‘এখন মনে হচ্ছে আরও ভালো ভালো গান করা উচিত’

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন মেহের আফরোজ শাওন। তার পরিচালিত ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করে সেরা অভিনয়শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন গুণী অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। প্রতিক্রিয়া জানালেন নির্মাতা ও কণ্ঠশিল্পী শাওন।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 July 2018, 02:39 PM
Updated : 9 July 2018, 07:15 PM

হুমায়ূন আহমেদ তখন নুহাশপল্লীতে। বর্ষায় সময়। শ্যুটিংয়ে হঠাৎ বৃষ্টি। শাওনের সেবার হুমায়ূনের সঙ্গি হওয়া সম্ভব হয়নি। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ততা আর গর্ভাবস্থায় নিষাদ থাকায় নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন শাওন। বৃষ্টির মহুর্তে হুমায়ূন তাৎক্ষণিক গানটি লিখলেন- ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়’। গানটি লিখেই পাঠিয়ে দিলেন এসআই টুটুলের কাছে।

তাৎক্ষণিক সুরে বসিয়ে গানটি শাওনকে শোনালেন টুটুল। ব্যাগ গুছিয়ে শাওন তখনই চলে গেলেন হুমায়ূনের কাছে। নিজের পরিচালনায় ‘কৃষ্ণপক্ষ’ চলচ্চিত্রে সেই গানটির জন্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ গায়িকার স্বীকৃতি পেলেন শাওন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়েই সে স্মৃতির অবতারণা করলেন তিনি।

রোববার ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করার পর প্রতিক্রিয়ায় শাওনের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যটা এমন- “যে কোন প্রাপ্তিই মানুষকে আনন্দিত করে। রাস্ট্রের সম্মান এটা অনেক বড় ব্যাপার। ছোটবেলায় অনেক রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছি। অনেক জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি শিশুশিল্পী হিসেবে। পরিণত বয়সে এটা আমার প্রথম পুরস্কার। বিশেষ করে যে গানটার জন্য পুরস্কারটা পেয়েছি সেটার সাথে আমার অনেক স্মরণীয় মুহুর্ত জড়িত।

এ গানটির জন্য ইতিমধ্যেই শ্রোতাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি সেটাই আমার জন্য অনেক বড় পুরস্কার ছিলো। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্তিতে যেটা হলো দায়িত্বের জায়গাটা অনেক বেড়ে গেলো। সে জায়গা থেকে আমার এখন মনে হচ্ছে যে, গানটা আরও কন্টিনিউ করা উচিত, আরও ভালো ভালো গান করা উচিত।”

শুধু তাকে নিয়ে লিখেছেন বলেই নয়, হুমায়ূনের মৃত্যুর পর  ‘যদি মন কাঁদে’ গানটির বহুল ব্যবহারে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গানটি যেন হয়ে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদের পরিপূরক। গানটির তাৎপর্য  এখানেই-এমনটাই মনে করেন শাওন। 

বাবার গানে মায়ের পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন হুমায়ূনের দুই পুত্র নিষাদ ও নিনিত। মায়ের পুরস্কার প্রাপ্তিতে তারাও আনন্দিত।

শাওনের ভাষ্যে, “প্রত্যেকবারই বাবার পুরস্কার ওরা নেয়। ওদের দৃষ্টিতে মাও যে পুরস্কার পেতে পারে তা খুব অবাক ব্যাপার। ওরা জানে যে, বাবা খুব সেলিব্রেটি মানুষ, মা হয়তো অনেক কাজ করেন। কিন্তু পুরস্কার যে পেতে পারেন তা তারা ভাবতে পারেনি। ওরা তো জানে না, যে মাও ছোটবেলায় অনেক পুরস্কার পেয়েছে। আমাকে তো সবসময় সাধারণভাবেই ঘরে দেখে। এবার পুরস্কার পাওয়ার পর তাদের এক্সাইটমেন্টটা অনেক ভালো লেগেছে। আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ওরা।”

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত কৃষ্ণপক্ষ নির্মাণের ভেতর দিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে যাত্রা শুরু করেছেন শাওন। এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন গুণী অভিনেত্রী তানিয়া আহমেদ। এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন তিনি।

নির্মাতা হিসেবে তার পুরস্কার প্রাপ্তিতে আনন্দিত শাওন। বললেন, “খুবই প্রত্যাশিত পুরস্কার। আমি বলবো, আমার চলচ্চিত্র যদি একটি পুরস্কারও প্রাপ্য থাকতো তাহলে সেটা তানিয়া আহমেদ।”