ফোকফেস্টের শেষদিন মাতালেন শাফকাত আমানত আলী

দর্শক-শ্রোতার স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে সফলভাবে শেষ হল চতুর্থবারের মতো আয়োজিত তিনদিনব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব।

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2018, 07:53 AM
Updated : 18 Nov 2018, 07:53 AM

শনিবার উৎসবের শেষদিনে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ছিল না তিল ঠাঁই। গাইবেন তাদের প্রিয় শিল্পী অর্ণব, প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সুফি ঘরানার শিল্পী শাফকাত আমানত আলীর পরিবেশনা দেখতে তাই ছিল সব বয়স-শ্রেণির দর্শকশ্রোতদের ভিড়।

শুরুতেই ‘নকশিকাঁথা’; সুই-সুতোর বুননের মতোই সুরে সুরে তারা কণ্ঠে তুলে ধরলেন বাংলার চিরায়ত লোকগান। বন্দনাগীতি ‘এই দেশেরই মাটিতে সোনার ফসল ফলে’ দিয়ে শুরু করে তাদের পরিবেশনায় ছিল ‘ওকি ও বন্ধু কাজল ভোমরারে’, মৈমনসিংহ গীতিকার সুরে ‘নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদা লাগাইলো বাইগুন’। এরপর গেয়ে শোনান ‘জবর সুন্দরী কইন্যা জলে দিছো ঢেউ’।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’র শেষ দিন শনিবার গান গাইছেন বাউল কবীর শাহ। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তাদের পর মঞ্চে আসেন বাউল কবির শাহ, বাউল আবদুল করিমের কাছে যার গানের হাতেখড়ি। তার কণ্ঠে তাই সুনামগঞ্জের সুর। রাধারমনের ধামাইল ‘যে করেছে প্রেম পিরিতি’, ‘কৃষ্ণ আইলো রাধার কুঞ্জে’, ‘তুমি ভাবিয়া দেখ মন’, ‘একদিন তোমার যাইতে হবে’, ‘কোন মিস্ত্রি নাও বানাইল’ ও ‘তোমার লাগি সাজিয়াছি ফুলের বিছানা’র মতো শ্রোতাদের মন মজানো গানগুলো গেয়ে মঞ্চ ছাড়েন এ বাউল।

দু’টি দেশিয় প্রযোজনার পর মঞ্চে আসে স্পেনের চার তরুণীর ব্যান্ড লাস মিগাস। গায়িকা বেগো সালাজার, গিটারিস্ট মারতা রবলেস, আলিশিয়া গ্রিলো, ভায়োলিনবাদক রসার লসকসকে নিয়ে এই গানের দল। স্প্যানিশ ভাষায় ফ্লেমেনেকো, সালসা, জ্যাজ সংগীতে শ্রোতাদের কোমর দোলাতে বাধ্য করেন তারা। 

অর্ণবকে নাকি খুঁজেই পাওয়া যায় না! কিছুটা আড়ালে ডুবে যাওয়া এ শিল্পীর গান শুনতেই অসংখ্য ভক্ত ছুটে আসেন উৎসবে। কিন্তু তার কণ্ঠ যেন এদিন কিছুটা ম্রিয়মানই শোনাল, বরং গাইলেন গৌরব। জালালের বাঁশি জানান দিল লোকসুরের অন্যতম ধারক-বাহক হয়ে উঠেছেন তিনি।

তবে পুরো স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়েছেন পাকিস্তানের শিল্পী শাফকাত আমানত আলী। ওস্তাদ আমানত আলী খাঁর ছেলে পাটিয়ালি ঘরানার তৃতীয় প্রজন্মের শিল্পী।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’র শেষ দিন শনিবার স্পেনের লাস মিগাস ব্যান্ডের পরিবেশনা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

তার দাদা ওস্তাদ আলী বকস জারনাইল পাটিয়ালি ঘরানার গোড়াপত্তন করেন। শাফকাত আমানত আলী প্রথমে আলোচনায় আসেন তার ব্যান্ড ফিউজনের মাধ্যমে। ‘আখোঁ কি সাগার’, ‘খামাজ’ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। 

সমাপনী রাতে গাইলেন  সুফিবাদী গান ‘মাওলা তেরা নূর’।

হঠাৎ সবাই চমকে উঠল যখন তিনি বাংলা গান ধরলেন, ‘কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না’..! এও কি সম্ভব? পাকিস্তানি শিল্পীর কণ্ঠে বাংলা সিনেমার এমন জনপ্রিয় গান! জানা গেল- তিনি তার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পোষ্য মায়ের জন্য বাংলায় খালি গলায় গেয়ে শোনান সৈয়দ আবদুল হাদীর অসম্ভব জনপ্রিয় গানটি।

মঞ্চ ছেড়ে দর্শক সারিতে নেমে এসে এরপর একে একে গান তার জনপ্রিয় গানগুলো ‘বিন তেরে’, ‘দিওয়ানে চালে সাব সাথ’, ‘ইয়ে চান ঢলে ঢলে’। দর্শকের কাছে গিয়ে মাইক্রোফোন ধরে ধরে পরখ করে দেখলেন তার গানগুলো বাংলাদেশেও কতো জনপ্রিয়। কোনো কোনো দর্শকের কণ্ঠে নিজের গান শুনে বিস্মিত হন এ শিল্পী। তার মাইক্রোফোনের মুখে পড়ে গান গেয়ে ওঠেন উৎসব আয়োজক প্রতিষ্ঠান সান ফাউন্ডেশনের কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরীও।

ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব’র শেষ দিন শনিবার বাংলাদেশি ব্যান্ড নকশিকাঁথা’র পরিবেশনা। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

প্রায় দুই ঘণ্টার পরিবেশনায় তিনি গেয়ে শোনান শাহরুখ খান অভিনীত ‘মেই নেম ইজ খান’ চলচ্চিত্রে তার গাওয়া জনপ্রিয় ‘তেরে ন্যায়না’, ‘ডোর’ চলচ্চিত্রের ‘ইয়ে হসলা’, মার্ডার থ্রি’র ‘তেরি ঝুঁকি নাজার’, মেহেদি হাসানের বিখ্যাত গজল ‘মুঝে তুম নাজার সে’, কাভি আলবিদা না ক্যাহনা চলচ্চিত্রের ‘মিতওয়া’, পাঞ্জাবি লোকগান ‘দামাদাম মাস্তকালান্দর’সহ বেশ কিছু গান। 

তিনদিনব্যাপী এ উৎসবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সাতটি দেশ থেকে ১৭৪ জন লোকসঙ্গীত শিল্পী গান পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে মাছরাঙা টেলিভিশন।