মি টু: প্রিয়তির অভিযোগ, রফিকের অস্বীকার

মডেল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলার পর তা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠার মধ্যে এই অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

নিজস্ব প্রতিবেদকও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2018, 06:27 PM
Updated : 22 Nov 2018, 11:05 AM

হলিউড, বলিউডের যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো সম্প্রতি প্রকাশের মধ্যে তার আদলে মি টু (Me Too) হ্যাশট্যাগ দিয়ে গত ৩০ অক্টোবর ফেইসবুক লাইভে এসে রফিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ তোলেন প্রিয়তি।

২০১৪ সালে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত মিজ আয়ারল্যান্ড প্রতিযোগিতায় সেরার মুকুটজয়ী প্রিয়তি স্বদেশে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশ নেন। বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করা ২৯ বছর বয়সী প্রিয়তি পেশায় একজন পাইলট।

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

প্রিয়তির অভিযোগ, ২০১৫ সালে রংধনু গ্রুপের একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে শুটিং করতে এসে রংধনু গ্রুপের কার্যালয়ে গেলে তাকে সেখানে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন রফিকুল।

রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

প্রিয়তির অভিযোগের বিষয়ে বুধবার জানতে চাইলে রফিকুল সরাসরি তা অস্বীকার করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সামনে নির্বাচন। আমি নির্বাচন করব, এ কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করছে।”

প্রিয়তি এশিয়ান গ্রুপের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হতে এসেছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার এখানে তো কত মডেলই আছে। কে মডেল হইছে না হইছে, সেটা তো আমি দেখি না। এটা দেখার জন্য আলাদা লোক, মিডিয়া আছে।”

প্রিয়তি অভিযোগ করেছেন, যৌন নিপীড়নের কথা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন রফিকুল।

রফিকুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা সাজানো একটা নাটক। বলার অপেক্ষা রাখে না। ও থাকে আয়ারল্যান্ডে।

“সে ২০১৫ সালের ঘটনা বলে গেছে, ২০১৫ সালের ঘটনা মানুষ ২০১৮ সালে এখন জানবে কেন? মানুষ তো ওই সময় জানবে। এত দিন সে কোথায় ছিল?”

প্রিয়তি লাইভে বলেছেন, “সবাই বলবে এত দিন পরে কেন? মি টু মুভমেন্টের আগেও আমি সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আমি কারও নাম নিতে পারিনি। এটা নিয়ে কথা বলতে পারি নাই। সাহস হচ্ছিল না। আজকে এত দিন পর কিভাবে সাহস হয়েছে, আমি নিজেও জানি না।”

এই অভিযোগ তোলার পর প্রশংসার পাশাপাশি নিন্দার সম্মুখীনও যে হতে পারেন, প্রিয়তি নিজেই তা বলেছেন।

“আমার চরিত্র নিয়ে গবেষণা হবে, পোস্টমর্টেম হবে। বলবে ভাইরাল হওয়ার জন্য করেছি। তাহলে বলবটা কখন? ভাইরাল হওয়ার জন্য ব্লেম নিতে হয়? তাহলে মেয়েরা বলবেটা কখন?”

রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম

প্রিয়তিকে উদ্দেশ করে রফিকুল বলেন, “বাংলাদেশে এসে বলেন, প্রমাণাদি দেন।”

দুই সন্তানের জননী প্রিয়তি এই ঘটনায় মামলা ঠুকবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি এখনও।

তিনি বলেছেন, “আমি জানি না কেস করব কি না? আমাকে থাকতে হবে বাংলাদেশে এটা করার জন্য। আমার তো চাকরি আছে, বাচ্চা আছে।”

২০০৬ সালে আফ্রো আমেরিকান সামাজিক আন্দোলনের কর্মী তারানা বুরকি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নারীর উপর যৌন নিপীড়নের বিষয়ে প্রথমবারের মতো ‘মি টু’ ধারণার কথা বলেন, পরে একই নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পরে হলিউড অভিনেত্রী  অ্যালিসা মিলানো প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে #মি টু আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

এরপর একে একে মুখ খুলতে থাকেন হলিউডের অভিনেত্রীরা। নীরবতা ভেঙে যৌন নিগ্রহের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিতে থাকেন নারীরা।

পরে এর ধাক্কা এসে লাগে ভারতেও। শুধু রুপালি জগতেই নয়, রাজনীতিসহ অন্যান্য মাধ্যমেও যৌন নিপীড়নের কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করেছেন তারা।