আর ডি বর্মনের প্রস্তাব ছিল এন্ড্রু কিশোরকে

এন্ড্রু কিশোরের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বলিউডে ক্যারিয়ার গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক রাহুল দেব বর্মন; তবে সে প্রস্তাব নাকচ করেছেন এ শিল্পী।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2018, 10:58 AM
Updated : 30 July 2018, 10:58 AM

সোমবার গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একথা জানান এন্ড্রু কিশোর।

১৯৮৫ সালে আর ডি বর্মনের সুরে বলিউডের ‘শত্রু’ চলচ্চিত্রের সূচনা সংগীতে কণ্ঠ দেন এন্ড্রু কিশোর। গানটি গাইতে গিয়েই আর ডি বর্মনের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় তার। এমনকি তার মুম্বাইয়ের বাসায় মাসখানেক ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। রোজ সন্ধ্যায় ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপ হাতে আর ডি বর্মনের সঙ্গে গান-আড্ডায় মজে যেতেন তিনি।

এন্ড্রু কিশোর বললেন, “আর ডি বর্মন দাদা তখন আমাকে বলেন, মুম্বাইয়ে গান করতে তোকে একবারে চলে আসতে হবে। এখানে তুই বিয়ে করতে চাইলেও সে ব্যবস্থা করা যাবে, চলে আয়।”

প্রস্তাব পাওয়ার এক সেকেন্ডের মধ্যেই এন্ড্রু কিশোর নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন তাকে- “আপনার আশির্বাদে দেশেই ভালো থাকব দাদা। আমি এখানে গান করব না।”

তার এ সিদ্ধান্তে খানিকটা অবাক হলেও আর ডি বর্মন বলেছিলেন, “তোর যেটা ভালো মনে হয়েছে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস, সাধুবাদ।”

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘শত্রু’ ছবিটি মুক্তি পেলে এন্ড্রু কিশোরের গানটি শ্রোতামহলে দারুণ সাড়া ফেলে। গানটি লিখেছিলেন গৌরি প্রসন্ন মজুমদার। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজেশ খান্না ও ঢাকার অভিনেত্রী শাবানা।

সেইবারের মুম্বাই যাত্রায় আর ডি বর্মনের সুরে, আনন্দ বক্সির লেখা ও কিশোর কুমারের গাওয়া একটি হিন্দি গানের বাংলা সংস্করণেও কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি। গান দুটি করতে গিয়ে শুরুতে ‘শত্রু’ ছবির পরিচালক ও প্রযোজক প্রমোদ চৌধুরীর বান্দ্রার বাসায় উঠছিলেন এন্ড্রু কিশোর। সেখান থেকে ১০ মিনিটের হাঁটাপথ আর ডি বর্মনের বাড়ি।

“উনি আমাকে বলেছিলেন, সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসিস। আড্ডা দেব।”

রোজ সন্ধ্যায় আর ডি বর্মনের বাসায় হাজির হতেন তিনি। তার স্টুডিওর মূল ফটকের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারাটাই অনেকের কাছে অর্জনের সমতুল্য। সেখানে এন্ড্রু কিশোরের ঢোকার অনুমতি মিলল সহজেই।

“আমার সঙ্গে ওনার সখ্যতা দেখে প্রমোদ চৌধুরী তো অবাকই হলেন। কারণ উনি স্টুডিওতে সচরাচর কাউকে ঢুকতে দিতেন না।”

এন্ড্রু কিশোরকে ‘ঢাকাইয়া’ বলে ডাকতেন আর ডি বর্মন। বাসার কাজের বুয়াকে বলে রেখেছিলেন, ‘ও ঢাকার ছেলে। যা খেতে চায় বানিয়ে দিবি।’

গান-গল্পে মাসখানেক কাটিয়ে দেশে ফেরার আগে তিনি আর ডি বর্মনের সঙ্গে একটি ছবি তুলতে চাইলেন। আর ডি বর্মন তাকে বলেন, একমাস একসঙ্গে থাকলি কোনো ছবি তুললি না। এমনকি আশা ভোঁসলে এলো তখনও ছবি তুলিসনি। এখন তুলতে চাস। ঘটনা কী?

তিনি বিদায়ের মুখে বলেছিলেন, “আপনার সঙ্গে ছোট্ট স্মৃতিটা থাকুক।”

১৯৯৪ সালে মৃত্যু হয় রাহুল দেব বর্মনের। সেইবার মুম্বাই থেকে ফেরার পর আর কখনও দেখা হয়নি তার সঙ্গে। এমনকি কোনো কথাও হয়নি আর। তবে সেই পুরানো স্মৃতিগুলো আজও জমিয়ে রেখেছেন এন্ড্রু কিশোর; স্মৃতি নিয়েই বাঁচতে চান আজীবন।