জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ তনয়া শেখ হাসিনা; হঠাৎ করেই বাংলার রাজনীতির ময়দানে আবির্ভূত হয়ে পাল্টে দেন দৃশ্যপট। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা উড়ান, আবার কক্ষপথে ফেরান দিক হারানো আওয়ামী লীগকে। শুরু হয় তার নতুন পথচলা।
আর এই পথচলায় তার নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রইলেন তার বোন শেখ রেহানা। রাজনীতির নানা পথ পেরিয়ে শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময়ের প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে হয়ে গেল প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার শো। এ উপলক্ষে ওই প্রেক্ষাগৃহে সমবেত হয়েছিলেন রাজনীতি, অর্থনীতি, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শীর্ষ ব্যক্তিরা।
মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের মধ্যে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ডাক-টেলিযোগাযোগ ও আইসিটিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রিমিয়ার শোতে সস্ত্রীক এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, “আমাদের চোখে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা শেখ হাসিনার ব্যক্তি জীবনের নানা দিক নিয়ে জানার বিশেষভাবে প্রয়োজন রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়েও এমন প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়নি।”
এই প্রামাণ্যচিত্র তরুণ প্রজন্মের কাছে নতুন তথ্য উপস্থাপন করবে বলে মনে করেন মোস্তাফা জব্বার।
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, “স্বজন হারানো একজন মা নিজের মনের সাথে নিয়ত যুদ্ধ করে, কতটা ত্যাগ স্বীকার করে এ দেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেছেন, তা দেখতে পেলাম এই প্রামাণ্যচিত্রে।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একইসঙ্গে দুটো লড়াই করতে হয়েছে; স্বজন হারানোর পর মানবিক যুদ্ধ, অন্যটি রাজনৈতিক। আপসহীন নেত্রী দৃঢ় প্রতিজ্ঞচিত্তে কীভাবে নিজের মানবিক যুদ্ধ মোকাবেলা করেছেন, তা থেকে আমাদের রাজনীতিবিদদেরও শিক্ষণীয় নানা বিষয় রয়েছে।”
“এটাকে শুধু একটি চলচ্চিত্র হিসেবে দেখছি না। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার সংগ্রামী জীবন, ব্যক্তি জীবনের নানা লড়াই উঠে এসেছে। এগুলো আমাদের আগামী প্রজন্মকে সাহস যোগাবে, যোগাবে অনুপ্রেরণা। শত বাধা পেরিয়ে কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়- সেই বারতা দেয় এই প্রামাণ্যচিত্র।”
“আমরা প্রামাণ্যচিত্রটিতে শেখ হাসিনার ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে যেমন পরিচিত হয়েছি, তেমনিভাবে দেখেছি তার অনুপ্রেরণা হিসেবে শেখ রেহানাকে। এর গল্প অত্যন্ত প্রাঞ্জল, অত্যন্ত সাবলীল।”
প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে এসেছিলেন অভিনেতা তারিক আনাম খান, নিমা রহমান, আতাউর রহমান, তুষার খান, মাসুম আজিজ, শহীদুল আলম সাচ্চু, মাহফুজ আহমেদ, আহসানুল হক মিনু ও সাজু খাদেম।
অভিনেত্রীদের মধ্যে দেখা গেছে তারিন, তানভিন সুইটি, রোকেয়া প্রাচী, হৃদি হক, সুষমা সরকার, আশনা হাবিব ভাবনা, অমৃতা খান ও নাবিলাকে।
প্রামাণ্যচিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। পরে বিরতি দিয়ে আবারো প্রদর্শিত হয়, যেখানে যোগ দেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তার স্ত্রী উম্মে হাসান শিশির।
প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ নির্মাণ করেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। শুক্রবার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাওয়া প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন পিপলু খান।
“বঙ্গবন্ধুকন্যা, যার জীবনে এত উত্থান-পতন রয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে আমি কী করে এই ছবিটাকে আরও বিস্তৃত করে তুলে ধরতে পারি। আমাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ করেছে তার জীবনের সাহসের সঙ্গে উত্থানের গল্প।”
পিপলু বলেন, “তাছাড়া শেখ রেহানার কথাও এখানে খুব স্বাভাবিকভাবে চলে আসে। কারণ তারা দুই বোন হরিহর আত্মা। পরস্পরের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
প্রামাণ্যচিত্রটির সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন দেবজ্যোতি মিস্ত্র, সিনেমাটোগ্রাফিতে সাদিক আহমেদ, সম্পাদনা করেছেন নবনীতা সেন।
সিআরআই জানিয়েছে, শুক্রবার দেশের চারটি প্রেক্ষাগৃহে এটি একযোগে প্রদর্শিত হবে। প্রেক্ষাগৃহ চারটি হল-বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স, যমুনা ফিউচার পার্কের ব্লকবাস্টার, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হল ও চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনে।
স্টার সিনেপ্লেক্সে শুক্র ও শনিবার শো দেখানো হবে সকাল সাড়ে ১১টা, বেলা ১টা, বিকাল ৪টা ৫০ মিনিট, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ও রাত ৮টা ১০ মিনিটে।
ঢাকার মধুমিতা সিনেমা হলে শুক্রবার সকাল ১১টায়, দুপুর ৩টায়, সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে এবং রাত ৮টায় মোট চারটি শো দেখানো হবে।
এছাড়া অন্যান্য দিন এই সিনেমা হলে সকাল ১১টায়, দুপুর ৩টা এবং সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে তিনটি শো দেখানো হবে।
চট্টগ্রামে সিলভার স্ক্রিনে মুভিটি শুক্রবার থেকে নিয়মিত দুটি হলে দেখানো হবে। থিয়েটার প্লাটিনামে মুভিটি দেখা যাবে প্রতিদিন সকাল ১১টায় এবং থিয়েটার টাইটানিয়ামে প্রতিদিন দেখা যাবে রাত ৯টায়।