দেশের মানুষ ট্রলের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় না: ঐশী

ত্রিশ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে চীনে অনুষ্ঠেয় ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন পিরোজপুরের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2018, 03:35 PM
Updated : 3 Oct 2018, 03:35 PM

বুধবার রাতে গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানালেন, প্রতিযোগিতা নিয়ে ফেইসবুকে ট্রল, চীনে যাওয়ার আগে নিজের প্রস্তুতি ও প্রত্যাশার নিয়ে। 

গ্লিটজ: এক রাতের ব্যবধানে তারকা বনে গেলেন। এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে ছুটতে হচ্ছে আপনাকে। সবমিলিয়ে কেমন বোধ করছেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। বড় কিছু হতে গেলে পদক্ষেপগুলোও বড় হতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাকে সেভাবেই চলাফেরা করতে হচ্ছে।

গ্লিটজ: প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর সময় এমনটা ভেবেছিলেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: কল্পনায় ঠিক এতটুকু ভাবিনি। আমি চেয়েছিলাম, ভালো কিছু হোক। কিন্তু আমাকে নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হবে-এটা কখনো ভাবিনি। সম্পূর্ণ ফোকাসটা আমার পরিবেশনার উপর ছিল; এসব নিয়ে এত বেশি ভাবিনি।

গ্লিটজ: প্রতিযোগিতায় যুক্ত হলেন কিভাবে?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: রেজিস্ট্রেশন করলাম, অডিশন দিলাম। তারপর তো এখানে…

গ্লিটজ: বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে আপনি কোচিং করতে ঢাকায় এসেছিলেন, পরে রেজিস্টেশন করেছেন...

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: আমি পড়াশুনা করতে ঢাকায় এসেছি কিন্তু ভর্তি কোচিং করতে আসিনি। এটা ভুল তথ্য।

গ্লিটজ: গণমাধ্যমে এসেছে, গতবারই আপনি অংশ নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বয়সের ফাঁদে আটকে গিয়েছিলেন?

৩০ হাজার জনের মধ্য থেকে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। রোববার রাতে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী:
নাহ! গতবার টিভিতে প্রতিযোগিতার প্রচার শুরু হওয়ার পর জেনেছি। সেবার দেখেই প্রতিযোগিতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তৈরি হয়েছে। কারণ এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ভালো, ‘বিউটি উইথ ব্রেইন’  ভালো মানুষ হতে শেখায়।

বাংলাদেশে অন্যান্য বিউটি কনটেস্ট থেকে এটি আলাদা। এটি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ করে দেয়। তখনই ইচ্ছা ছিল, পরেরবার অংশ নেব। সেই ইচ্ছাটা এতদূর নিয়ে আসবে আমি ভাবতে পারিনি।

গ্লিটজ: সব ধাপ পেরিয়ে এবার চীনে যাওয়ার পালা। নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী:  মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিছুদিন পর আমার যে গ্রুমার (নয়নিকা চ্যাটার্জী) রয়েছেন উনি আমাকে গ্রুমিং করাবেন। আমি শতভাগ এফোর্ট দেব। যতটা পরিশ্রম করা যায় তার সর্বোচ্চটা চেষ্টা করব। গ্রুমারকে ফলো করার চেষ্টা করব। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশকে উপস্থাপন করার মত করেই নিজেকে তৈরি করব।

গ্লিটজ: ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এর মঞ্চে নিজেকে নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: অবশ্যই আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে চাই। স্বপ্ন সবারই থাকে। আমার মতো হয়ত অনেকেই নেই যারা সাধারণ জায়গা থেকে অসাধারণ জায়গায় এসেছে।

আমি কখনো মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। ত্রিশ হাজার মেয়ের সঙ্গে লড়াই করেই এখানে এসেছি। আমি এখন নিজেকে যদি ঠিকঠাকভাবে তৈরি করতে পারি তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্তও যেতে পারব।

গ্লিটজ: বাংলাদেশ থেকে আপনার সামনে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনো উদাহরণ নেই। ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং কি না?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। এর আগে বাংলাদেশ থেকে একবার গিয়েছে কিন্তু চ্যাম্পিয়ন এখনো হয়নি। বলা চলে, বাংলাদেশের জন্য এটা নতুন।আমি দেশকে ভালোভাবে উপস্থাপন করব।

আমার দেশ, দেশের মানুষ, দেশের সংস্কৃতি-সবকিছু যাতে গ্রহণযোগ্য হয় সেটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং। কারণ উন্নত দেশ থেকে প্রতিবছরই ‘মিস ওয়ার্ল্ডে’ অংশ নেয়। সেখানে বাংলাদেশ অনেকটা নতুন। সেখানে বাংলাদেশকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারে।

গ্লিটজ: মূল মঞ্চে নিজেকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন?

৩০ হাজার জনের মধ্য থেকে মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ নির্বাচিত হলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। রোববার রাতে ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী:
প্রথমত বাংলা সংস্কৃতি। কারণ যাই হোক আমাকে দেখে, কথাবার্তা শুনে, উপস্থাপনা দেখে যেন মনে হয় আমি বাংলাদেশের মেয়ে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও বাঙালি আছে কিন্তু বাংলাদেশের কালচারটা ভিন্ন। আমার প্রত্যেকটা আচার-আচরণে যেন মনে হয় আমি বাংলাদেশের মেয়ে।

গ্লিটজ: প্রতিযোগিতাকে ঘিরে বেশকিছু সমালোচনা, বিতর্ক, বিদ্রুপ হয়েছে। এগুলো আপনার জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে কিনা?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: একদমই না। যেটা হওয়ার সেটা হয়েই গেছে। আর আমার ক্ষেত্রে বাড়তি চাপের কি আছে? প্রথমত আমার দ্বারা ঘটেনি। যেহেতু টপটেনের একজনের দ্বারা ঘটনাটি ঘটেছে সেক্ষেত্রে আমার উপর কিছুটা দায়ভার আছে বলে মনে করি। কিন্তু এটাকে বাড়তি চাপ নেওয়ার কিছু নাই।

এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা; ভুল মানুষেরই হয়। অনেক সময় সহজ জিনিসগুলো নার্ভাসনেসের কারণে ভুলে যাই।

গ্লিটজ: আপনাকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিচারকরা কোন বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন? আপনার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ কী বলে?

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী: বিচারক সামনে থেকে দেখেছেন-ক্যাটওয়াক, নাচ, ও প্রশ্নোত্তর। আমার খুব একটা ভুল বোধহয় ছিল না। বাকিদের মতো আমাকে ট্রলের শিকার হতে হয়নি। ভুল থাকলে তো অবশ্যই ট্রল করত। দেশের মানুষ ট্রলের ক্ষেত্রে ছাড় দেয় না।

নিজের পর্যবেক্ষণে বলব, এটা যেহেতু বিউটি উইথ ব্রেইন সেহেতু মেধা থাকতে হবে। আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালো মানুষ হতে হবে। আমি কী রকম সেটা আমিই জানি।

আমি মানুষকে, দেশকে অনেক ভালোবাসি। সেদিক থেকে মনে করি, আমি কিছুটা সুন্দর। আরও সুন্দর হওয়া যোগ্যতা অর্জন করতে পারব। আরও সুন্দর হওয়ার দাবি রাখি।