শনিবার উৎসবের শেষদিনে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ছিল না তিল ঠাঁই। গাইবেন তাদের প্রিয় শিল্পী অর্ণব, প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সুফি ঘরানার শিল্পী শাফকাত আমানত আলীর পরিবেশনা দেখতে তাই ছিল সব বয়স-শ্রেণির দর্শকশ্রোতদের ভিড়।
শুরুতেই ‘নকশিকাঁথা’; সুই-সুতোর বুননের মতোই সুরে সুরে তারা কণ্ঠে তুলে ধরলেন বাংলার চিরায়ত লোকগান। বন্দনাগীতি ‘এই দেশেরই মাটিতে সোনার ফসল ফলে’ দিয়ে শুরু করে তাদের পরিবেশনায় ছিল ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরারে’, মৈমনসিংহ গীতিকার সুরে ‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদা লাগাইলো বাইগুন’। এরপর গেয়ে শোনান ‘জবর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছো ঢেউ’।
দু’টি দেশিয় প্রযোজনার পর মঞ্চে আসে স্পেনের চার তরুণীর ব্যান্ড লাস মিগাস। গায়িকা বেগো সালাজার, গিটারিস্ট মারতা রবলেস, আলিশিয়া গ্রিলো, ভায়োলিনবাদক রসার লসকসকে নিয়ে এই গানের দল। স্প্যানিশ ভাষায় ফ্লেমেনেকো, সালসা, জ্যাজ সংগীতে শ্রোতাদের কোমর দোলাতে বাধ্য করেন তারা।
অর্ণবকে নাকি খুঁজেই পাওয়া যায় না! কিছুটা আড়ালে ডুবে যাওয়া এ শিল্পীর গান শুনতেই অসংখ্য ভক্ত ছুটে আসেন উৎসবে। কিন্তু তার কণ্ঠ যেন এদিন কিছুটা ম্রিয়মানই শোনাল, বরং গাইলেন গৌরব। জালালের বাঁশি জানান দিল লোকসুরের অন্যতম ধারক-বাহক হয়ে উঠেছেন তিনি।
তবে পুরো স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়েছেন পাকিস্তানের শিল্পী শাফকাত আমানত আলী। ওস্তাদ আমানত আলী খাঁর ছেলে পাটিয়ালি ঘরানার তৃতীয় প্রজন্মের শিল্পী।
সমাপনী রাতে গাইলেন সুফিবাদী গান ‘মাওলা তেরা নূর’।
হঠাৎ সবাই চমকে উঠল যখন তিনি বাংলা গান ধরলেন, ‘কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না’..! এও কি সম্ভব? পাকিস্তানি শিল্পীর কণ্ঠে বাংলা সিনেমার এমন জনপ্রিয় গান! জানা গেল- তিনি তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পোষ্য মায়ের জন্য বাংলায় খালি গলায় গেয়ে শোনান সৈয়দ আবদুল হাদীর অসম্ভব জনপ্রিয় গানটি।
মঞ্চ ছেড়ে দর্শক সারিতে নেমে এসে এরপর একে একে গান তার জনপ্রিয় গানগুলো ‘বিন তেরে’, ‘দিওয়ানে চালে সাব সাথ’, ‘ইয়ে চান ঢলে ঢলে’। দর্শকের কাছে গিয়ে মাইক্রোফোন ধরে ধরে পরখ করে দেখলেন তার গানগুলো বাংলাদেশেও কতো জনপ্রিয়। কোনো কোনো দর্শকের কণ্ঠে নিজের গান শুনে বিস্মিত হন এ শিল্পী। তার মাইক্রোফোনের মুখে পড়ে গান গেয়ে ওঠেন উৎসব আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরীও।
তিনদিনব্যাপী এ উৎসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে ১৭৪ জন লোকসঙ্গীত শিল্পী গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে মাছরাঙা টেলিভিশন।