বাবার মূল্যায়ন হয়নি: দিলদারকন্যা

আশি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় কমেডি অভিনেতা দিলদারের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে মনে করেন তার মেয়ে জিনিয়া আফরোজ।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 July 2018, 01:59 PM
Updated : 13 July 2018, 02:08 PM

শুক্রবার গুণী এ অভিনয়শিল্পীর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী, তবে তার স্মরণে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে কোনো আয়োজন নেই বলে জানালেন জিনিয়া।

তাদের পরিবারের খোঁজখবরও কেউ নেয় না বলে জানান তিনি।

বাবার মৃত্যুর দিনে তাই ক্ষোভ ঝরে জিনিয়ার কণ্ঠে। গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “উনাকে যে মূল্যায়ন করা উচিত ছিল সেটা আসলে হয়নি।”

গতবছর এফডিসিতে তার বাবার জন্য মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হলেও তাদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি জানিয়ে জিনিয়া বলেন, “এবার তো কোনো উদ্যোগই দেখলাম না।

স্ত্রী ও মেয়ে জিনিয়া আফরোজের সঙ্গে দিলদার।  ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নেওয়া।

“আমার মনে হয়, এর মধ্য দিয়ে শিল্পীদের অবমাননা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র আমার বাবা না, সব শিল্পীকেই আমাদের সম্মান জানানো উচিত।”

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান নিয়ে অপ্রাপ্তির কথা জানান জিনিয়া।

তিনি বলেন, “হলিউডের এ ধরনের অনুষ্ঠানে সিনিয়র আর্টিস্টদের সম্মান দেওয়া হয়। আমার বাবা বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং কমেডিয়ান হিসেবে তার জায়গাটা এখনও আছে। ফলে ওনাকে সম্মাননা জানানো উচিত ছিল।”

২০০৩ সালের ১৩ জুলাই ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যু হয় দিলদারের। তার পরিবারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছেন। স্ত্রীর নাম রোকেয়া বেগম। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার ডাক্তার। ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন, এখন কিছু করছেন না। দুই বোনই মায়ের সঙ্গে গুলশানের নিকেতন এলাকার বাসায় থাকেন।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারানোর পর অনেকটা সংগ্রাম করেই দিন কেটেছে দিলদারের স্ত্রী-মেয়ের।

মেয়ের ভাষ্যে, “মাথার উপর থেকে বটগাছটা সরে যাওয়ায় যে ঝড়ঝাপটা এসেছে সেটা বুঝেছিলাম তখন। জীবনটা যে কত কঠিন, সেটা আমরা বুঝতে শিখেছি বাবা মারা যাওয়ার পর। পনের বছর ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছি।

“বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেকেই ভেবেছিল, এদের আর টাকা নেই। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখারও কিছু নেই। ইন্ডাস্ট্রি থেকে কেউ সহায়তা করেনি। তবে রিয়াজ ভাই আমার জন্য একটা জবের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সে অর্থে আমাদের কেউ টাচে রাখেননি।”

জিনিয়া বলেন, “চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ও সরকারের তরফ থেকে মূল্যায়ন না পেলেও বাবা এখনও লাখো দর্শকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।উনি কোনো সাধারণ অভিনেতা ছিলেন না। উনি ইন্ডাস্ট্রিতে যে অবদান রেখে গেছেন এখনও কিন্তু অনেক প্রভাব রয়েছে।

বড় মেয়ের সন্তানের সঙ্গে। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে নেওয়া।

“উনি আমার বাবা বলেই বলছি না, ওনার জায়গাটা এখন অবধি অ্যাচিভ করতে পারেননি। দর্শকদের মনে এখনও বাবা বেঁচে আছেন। মনে হয় না পনেরটা বছর পার হয়েছে। দর্শকদের অনুভূতি দেখে মনে হয়, উনি এখনও বেঁচে আছেন।”

তার এসব অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান গ্লিটজকে বলেন, “এই মাসে প্রায় দশ জনের মতো শিল্পীর মৃত্যুবার্ষিকী আছে। আগামী ১৮ জুলাই একসঙ্গে দিলদার, বুলবুল, অভিনেতা আবদুর রাতিনসহ বাকিদের স্মরণে সকাল থেকে কোরআন তেলাওয়াত ও কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হবে। পরে তাদের নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।”

পর্দায় হাস্যরসাত্মক চরিত্রে অভিনয় করলেও ব্যক্তিগত জীবনে দিলদার বেশ গম্ভীর ছিলেন বলে জানালেন তার মেয়ে।

জিনিয়া বলেন, “অভিনয়ে উনি খুব মজা করতেন। মানুষকে হাসাতেন। কিন্তু বাস্তবে উনি খুব গম্ভীর ছিলেন। পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য উনাকে ভয় পেতেন। তিনি নীতিবান ছিলেন। নীতির কাছে কখনও হার মানেননি।”

তবে দুই মেয়ের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটাতেন দিলদার।

বাবাকে ঘিরে অনেক সুখ-স্মৃতির ভেতর থেকে একটি ঘটনা তুলে আনলেন জিনিয়া: “একবার ওনার কাছে দশ টাকা চাইলাম, কোনোভাবেই দিলেন না। কিন্তু সেবার ঈদের সময় সকালে ঘুম ভেঙে দেখি, শপিংয়ের জন্য আমাদের বিছানায় দশ হাজার টাকার বান্ডিল রাখলেন। অথচ ওনার কাছ থেকে দশ টাকা খুলতে পারতাম না আমরা। ব্যাপারগুলো আমাদের খুব আনন্দ দিত।”

দিলদারের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরে। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয়জগতে আসা এই শিল্পী এক সময় হয়ে ওঠেন দর্শকদের হাসির ফেরিওয়ালা।

অভিনয় করেছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘সুন্দর আলীর জীবন সংসার’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’র মতো দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। কমেডি অভিনেতার বাইরে নায়ক হিসেবে দেখা গেছে ‘আব্দুল্লাহ’ চলচ্চিত্রে।

২০০৩ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা কমেডি অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান দিলদার।