‘ফেইসবুক-ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা আসল জনপ্রিয়তা নয়’

প্রযুক্তির পরিবর্তনে অন্তর্জাল নির্ভর সংগীতজগতে উঠতি শিল্পীদের নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। তাদের উদ্দেশ্যে এবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়লেন জনপ্রিয় শিল্পী কনকচাঁপা। পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে দিলেন বেশকিছু পরামর্শ।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2018, 11:08 AM
Updated : 23 July 2018, 11:08 AM

শুধুমাত্র ইউটিউবের ভিউ দিয়েই যে প্রকৃত শিল্পী হওয়া যায় না তা নিয়ে সোচ্চার শ্রোতা থেকে শিল্পীদের অনেকেই। এ নিয়ে ব্যাঙ্গ করে গানও তৈরি হয়েছে বেশকিছু। হঠাৎ পেয়ে যাওয়া খ্যাতির বিপরীতে একজন প্রকৃত শিল্পী হতে কেমন প্রস্তুতি ও মানসিকতা থাকা উচিত তা নিয়ে এবার নিজের মত প্রকাশ করলেন বাংলাগানের অন্যতম জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। সামাজিক যোগাযোগ রোববার এ শিল্পী ‘হে হতে চাওয়া কণ্ঠশিল্পীগণ’ শিরোনামের এক স্ট্যাটাসে ২৫টি পরামর্শ দিয়েছেন।

সঠিক পরামর্শের পাশপাশি তার লেখায় ঝরে পড়েছে শ্লেষ ও ক্ষোভ। 

কনকচাঁপার মতে, গান গাইতে হলে একজন শিল্পীর গান ধারণ করার মতো কণ্ঠ যেমন থাকতে হবে, থাকতে হবে শেখার ধৈর্য। একজন সম্যক জ্ঞান সম্পন্ন ওস্তাদের কাছে নিয়ম মেনে শিখতে হবে গান। থাকতে হবে বাংলা ভাষার উচ্চারণ-বানান-প্রক্ষেপণ জ্ঞান। তার ভাষ্যে, “তাল বুঝতে হবে। তালকানা কখনোই গাইতে পারেনা। অসীম ধৈর্যের শক্তি নিয়ে এ পথে নামতে হবে। বুঝতে হবে, শিল্পী পেশা অন্য পেশার চাইতে আলাদা। পয়সার হিসাব না করে, তালের লয় মাত্রা বুঝলে বেশী উপকার হবে। কোন রকম ওজর আপত্তি ছাড়াই রেয়াজ করতে হবে। ওস্তাদ কে বাবা মায়ের মত সম্মান করুণ। তাদের শিক্ষা এবং দোয়া কাজে লাগান। তাদের শিখিয়ে দেয়া নিয়মাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করুন।”

শুধু তাই নয় একজন শিল্পীর নিজের সাথে নিজের পেশার সাথে সৎ থাকতে হবে বলেও মনে করেন এ শিল্পী। শিল্পীদের ছলচাতুরী মানায়না- এমন কথা উল্লেখ করে কনকচাঁপা আরও লিখেছেন, “বিনোদনকারী, গায়ক, কন্ঠশিল্পী, শিল্পী এগুলো একেকটা ক্যাটাগরি। আপনি কোনটা হবেন তার ফোকাস আপনাকেই করতে হবে। সহজে নাম করার জন্য ছলচাতুরী মার্কা বুদ্ধি বের না করে সহজ পথে গলা সেধে ভালো করে শিখে এই পথে নামলেই বরং শিল্পী বা কন্ঠশিল্পী হওয়ার কাজ সহজ হয়।”

সহজে স্টার হলে একদিন ঠিক অতি সহজেই মানুষ ভুলে যায়-এ সত্যও উঠে এসেছে কনকচাঁপার বয়ানে। তার পরামর্শ- গানের বিনিময়ে অর্থের জন্য না ছুটে, ভালো করে গান শেখা, অধ্যবসায়ের মাধ্যমে গানকে ধারণ করা উচিত শিল্পীদের। তাহলেই অর্থই শিল্পীর পিছু নেবে বলে মনে করেন তিনি।

গানের কথা ও সুরের প্রসঙ্গে কনকচাঁপা লিখেছেন, “সময় নিয়ে ভালো কথার ভালো সুরের ভালো গান তৈরী করুন। আজ না হোক কাল সেই গান মানুষ শুনবেই। ‘গান খাওয়ার’ উদ্দেশ্য নিয়ে গান তৈরী করবেন না। গান আসলেই মন, কান, হৃদয় শোনে।”

শিল্পীকে ব্যক্তিত্বসম্পন্নও হওয়া উচিত বলে মনে করেন কনকচাঁপা। তিনি বলেন, “নিজের গান নিয়ে মানু‌ষের ইনবক্সে ইনবক্সে দৌড়াবেন না। এতে মানুষ হয়তো ভালো কমেন্ট করে কিন্তু আসলে বিরক্ত হয়। জোর করে গান শোনানো যায়না বরং এতে শিল্পী কে ভিক্ষুকের মত দেখায়। সম্মানী ছাড়া কোথাও গাইবেন না। শ্রোতাদের সামনে নিজেকে খেলো করবেন না। নাম করার জন্য যেখানে সেখানে গান গাইবেন না।”

তিনি আরও বলেন, “শিল্পীকে খুব ভালো মানুষ হতে হয়। শিল্পীদের ভুলভাল নিয়ে সাধারণ মানুষরা খুবই বিচলিত থাকেন। তারা শিল্পীদের ভালো মানুষ হিসেবে দেখতে ভালবাসেন।এই ভালবাসার মূল্য অনেক। তাই ভুল কাজ করা থে‌কে বিরত থাকুন। সামান্য ভুলে আকাশচুম্বী জনপ্রিয় স্টার এর নামধাম ধুলায় মিশে যাওয়ার উদাহরণ হাজার হাজার আছে।”

ইউটিউব ভিউ আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল নিয়েও মুখ খুলেছেন কনকচাঁপা। ফেইসবুক-ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা আসল জনপ্রিয়তা নয়- এমন মন্তব্য করে তিনি লিখেছেন, “গান খুব অভিমানী। গানের সাথে বাজে অনৈতিক কিছু মেলাবেন, গান আপনাকে ছেড়ে দূরে চলে যাবে। নিজের পেশাকে সম্মান করুন। জেনে রাখবেন, সবাই গাইতে চান, সেই ক্ষমতা পান খুব অল্পসংখ্যক মানুষ। এক কোটি মানুষের মাঝে শিল্পী হন আসলে একজন। ফেসবুকে গান ভাইরাল করার চেষ্টা না করে গান আকাশে বাতাসে ছড়ানোর চেষ্টা করুন। যখন দেখবেন পানের দোকান, পাড়ার অনুষ্ঠানে আপনার গান বাজছে তখন বুঝবেন আপনার গান সত্যিকারের ছড়িয়ে গেছে। নিজেকে মিথ্যা শান্তনা দিয়ে লাভ?”

সবশেষে কনকচাঁপা’র পরামর্শ-“ভালো করে নিজে শুনে দেখেন আপনার কন্ঠে মানু‌ষের মনে প্রশান্তি আনার মত সুর আছে কিনা! সত্যি সত্যিই নিজের কন্ঠের প্রতি সুবিচার করুন।সেরকম কন্ঠ না হলে গান গেয়ে মানুষকে জ্বালাবেন না! গান গাইতেই হবে এমন কোনও কথা নেই। ভালো শ্রোতাদের ও অনেক সম্মান আছে। গানের উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যান। গান কে নীচে নামাবেন না।”