নওশাবার মুক্তির জন্য শিল্পীদের ‘মানবিক আবেদন’

শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে টেলিভিশন অভিনয়শিল্পী সংঘ ও শিল্পী সমাজ। রোববার অভিনয়শিল্পী সংঘের ‘একটি মানবিক আবেদন’ শীর্ষক চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন সংগঠনের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। এছাড়াও এক বিবৃতিতে নওশাবার মুক্তির আবেদনে সাক্ষর করেছেন ৩৭জন শিল্পী।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2018, 02:33 PM
Updated : 20 August 2018, 02:33 PM

অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ নওশাবাকে জামিনে মুক্তি ও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে ফেইসবুকে বিবৃতি দিয়েছে। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুল আলম সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিমের পক্ষে ‘একটি মানবিক আবেদন’ শীর্ষক এ বিবৃতি সংগঠনের প্রায় সকল সদস্য অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে অভিনয়শিল্পী সংঘ তাদের আবেদনে জানায়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলাকালে ভুল তথ্যে প্রভাবিত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে লাইভ ভিডিওটি শেয়ার করে, তা যে পুরোপুরি ভুল ছিল, ইতিমধ্যে নওশাবা তা স্বীকার করেছে এবং এ জন্য সে ভীষণ অনুতপ্ত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাদার অব হিউম্যানিটি, সংস্কৃতিবান্ধব জননেত্রী শেখ হাসিনা—আপনার কাছে বিনীত আবেদন, যেহেতু নওশাবা তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী এবং তার বিগত জীবনে এমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই যা রাষ্ট্র, সমাজ ও মানবতাবিরোধী।

নওশাবার বিষয়ে সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়, “বরং নানাবিধ সামাজিক, মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সে জড়িত, এটা আমরা সবাই জানি। যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও নওশাবা বলিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। দুই দিন পর ঈদ। নওশাবার ছয় বছরের কন্যাসন্তান আছে, শারীরিকভাবেও সে অসুস্থ। আমরা সকলেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

আমরা বিশ্বাস করি, সব আইনি প্রক্রিয়া পার হয়ে নওশাবা তার স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে। অভিনয়শিল্পী সংঘের সব সদস্য, অভিনয়শিল্পীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে বিনীত আবেদন, কাজী নওশাবা আহমেদকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে মায়ের কোলে তার সন্তানকে ঈদ করার সুযোগ করে দিন।”

 

ঈদের আগেই অভিনেত্রী নওশাবাকে জামিনে মুক্তির আবেদন জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থী, স্থপতি, তরুণ চারুশিল্পী, পাপেটশিল্পী ও নাট্যকর্মীরা।

তাদের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা স্বীকার করছি যে নিশ্চিত না হয়ে ফেসবুক লাইভে যেকোনো তথ্য দেওয়া অনুচিত। নওশাবার সহপাঠী ও সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারি, তিনি খুব আবেগী একজন মানুষ এবং শিশুদের খুবই ভালোবাসেন। কোনো রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা থেকে তিনি ফেসবুক লাইভটি করেননি বলে আমাদের বিশ্বাস। শিশুদের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় হতবিহ্বল হয়েই তিনি এমনটি করেছেন।”

নওশাবার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে তারা আরও বলেন, “নওশাবা ভুল স্বীকার করেছেন। ভুলের মাশুলও দিচ্ছেন। নওশাবার বড় ভাই কাজী জুনায়েদ আহমেদের কাছ থেকে জানতে পারি, তাঁর মেরুদণ্ডের হাড় আঘাতপ্রাপ্ত, ডান পা ও হাতের অনুভূতি লোপ পেয়েছে। ডায়রিয়া, নিম্ন রক্তচাপ এবং ইউরিন ইনফেকশন নিয়ে নওশাবাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। কয়েক দিনের চিকিৎসায় অন্যান্য সমস্যার উন্নতি হলেও মেরুদণ্ডের ব্যথা এবং হাত-পায়ের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে, যা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিশেষায়িত চিকিৎসা এমনকি প্রয়োজনে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে পাঠাতে হতে পারে।”

বিবৃতিতে ঈদের আগেই জামিনে তার মুক্তি ও মামলা থেকে অব্যহতির আবেদন জানিয়ে বলা হয়, ‘নওশাবার দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডের নজির নেই। তাই আবেগবশত তাঁর এই ভুলকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আরও উল্লেখ করতে চাই, নওশাবা একজন তারকাই নন, তিনি একজন মা। তাঁর ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। নওশাবার সন্তানের কান্না ও পরিবারের হাহাকার সংবাদমাধ্যমে পড়ছি। এগুলো আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করছে। তাই আমরা ঈদের আগে জামিনে তাঁর মুক্তি ও মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানাচ্ছি।’