মানুষকে আকর্ষণ করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল: ফেরদৌস ওয়াহিদ
১৯৮০ সালের দিকে আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত হয় ফেরদৌস ওয়াহিদের। আইয়ুব বাচ্চু তখনো তারকা হয়ে উঠেননি। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এলে তার বাসায় উঠতেন বাচ্চু।
“গান নিয়ে তখন ওর সাধনা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। ‘ময়না’ অ্যালবামটি সুপারহিট হওয়ার পর ওর খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। একইসঙ্গে গিটারও বাজাত, আবার গানও গাইত। মানুষকে আকর্ষণ করার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল ওর।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে এ শিল্পী বলেন, বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতকে অনেক কিছু দিয়ে গেছে ও। ওর অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তার অবদান কোনো অংশেই কোনো প্রতিষ্ঠানের চাইতেও কম না।
এ শিল্পীর জীবন থেবে তরুণ শিল্পীদের অনেক কিছু শেখার আছে বলে মনে করে ফেরদৌস।
“তার সমস্ত কর্মকাণ্ড শিক্ষণীয় তরুণদের কাছে। সুর, গানের কথা থেকে গিটার বাজানো-সবই তরুণদের জন্য আশির্বাদ। তার জীবন থেকে হাবিবেরও (হাবিব ওয়াহিদ) শেখা উচিত।”
সংগীতে আইয়ুব বাচ্চু শতভাগ নিজেকে দিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অসুস্থতা মাথায় নিয়েই রংপুর থেকে শো’ করে ঢাকায় ফেরেন আইয়ুব বাচ্চু। শুক্রবার রাজশাহীতে এক কনসার্টে পরিবেশনার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই চিরদিনের জন্য রুপালী গিটার ফেলে চলে গেলেন ওপারে।
“আগামীকাল যখন জানাজা হবে তখন তো সাউন্ড টেস্ট করার কথা ছিল।”, স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এভাবেই শুরু করেন সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তরুণরা যখন তার কাছ থেকে দু’হাত ভরে নেবেন তখনই বেদনার সাগরে ভাসিয়ে চলে গেল। সংগীত নিয়ে যারা গবেষণা করবেন তারা আইয়ুব বাচ্চুকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।”
নব্বইয়ের দশকে যখন হিন্দি গান বাংলা গানের উপর আধিপত্য বিস্তার শুরু করে তখন আইয়ুব বাচ্চুই সাধারণকে বাংলা গানে ফেরান বলে মন্তব্য করেন ফকির আলমগীর।
এ শিল্পীর মৃত্যুর খবর শুনে সকালেই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ছুটে যান তিনি।
“অনেকে তাকে আইকন মনে করতেন। কত মানুষ দেখলাম, স্কয়ারের সামনে কাঁদছেন। সারা দেশের ব্যান্ড সংগীতকে এগিয়ে নিয়েছে ও।
আমার চেয়েও দশ বছরের ছোট ও। খুবই তাড়া ছিল ওর?” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফকির আলমগীর; কথা বাড়াতে পারেননি।
এ শিল্পীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে উপস্থাপক হানিফ সংকেত ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লিখেন, “আমাদের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগ ছিল। ওকে আমি কখনোই গম্ভীর থাকতে দেখিনি।…আইয়ুব বাচ্চু বেশ অসময়েই চলে গেল। বাচ্চুর এই অকাল প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। বাচ্চুর আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
দীর্ঘদিন পাশাপাশি বাসায় ছিলেন তারা। স্ট্যাটাসে তুলে আনলেন সেইসব দিনের স্মৃতিও, “সেই আশির দশকের শুরু থেকেই বাচ্চুর সঙ্গে সম্পর্ক। তখন বাচ্চু সংগীত শিল্পী ছিলেন না।…দুর্দান্ত গিটার বাজাত। গিটারে ওর হাতের সঞ্চালন দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। মনে মনে ভাবতাম বিদেশে এ ধরণের যন্ত্রশিল্পী থাকলে তার খ্যাতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তো। শুধু গিটারের ঝংকারই নয়, সংগীত শিল্পী হিসাবেও বাচ্চু ছিল সফল এবং জনপ্রিয়।”
লোকটা সারা বিশ্বের সামনে বাংলা গানকে পৌঁছে দিল: শাফিন আহমেদ
“শুধু গানকে পুঁজি করেই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নিজেকে স্টাবলিশড করলেন লোকটি। তার সঙ্গে আমার হাজারো স্মৃতি জমা আছে। একসঙ্গে অনেক কনসার্টে বাজিয়েছি দু’জন। গুনে শেষ করা যাবে না। মানুষটার প্রশংসা করতেই হবে, মানুষটাকে সম্মান করতেই হবে।” বিডিনিউজের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন শাফিন আহমেদ।
শাফিন বলেন, “সারা বিশ্বের সামনে বাংলা গানকে পৌঁছে দিলেন তিনি। তার চলে যাওয়াটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। শূন্যতা পূরণ করার মতো কেউ নাই। বাংলা গানের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। মানুষটা ভালো ছিল, সহজেই মানুষকে কাছে টেনে নিতেন।”
ফেইসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সংগীত শিল্পী টিপু লিখেন, “১৯৮৬ সালে সারগাম স্টুডিওতে বাচ্চু ভাইয়ের সাথে পরিচয়। অবস্কিওর প্রথম অ্যালবাম শেষ করেছে তখন। গান শুনে পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন, বলেছেন এই তো শুরু, আরও অনেক ভালো কাজ করতে হবে সামনে। অবস্কিওরের অ্যালবাম বের হবার পর হঠাৎ একদিন সারগামে ডেকে বললেন, ‘চিটাগাং শো করবি? ১০ হাজার টাকা বাজেট।’ অবস্কিওরের কোনও স্টেজে সেটাই প্রথম গান করা।”
স্মৃতি হাতড়ে এ শিল্পী আরো লিখেন, “বাচ্চু ভাইয়ের সাথে স্মৃতির শেষ নেই কিন্তু ওনার সাথে গল্পগুলো যে স্মৃতি হয়ে যাবে সেটা ভাবিনি কখনো। ওপারে ভালো থাকুন গীটারের জাদুকর। আপনার তুলনা আপনি নিজেই। এদেশে আপনার মত আর একজন জাদুকর আর কখনো তৈরী হবে না।”