২৮ বছর পর চলচ্চিত্রের ‘নতুন মুখের সন্ধানে’

আটাশ বছর আগে থমকে যাওয়া নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রী আর কলাকুশলী খোঁজার মিশন ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রম আবারও শুরু করল চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Sept 2018, 04:22 PM
Updated : 16 Sept 2018, 04:22 PM

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রেডিসনে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অভিনয় থেকে রাজনীতিতে আসা সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

অনুষ্ঠানে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যেমন পুরনো ব্যক্তিত্বদের নিবেদন ও দায়িত্বের প্রয়োজন রয়েছে,  তেমনিভাবে নতুন শিল্পীদের আবিষ্কারও উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। বাংলাদেশের  সংস্কৃতি বলয় যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে, তাতে চলচ্চিত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ফরজের মত হয়ে গেছে।”

অর্থমন্ত্রী আশা করেন, নতুন মুখ খুঁজে আনার পাশাপাশি চলচ্চিত্রে লগ্নিও বাড়াবেন প্রযোজকরা।

২০১০ সালে তিনি চলচ্চিত্র ব্যবসা প্রসারের জন্য সিনেপ্লেক্স নির্মাণে ৭ শতাংশ ঋণ সুবিধা শুরু করেছিলেন জানিয়ে মুহিত বলেন, প্রেক্ষাগৃহ নির্মাতারা সেই সুবিধা গ্রহণ করছে না।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর চলচ্চিত্রের জন্য সুচিন্তিত, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ণে গুরুত্বারোপ করেন।

“নতুন মুখ আসলেই হবে না, তাদের সংস্কৃতিমনা হতে হবে, মননশীল হতে হবে। নতুন মুখ তুলে আনলেই শুধু হবে না, তাদের প্রশিক্ষিত-সুশিক্ষিত করতে হবে।  প্রযোজক হিসেবে যারা বিনিয়োগ করবে, তাদের রুচির বিষয়ও আছে। চলচ্চিত্রের এ দু্র্দিনে আর টুকরো টুকরো ভাবনা, চিন্তা করলে হবে না।”

তারানা হালিমের কণ্ঠেও নূরের কথা প্রতিধ্বনি।

তিনি বলেন, “শিল্পীকে নিরহঙ্কারী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, টু মাচ ইগো ক্যান কিল ইউর ট্যালেন্ট। মানুষের কাছাকাছি থাকলেই শিল্পের সাধনা পরিপূর্ণতা লাভ করবে।”

তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চলচ্চিত্র শিল্পে বিকাশের জন্য ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচের’ কথা বারবার বলে আসলেও তাতে সংশ্লিষ্টরা ভ্রুক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ করেন তারানা।

“আমরা যদি একটি হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারতাম, তবে হলের এই জীর্ণদশা থেকে আমরা বের হতে পারতাম। একটা ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিসের কথা আমি বারবার বলে আসছি। পাইরেসি অ্যাক্টের ধারায় মোবাইল কোর্টের কার্যক্রমে নতুন সংযুক্তির কথা বলেছিলাম, যেখানে পাইরেসি অভিযানে ফাইনের টাকা প্রযোজক পাবে। সিটি করপোরেশন দুটিকে বলেছিলাম, দুটি স্ট্রিং দিতে, আমরা যেন সেখানে নতুন চলচ্চিত্রের প্রচার করতে পারি। কিন্তু কোথাও কিছু হয়নি।”

তিনি জানান,  চলচ্চিত্র নির্মাতাদের বিএফডিসির ফ্লোর ভাড়া দিতে প্রয়োজনে  বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে। ভাড়া দেওয়া হবে এফডিসির ক্যামেরাও।

অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উপদেষ্টা কমিটির সদস্য চিত্রনায়ক- পরিচালক আলমগীর তুলে ধরেন চলচ্চিত্রাঙ্গনের সমন্বয়হীনতার কথা।

তিনি বলেন, আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য বিএফডিসিতে নানা প্রযুক্তি আনা হলেও সেসব পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল নেই। সেন্সর বোর্ডে প্রজেকশনের জন্য প্রজেক্টরটির বিকল হওয়া আর এফডিসির সাউন্ড সিস্টেমের জন্য আনা সফটওয়্যার ইনস্টল না করার কথাও জানান তিনি।

“আজকে বলা হচ্ছে, হল ডিজিটাইজেশন করা হবে, কিন্তু তাতে কার লাভ? হল ডিজিটাল করা হলেও টিকিটের দাম বাড়বে। তারপর নানা খাতে খরচের কথা বলে প্রযোজকদের দেবে কম টাকা। এতে প্রযোজকরা লাভবান হবে না। তাই উভয় পক্ষের মধ্যে সমন্বয় আনা দরকার।”

তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনের আধুনিকায়নের জন্য ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান।

আশির দশকে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কার্যক্রমের মাধ্যমে উঠে এসেছিলেন নায়ক মান্না ও তার স্ত্রী শেলী মান্না।

অনুষ্ঠানে শেলী মান্না আক্ষেপ নিয়ে বলেন, “সেদিন নতুন মুখের সন্ধানে যারা উঠে এসেছিলেন, তাদের মাধ্যমে অনেক পরিচালক ও প্রযোজকে আলোকিত হয়েছেন, সমৃদ্ধ হয়েছেন। আমরা অনেকে নিজেদের পড়াশোনা, জব ছেড়ে চলচ্চিত্রে এসেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা কি পেলাম? আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল।”

অভিনেতা, অভিনেত্রী ও কলাকুশলী খুঁজে আনতে সাতটি শাখায় এ প্রতিযোগিতা হবে বলে জানান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।

এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে খোলা হয়েছে একটি ওয়েবসাইট। যে ওয়েবসাইটে প্রতীকী প্রতিযোগী হিসেবে নিবন্ধন কার্যক্রমের সূচনা করেন অর্থমন্ত্রী।

নতুন মুখের কার্যক্রমে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন, নায়ক আলমগীর, অভিনেত্রী গুলশান আরা চম্পা, জয়া আহসান, অভিনেতা-পরিচালক আফজাল হোসেন।

১৯৮৬ সালে শুরু হওয়া নতুন মুখের কার্যক্রম কর্মসূচির মাধ্যমে উঠে এসেছিলেন অভিনেতা মান্না, অমিত হাসান, খালেদা আক্তার কল্পনা, পারভীন সুলতানা দিতি।

অনুষ্ঠানে তথ্য সচিব আবদুল মালেক জানান, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারা দেশের ৪০টি প্রেক্ষাগৃহ আধুনিকায়ন করবে তথ্য মন্ত্রণালয়। এ উপলক্ষে শুরু হয়েছে বাছাই কার্যক্রম।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দেন বিএফডিসির পরিচালক মো. আমির হোসেন, সংস্কৃতি সচিব নাসির হোসেন, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, চলচ্চিত্র পরিচালক সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, চলচ্চিত্র পরিচালক ও শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেন জেমি, আজিজুর রহমানসহ অনেকে।