভের মুখে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, ভুলে এমনটা ঘটেছে।
২০১৫ সালে বঙ্গবিডি নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের এ প্রামাণ্য দলিলে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের লোগো বসানো হয়; চলচ্চিত্রের টাইটেল কার্ডে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দুই কর্তাব্যক্তি ফরিদুর রেজা সাগর ও ইবনে হাসান খানের নামও জুড়ে দেওয়া হয়। এটাকে ‘মহা অপরাধ’ বলছেন জাফর রাজা চৌধুরী।
কপিরাইট আইনের ৭১ ধারায় উল্লেখ আছে, সত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া মুনাফার উদ্দেশ্যে কোনো শিল্পকর্ম সম্পাদনা করে প্রদর্শন করলে ও তাতে সত্বাধিকারীর অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তা কপিরাইট লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।
জহির রায়হানের জ্যেষ্ঠ ছেলে বিপুল রায়হান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছবিটি বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। এগুলো নিয়ে কোনো রকম অপতৎপরতা বাংলাদেশের ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল, যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
পরিবারের আপত্তি ও ফেইসবুকে সমালোচনার মুখে শুক্রবার বঙ্গবিডির ইউটিউব চ্যানেল থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেওয়া হয়; তবে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ইমপ্রেস কিংবা বঙ্গবিডি।
ভিডিওটি সরিয়ে ফেললেও ‘শাস্তি খণ্ডানোর সুযোগ নেই’ জানিয়ে কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার বলেন, “কেউ একজন গাড়ি চুরি করে আবার ফেরত দিল তাহলে কি শাস্তি হবে না? শাস্তিটা হয়ত লঘু হবে, কিন্তু যে অপরাধ করেছে, সেটা তো আর খণ্ডানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা মহা অপরাধ।”
পরিবারের সদস্যদের অনুমতি ছাড়াই ৩ বছর আগে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশ করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম; ভুল বার্তা সম্বলিত ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার আগেই ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ দেখেছেন।
জহির রায়হানের স্ত্রী অভিনেত্রী সুচন্দাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জহির রায়হানের চলচ্চিত্রের প্রযোজক ইমপ্রেস টেলিফিল্ম কিভাবে হয়? এটা কী ধরনের মস্করা? আমি এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সবাইকে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিপুল বলেন, “স্টপ জোনোসাইড’র মালিকানা বাংলাদেশের জনগণের। এর মালিকানা শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের পরিবারেরও নয়। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ।”
‘ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের জন্য’ অবিলম্বে ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দাবি জানান তিনি; অন্যথায় শহীদ জহির রায়হানের পরিবার এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেন।
জহির রায়হানের প্রযোজনায় ও সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হলেও এ প্রামাণ্যচিত্রে প্রযোজক হিসেবে টাইটেল কার্ডে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কুশলী সমিতি’ উল্লেখ করা হয়।
ইমপ্রেস থেকেই ভিডিওটি সরবরাহ করা হয়েছে: বঙ্গবিডি
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বঙ্গবিডি বলছে, তিন বছর আগে ইমপ্রেসের লোগো ও টাইটেল কার্ডে নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে ফরিদুর রেজা সাগর ও ইবনে হাসান খানের নামসহ ভিডিওটি প্রকাশের জন্য সরবরাহ করেছে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।
‘তারা শুধু কনটেন্ট প্রকাশ করেন’ উল্লেখ করে ঘটনার পুরো দায়টায় চাপালেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের উপর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবিডির এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইমপ্রেস টেলিফিল্ম যেভাবে ভিডিওটি পাঠিয়েছে আমরা সেভাবেই প্রকাশ করেছি। পরে ফেইসবুকে আলোচনা শুরু হলে তারা ভিডিওটি নামিয়ে নিতে বলে; আমরা তাৎক্ষণিক নামিয়ে নিয়েছি।”
ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘দুঃখ প্রকাশ’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমপ্রেস টেলিফিল্মের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, “এটা আমাদের ভুল হয়ে গেছে। দুঃখ প্রকাশ করছি।”
কীভাবে ‘ভুল’টা হলো?
এ কর্মকর্তার ব্যাখ্যা, “ইমপ্রেস থেকে ভিডিও বাইরের প্ল্যাটফর্মে পাঠানোর সময় সব ভিডিওতেই ইমপ্রেসের লোগো লাগানো হয়। ভুল করে এই ভিডিওতেও লোগো লাগানো হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। খবরটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই ভিডিওটি নামিয়ে নিয়েছি।”
কিন্তু নির্মাতার পরিবার বলছে, প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশের জন্য পরিবারের সদস্যদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। প্রামাণ্যচিত্রটি বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশের ‘অধিকার’ আছে কি না?
উত্তরে এই কর্মকর্তা বলেন, “কনটেন্টটি প্রকাশ করাই ভুল হয়ে গেছে। সেটি প্রকাশের অধিকারও আমাদের নেই; সেটিও ভুল হয়েছে।”
শিগগিরই তারা জহির রায়হানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করবেন বলে জানালেন তিনি।
৩০ জানুয়ারি জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবসের আগেই বিষয়টির সুরাহা হবে বলে আশা করছেন তিনি; নইলে সেদিনই পারিবারিকভাবে কপিরাইট অফিসে অভিযোগ করবেন বলে জানালেন।