মিজানের বিরুদ্ধে ‘বিনা অনুমতিতে’ গান পরিবেশনের অভিযোগ ওয়ারফেইজের

অনুমতি ছাড়া ওয়ারফেইজের গান পরিবেশন করে ‘সুনাম ক্ষুন্নের’ অভিযোগ উঠেছে ব্যান্ডটির সাবেক মূল গায়ক মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে।

সাইমুম সাদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2019, 02:23 PM
Updated : 3 Jan 2019, 02:33 PM

ওয়ারফেইজের পক্ষে কপিরাইট অফিসে অভিযোগটি দাখিল করেন ব্যান্ডের প্রধান শেখ মনিরুল আলম টিপু; গত বছরের ২৫ মার্চ অভিযোগ পাওয়ার পরই শুনানীর জন্য উত্থাপন করা হয়। অভিযোগ দাখিলের বিষয়টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন টিপু। 

টিপু অভিযোগ করেন, মিজান ব্যান্ড ছাড়ার পর ব্যান্ডের অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন অ্যালবামে তার গাওয়া ও না গাওয়া গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গতানুগতিক শিল্পীদের নিয়ে গাইছেন; যার ফলে ব্যান্ড আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ও বিভিন্ন আয়োজক প্রতিষ্ঠান, ভক্তদের কাছে ওয়ারফেইজ সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

ওয়ারফেইজের প্যাডে পাঠানো অভিযোগটি আমলে নিয়ে কপিরাইট অফিসে ইতোমধ্যে দুই দফায় দুই পক্ষের লিখিত বক্তব্য নিয়ে শুনানী করা হয়েছে; আগামী সপ্তাহেই চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কপিরাইট অফিস।

ফেসবুক থেকে নেওয়া

কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কোনও গানের গীতিকার ও সুরকার সেই গানের সত্বাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হন। সত্বাধিকারীর অনুমতি ছাড়া গান পরিবেশনের কোনও সুযোগ পৃথিবীর কোনও আইনেই নেই।

শুনানীতে জানানো হয়, সত্বাধিকারীরা (গীতিকার ও সুরকার) অনুমতি না দিলে ওয়ারফেইজের গান পরিবেশনের আইনত অধিকার হারাবেন মিজান। ওয়ারফেইজের গানের মোট ৬ জন সত্বাধিকারী (সুরকার-গীতিকার) নিজস্ব স্টেটমেন্ট দাখিলের নির্দেশ দেয় কপিরাইট অফিস। ‘ব্যান্ডের সদস্য ছাড়া ওয়ারফেইজের গান পরিবেশন করা যাবে না’- মর্মে ইতোমধ্যে ৪ জন সত্বাধিকারী স্টেটমেন্ট জমাও দিয়েছে।

বাকি ২ জনের স্টেটমেন্ট হাতে পেলেই আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত রায় দেওয়া হবে বলে জানান জাফর রেজা চৌধুরী।

বিষয়টি নিয়ে কপিরাইট আইনের ২(২৪) ধারায়ও উল্লেখ আছে, যে কোনও গানের প্রণেতা বা কপিরাইটের অধিকারী হলেন- গীত রচয়িতা হিসেবে গীতিকার ও স্বরলিপি রচয়িতা হিসেবে সুরকার। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন অনুসারে কন্ঠশিল্পী কখনই কোনও গানের কপিরাইটের অধিকার লাভ করেন না। তিনি পারফর্মার হিসেবে কেবল রিলেটেড রাইটের অধিকারী হন।

ওয়ারফেইজের বর্তমান সদস্যরা। ছবি : ফেসবুক থেকে নেওয়া

যে কোনও গানের গীতিকার ও সুরকার প্রথম স্বত্বের অধিকারী এবং সাধারণত তারাই নির্ধারণ করে থাকেন- সর্বপ্রথম গানটি কে পরিবেশন করবেন। কন্ঠশিল্পীর অধিকার তার নির্দিষ্ট পারফরমেন্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, এখন অব্দি প্রকাশিত ওয়ারফেইজের ৬টি অ্যালবামই ব্যান্ডের নামে কপিরাইট রেজিস্টেশন করা আছে।

ওয়ারফেইজের গান করবো না: মিজান

বিষয়টি নিয়ে মিজানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানান, ওয়ারফেইজের গান তিনি আর গাইবেন না। তবে ওয়ারফেইজের ‘বেওয়ারিশ’ শিরোনামে একটি গানের সুরকার হিসেবে সত্বাধিকারীর আইনগত অধিকার পাবেন। ‘বেওয়ারিশ’সহ আরও বেশকিছু নিজের গান গুছিয়ে সেগুলোই নিয়মিত পরিবেশনের পরিকল্পনার কথা জানালেন তিনি।

তিনি বলেন, “এগুলো নিয়ে মাখামাখি করার সময় নাই। ঝগড়াঝাটিরও কিছু নাই। মামলা-মোকদ্দমা ভালো লাগে না। একজন শিল্পী কেন কোর্টে দৌড়াবে? আমি কর্ম করতে পছন্দ করি, কর্মে দিয়েই প্রমাণ হবে।”

ফেসবুক থেকে নেওয়া

তার অভিযোগ, “১৪টা বছর কোনও অফিসে চাকরি করলেও তো কিছু টাকা পেনশন পেতাম; সেটা দিয়েই জীবন চলে যেত। কিন্তু একটা কনটেন্টেরও টাকা আমাকে দেওয়া হয়নি। তিনি (টিপু) একাই ভোগ করেন।”

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে শেখ মনিরুল ইসলাম টিপু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

১৯৯৯ সালে প্রথম ওয়ারফেইজে যোগ দেন মিজান; ব্যান্ডটির তৎকালীন মূল গায়ক সাঞ্জয় কামরান রহমানের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন তিনি। ২০০২ সালে ব্যক্তিগত কারণে মিজান প্রথমবার দল ত্যাগ করেন। পরে ২০০৭ সালে আবারও ব্যান্ডে যোগদান করেন ও ২০১৬ সালে ব্যান্ডের দর্শনের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে তিনি পুনরায় ব্যান্ড ত্যাগ করেন। ওয়ারফেইজ থেকে বেরিয়ে ‘মিজান অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামে ব্যান্ড গঠন করেন মিজান। বছর খানেকের মাথায় ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘যুদ্ধ’।