চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন আর নেই

থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশের দর্শকদের যিনি উপহার দিয়ে গেছেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’র মত চলচ্চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2018, 10:58 AM
Updated : 14 Dec 2018, 03:53 PM

চলচ্চিত্র পরিচালক এস এ হক অলিক জানান, শুক্রবার বিকাল ৩টা ৫৭ মিনিটে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের চিকিৎকরা আমজাদ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

“তাকে দীর্ঘদিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিলো। ব্রেইন কাজ করছিল না। ধীরে ধীরে অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছিল।”

দুই ছেলে সোহেল আরমান ও সাজ্জাদ হোসেন দোদুল শেষ সময়ে এই চলচ্চিত্রকারের পাশে ছিলেন বলে জানান অলিক।

আমজাদ হোসেনের মৃত্যুর খবর দেশে এলে চলচ্চিত্র পাড়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বলেন, “বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। স্বীয় কর্মের মাধ্যমে তিনি মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

আর আমজাদ হোসেনের দুই সিনেমার নায়ক নয়নমনি ও গোলাপি এখন ট্রেনের অভিনেতা ফারুক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “এ ধরনের গুণী মানুষেরা কখনো মরে না। তারা মৃত্যুঞ্জয়ী হয়। তারা মৃত্যুকে জয় করে ফেলে। চিরকাল বেঁচে থাকে। আমজাদ চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে।”

ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। তখন থেকেই তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

এ নির্মাতার অসুস্থতার খবর শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ২০ লাখ টাকা দেন। ২৭ নভেম্বর আমজাদ হোসেনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় সেখানে চিকিৎসা চলার পরও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেননি।

এস এ হক অলিক জানান, আমজাদ হোসেনের মরদেহ কবে দেশে আনা হবে, কবে তার দাফন হবে- সে বিষয়গুলো শনিবার জানা যাবে।

১৯৪২ সালের ১৪ অগাস্ট জামালপুরে জন্ম নেওয়া আমজাদ হোসেন চিত্র পরিচালনার বাইরে লেখক, গীতিকার, অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত।

‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ১৯৬১ সালে রুপালি পর্দায় তার আগমন। পরে চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় তিনি বেশি সময় দেন।

১৯৬৭ সালে মুক্তি পায় তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘খেলা’। সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’র চিত্রনাট্য লেখায় জহির রায়হানের সঙ্গে আমজাদ হোসেনও ছিলেন।

তার ‘নয়নমনি’, ‘ভাত দে’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘কসাই’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রও দর্শক ও বোদ্ধামহলের প্রশংসা পায়। তার লেখা ও নির্মিত টিভি নাটকও ছিল জনপ্রিয়।

গান লেখায়, চিত্রনাট্যে ও পরিচালনায় চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া সরকার তাকে একুশে পদকেও ভূষিত করে।