বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতি আদান-প্রদানের লক্ষ্যে জিম্বাবুয়ের জাতীয় ব্র্যান্ডিং ও বিনিয়োগ ফার্মের আয়োজনে ৫০টি দেশের অংশগ্রহণে গত ১৬ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ের হারারেতে বসে এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত আসর।
বিজয় দিবসের রাতে যখন হলভর্তি দর্শকের সামনে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রিয়তা।
তার ভাষায়, “বাংলাদেশ’ নামটা শোনার পরই আমি দাঁড়িয়ে আছি, ভাবলাম ঠিক শুনলাম? সামনে আগাতেও পারছি না, যদি ভুল হয়! পরে সবাই বলল, তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন বাংলাদেশ? চলে এসো। সবাই বাংলাদেশ বাংলাদেশ বলে চিৎকার করছিল।”
এই প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হয়েছেন জাম্বিয়ার বিশ্বাস মুকনকো এবং দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছেন জিম্বাবুয়ের ওয়েন্ডি মাতুরি। মিস পারসোনালিটির খেতাব পেয়েছেন রাশিয়ার আনা কিরিলিনা এবং ডেস্টিনেশন মার্কেটিং-এর অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন রুয়ান্ডারমারি ওথেনস উওয়াকু।
বিজয়ী হয়ে দেশে ফেরার পর বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রথম কোনো সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রিয়তা।
এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নারীদের অস্ত্রহাতে অংশগ্রহণ তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের নাতনি প্রিয়তা। তার নানা হলেন কচি-কাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা, সাংবাদিক রোকনুজ্জামান খান (দাদাভাই)।
প্রিয়তা বলেন, “মাথায় ছিল আমি নিজের দেশকে উপস্থাপন করব। একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা সেজেছিলাম; হাতে ছিল রাইফেল, আর পরনে সাদা রঙের শাড়ি। আবহ সংগীতে মুক্তিযুদ্ধের অডিও ভিজ্যুয়াল আর আমার মুখে ‘জয় বাংলা।”
এই উপস্থাপনা দর্শক ও বিচারকরা খুব পছন্দ করেছিলেন বলে জানান তিনি। তবে চূড়ান্ত পর্বে নিজেকে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে খানিকটা শঙ্কাও ছিল তার মনে।
প্রতিযোগিতার কয়েক দিন আগে পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন প্রিয়তা। চিকিৎসকরা সতর্ক করেছিলেন, এই অবস্থায় ‘পারফর্ম’ করলে পায়ের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি আছে। সেই ঝুঁকি নিয়েই ওষুধ নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি।
তবে চ্যাম্পিয়ন হবেন এটি কখনও ভাবেননি; ভেবেছিলেন বড়জোড় শীর্ষ তিন এ থাকবেন।
এখন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন প্রিয়তা। রাতারাতি বদলে গেছে তার জীবনের রুটিন। যাকে তিনি বলছেন, ‘ম্যাজিকাল জার্নি’।
ভ্রমণপ্রিয় প্রিয়তা পর্যটন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করায় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন তাকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বেসেডর’ ঘোষণা করে। প্রিয়তা ‘দ্য ফ্ল্যাগ গার্ল’ বা ‘পতাকা বালিকা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তার বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের মাধ্যমে তৈরি করা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
২০০৮ সালে প্রিয়তা প্রতিষ্ঠা করেন ‘দি ফ্ল্যাগ গার্ল’ নামের একটি নেটওয়ার্ক। এ নেটওয়ার্ক কাজ করছে দেশ ও বিদেশের নারীদের নিয়ে। তবে নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই আছেন। বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ৩০০। ৫০ শতাংশ সদস্য বাংলাদেশি। অন্য ৫০ শতাংশ সদস্যদের বাস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
আগামীতে এতিম শিশুদের নিয়ে কাজের পরিকল্পনার কথা জানালেন প্রিয়তা; সেই সঙ্গে নারীদের নিয়েও আলাদাভাবে কাজের পরিকল্পনা আছে তার।
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ভারতে অভিনয়ের উপর পড়াশোনা করেন প্রিয়তা। বাংলাদেশের প্রথম অভিনয়শিল্পী হিসেবে শ্রীলংকার একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন তিনি। ভালো চিত্রনাট্য পেলে আগামীতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে দেখা যেতে পারে আভাস দিলেন তিনি।
এর আগে মিস ট্যুরিজম ওয়ার্ল্ড, মিস মাল্টিন্যাশনালসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ও ইভেন্টে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন প্রিয়তা। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নারী ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখায় এ বছর ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছেন তিনি।