প্রায় সাড়ে চারশ চলচ্চিত্রের নায়িকা অঞ্জু ঘোষ কেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ নামেই খ্যাত? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন বাংলাদেশে এসে। জানালেন, বিস্ময়কর তথ্য। এ ছবিটি নাকি শুরুর দিকে ছেড়েই দিয়েছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রটির জন্য এখনও ভীষণ সাড়া পান তিনি।
এমনকি যে পশ্চিমবঙ্গেও নতুন ও কোন চলচ্চিত্রে পরিচালক বা শিল্পীকে প্রথমেই সত্যজিৎ-ঋত্বিকের দু’টি ছবির পাশাপাশি দেখানো হয় মতিউর রহমান পানু পরিচালিত কলকাতায় ‘বেদের মেয়ে জোছনা’।
বাংলাদেশে তোজাম্মেল হক বকুল নির্মিত বেদের মেয়ে জোছনা ব্যাপক ব্যবসা সফল হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে তা পুনর্নিমাণ হয় পানুর হাতে। কলকাতার বেদের মেয়ে জোছনায় নায়িকা অঞ্জু থাকলেও নায়ক হন চিরঞ্জিত।
নিজের বক্তব্যে অঞ্জু ঘোষ বললেন, “আমাকে যে এতদিন পর মনে রেখেছেন আমার অবাক লাগছে। আজকে যে আমি মাতৃভূমিতে পাড়া দিতে পেরেছি কোন উদ্দেশ্য নয়, কোন ছবি করতে আসা বা শিল্পীরা কেমন আছে তা দেখতেও নয়, আমার কাছে একটা তীর্থে পাড়া দেয়ার মতো উপলব্ধি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দুই বাংলাতেই দেখেছি সিরিয়াল দেখছে সবাই। সিরিয়াল বন্ধ হয়ে গেলো কেন এ নিয়ে কলকাতায় মানুষের আক্ষেপ। কিন্তু এই যে আপনভাবটা তা থেকে ছবির মানুষ কেন দূরে সরে গেলো। কিছুই বুঝতে পারছি না। কি সুন্দর একটা ইন্ডাস্ট্রি ছিলো, এটা কি করে হয়? কষ্ট লাগছে এই অবস্থা, ছবি হচ্ছে না।”
এফডিসির স্মৃতিচারণ করে বলেন,“ এই এফডিসিই আমাদের ঘরবাড়ি ছিলো, কাজ শেষে এখানেই ঘুমাতাম ঘুম থেকে উঠে আবার শুটিং হতো।”
তবে, কোন অভিমানে নয়, দু’দিনের জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে গিয়ে মায়ের অনুরোধে ও পারিবারিক কারণে সেখানেই থেকে যেতে হয়েছে। অঞ্জু বলেন, “কোন ক্ষোভ নেই, অভিমান নেই। আরে এটা তো আমার দেশ, এখান থেকে নি:শ্বাস নিয়ে গেছি ওখানে ছাড়ছি। আমি বাঙাল, ওখানে আমাকে এটা শুনতে হয়।”
এ সময় অঞ্জু ঘোষের পাশে উপস্থিত ছিলেন ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ চলচ্চিত্রে অঞ্জু ঘোষের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
তিনি বলেন, “দীর্ঘ ২২ বছর পর আমার নায়িকার সঙ্গে মিলন ঘটানোর জন্য শিল্পী সমিতিকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনেক শুভেচ্ছা। শিল্পী সমিতির আজকের উদ্যোগে এক আশার সঞ্চার হয়েছে। আশা করছি, এভাবেই আমাদের শিল্পীদের আরও মূল্যায়িত করা হবে। আসলে ভাবতে খারাপ লাগে, কান্না পায় যে চল্লিশটা বছর আমরা সবচেয়ে ভালো কাজ করতে পারতাম সে চল্লিশ বছরই চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকতে হলো। সবসময়ই বলি, আজও বলবো, এ চলচ্চিত্র বাঁচলেই আমরা বাঁচবো।”
শিল্পী সমিতির সহ সভাপতি ও রাজেশ ফিল্ম এর কর্ণধার নাদের খান সেই ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে ‘জোছনা কেন বনবাসে’ শিরোনামের একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তাব রাখেন।
চিত্রনায়িকা অঞ্জনা বলেন, “আশা করবো অঞ্জু ঘোষ দেশে ফিরে আসবে। জোছনা কেন বনবাসে থাকবে। জোছনা ফিরে আসুক নিজের ঘরে, বাংলাদেশের মেয়ে বাংলাদেশেই থাকবে আমাদের এটা আশা।”
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, “বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। আমরা তাকে তাই আজীবন সদস্য হিসেবে সম্মানিত করছি। আশা করছি ম্যাডামকে আমরা যখনই ডাকবো তিনি তখনই আসবেন। শিল্পী সমিতি শিল্পীর মর্যাদা রক্ষায় এভাবেই কাজ করে যাবে।”
অনুষ্ঠানে নির্মাতা শহীদুল হক খানও অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে নতুন চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ ব্যক্ত করে বার্তা পাঠান। অঞ্জু ঘোষ জানান, আবেগের বশে নয়, বাস্তবসম্মত সঠিক প্রস্তাব পেলে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে তার আপত্তি নেই।