তার মতে, বিশ্বজুড়ে চলা সংঘাত, সংঘর্ষ আর নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে পারে সংগীতে সুরের ঐক্যতান; এক নিমিষেই থামাতে পারে যুদ্ধ।
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে পারফর্ম করতে এসে ইউরো-ক্যারিবিয়ান ঘরানার ডিসকো ব্যান্ডের তারকা লিজ মিচেল সংগীত নিয়ে এভাবে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “প্রেম-সৌহার্দ্য আর ভালোবাসার সৌন্দর্য গোটা বিশ্বকে বেঁধে দিতে পারে নতুন এক মৈত্রী বন্ধনে।”
শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বনি এম লাইম ইন ঢাকা’ কনসার্টে সদলবলে ঢাকার ভক্তদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে বনি এম।
চার দশকের বেশি পথচলায় ‘রাসপুতিন’, ‘ড্যাডি কুল’, ‘রিভারস অব ব্যাবিলন’র মতো মুখে মুখে ফেরা অসংখ্য গানে সত্তর দশক থেকে বিশ্ব মাতাচ্ছে এই ব্যান্ড দল।
ঢাকায় পারফর্ম করতে এসে বনি এম তারকা লিজ মিচেল বাংলায় মাত্র একটি শব্দ বলেন, “ভালোবাসি।”
তারপর তিনি বলেন, “এই প্রথমবার ঢাকায় পারফর্ম করতে এলাম। সত্যি খুব ভালো লাগছে। এখানে অনেক তরুণ। এই তরুণরাই তো শক্তি। এই তরুণরাই হল ভালোবাসা। এদের সামনে গাইতে পারাটাও দারুণ।”
ঢাকার মঞ্চে যখন গাইতে ওঠেন তিনি, তার ঠিক একদিন আগে ৬৬ বছর পূর্ণ হয়েছে লিজ মিচেলের।
প্রিয় শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গোটা গ্যালারি একযোগে গেয়ে ওঠে ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ’।
লিজ মিচেল বলেন, “আমার তো মনে হচ্ছে, আমি আমার ঘরেই জন্মদিন পালন করছি। আমার বাচ্চারা (দলের সদস্য) সবাই একসঙ্গে গাইছি মঞ্চে। আমার সামনে এত তরুণ! আমি এত বছর ধরে গাইছি, এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। আজ আমার মনে হচ্ছে, সত্যি আমি ঈশ্বরের আশির্বাদপুষ্ট।”
“আমার কাছে ভালোবাসাটাই সব। আমার কাছে ভালোবাসা মানেই ঈশ্বর।”
ঢাকার দর্শকদের উদ্দেশে লিজ মিচেল বলেন, “আমি সব সময় বলেছি, আমাকে গাইতে হবে। আপনাদেরও বলছি, মনের কোণে যে গানটি বেঁধে ফেলেছেন, সেই গানটিই গান। এই গান একদিন থামিয়ে দেবে যুদ্ধ। ”
বর্ষার এই মৌসুমে ঢাকায় গাইতে এসে বর্ষার গান দিয়েই পরিবেশনা শুরু করে বনি এম।
বর্ষণমুখর রাতের শেষে ওঠা নতুন সূর্যের আলোয় সব ব্যথা-বেদনা ভুলে সামনে এগিয়ে চলার প্রত্যয়ে ১৯৭৬ সালে বনি এম বেঁধেছিল ‘সানি’ গানটি। গানটি পরে ঠাঁই পেয়েছিল ‘টেক দ্য হিট অব মি’ অ্যালবামে।
‘বেবি ডু ইউ ওয়ানা বাম্প’ সিঙ্গেলটি আরও জনপ্রিয় করে তুলতে চারজন কণ্ঠশিল্পীকে একত্র করেছিলেন জার্মানির ফ্রাঙ্ক ফারিয়ান। লিজ মিচেলের সঙ্গে ওই দলে ছিলেন মার্সিয়া বেরেল, মেইজি উইলিয়ামস ও ববি ফেরেল।
এরপর টানা এক দশক পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই ব্যান্ড দলকে। বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পায় তাদের গান। ১৯৭৭ এ ‘মা বেকার’ অল্পের জন্য ইউকে টপ চার্ট হারালেও, ‘বেলফাস্ট’ ধরে রেখেছিল শীর্ষ-১০।
পরের বছর ‘রিভারস অব ব্যাবিলন’ আর ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রিং’ নিয়ে বনি এম উঠে গেল জনপ্রিয়তার উত্তুঙ্গে।
‘রিভারস অব ব্যাবিলন’ ইউকে টপ চার্টের এক নম্বর স্থানটি ধরে রাখে পাঁচ সপ্তাহ। পরে তাদের গাওয়া ‘ব্রাউন গার্ল ইন দ্য রিং’ গানটি আগের গানকে নামিয়ে দেয় দ্বিতীয় স্থানে।
টানা উনিশ সপ্তাহ ইউকে টপ চার্টের শীর্ষ দশে ছিল এই গানটি। গানটি ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল তখন।
সফলতা সঙ্গে সঙ্গেই চলছিল বনি এমের; ওই বছর ‘নাইটফ্লাইট টু ভেনাস’ অ্যালবামের ইউকে টপ চার্ট জয় করার পর ‘রাসপুতিন’ উঠে এলো ইউকে টপ চার্টের শীর্ষ-১০ এ।
পরের বছরও একের পর এক হিট সিঙ্গেল নিয়ে টপ চার্টে পোক্ত আসন করে নিতে থাকে বনি এম।
এপ্রিলে আসে ‘ইটস এ হলি-হলিডে’। আর তারপর সেপ্টেম্বরে ‘ওশেনস অব ফ্যান্টাসি’ উঠে যায় একেবারে টপ চার্টের প্রথম স্থানটিতে।
বনি এম’র ঢাকার এই কনসার্টটি আয়োজন করে ক্রেইন্স লিমিটেড।