গানের কোথাও ‘বিএনপি’ শব্দ আনিনি: মনিরুজ্জামান মনির

সুরকার ও শিল্পীর অনুমতি ছাড়াই বিএনপিকে দলীয় সংগীত হিসেবে ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গানটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গানের গীতিকার ও জাসাস নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে। গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, কিভাবে গানটি বিএনপির দলীয় সংগীত হয়ে উঠলো।

সাইমুম সাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2018, 09:47 AM
Updated : 30 June 2018, 09:50 AM

গ্লিটজ: শিল্পী-সুরকারের অনুমতি ছাড়া ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গানটি বিএনপি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে গীতিকার হিসেবে আপনার অবস্থান কী?

মনিরুজ্জামান মনির: এটা একটা দেশের গান, দেশপ্রেমের গান। বিশ বছর আগে কী হয়েছিল, জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন কি না তা মনে নাই।…এটা আমার লেখা গান। বরিশালের অনুষ্ঠানে কোনো আর্টিস্ট যদি গানটা গায় তখন আমি তাকে বাধা দিতে পারি? কিসের কপিরাইট, কিসের পারমিশন। একটা হিট গানের পারমিশন লাগে নাকি? সারা দেশের মানুষ এটাকে ব্যবহার করতে পারে।

গ্লিটজ: কিন্তু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে তো অনুমতির দরকার হয়। গানটির অংশীদার একযোগে আপনি, সুরকার ও সংগীতশিল্পী। তারা দু’জন বলছেন বিএনপিকে অনুমতি দেয়নি। তাহলে বিএনপি কিভাবে ব্যবহার করছে?

ছবি: ইউটিউব থেকে নেওয়া।

মনিরুজ্জামান মনির:
দলীয় সংগীত হিসেবে গানটা কেন ব্যবহার করছে-সেটা ওদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। ‘দলীয়’ শব্দটা বাদ দিয়ে এমনিতেও তো দেশের গান হিসেবে গাইতে পারে। ‘জয় বাংলা’র জন্য গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কাছে অনুমতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ? সেটাও তো হিট গান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পারমিশন নিয়েছিল? তাহলে ‘জয় বাংলা’ গান ওরা গায় এটার অনুমতি লাগে? কিছু কিছু গান আছে সারা দেশের মানুষ গাইতে পারে। মুখ বন্ধ যায় না। ওনারা (শিল্পী-সুরকার) ওনারটা বলুক। আমি তো বললামই।

গ্লিটজ: তাহলে আপনি বিএনপিকে গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন?

মনিরুজ্জামান মনির: গানের একটা শব্দও তো বিএনপির নাই। বিএনপি যদি এই গানে দেশপ্রেমের আদর্শ খুঁজে পায়-তাহলে পাক। আমরা তো গানের কথা পরিবর্তন করিনি। আমরা ‘বর্ণালী’ অনুষ্ঠানের জন্য গানটা করেছিলাম। তারপরে আর পরিবর্তন করিনি।

যেমন, ভারতের জাতীয় সংগীত রাজপুতের আগমন উপলক্ষে লিখেছিলেন। যখন জাতীয় সংগীত করানোর কথা হয় তখন রবিঠাকুর কিছু শব্দ পরিবর্তন করলেন। আমরা কিন্তু এগুলো করি নাই। কোথাও বিএনপির শব্দ আনিনি। সেই গান দলীয় সংগীত বলে গাইলে সমস্যা কী? এটা দলীয় সংগীত করল না কী করল, করলে করতে পারে। এটা ভালো লাগছে-করতে পারে। তাই না? এটা দেশের গান, মানুষকে ফেরানো যাবে না।

গ্লিটজ: এক নিবন্ধে লিখেছেন, গানটির বিষয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আপনার কথা হয়েছিল..

মনিরুজ্জামান মনির: ‘বর্ণালী’ অনুষ্ঠানে গানটি প্রচারের পরই আমার সঙ্গে জিয়াউর রহমান কথা বলেছেন। ওনাদের (সুরকার-শিল্পী) সঙ্গে কথা বলার হয়তো সময় পাননি। উনি অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কবি আল মাহমুদ থেকে শুরু করে ফজল শাহাবুদ্দিন, ফেরদৌস ওয়াহিদ, উজ্জল সাহেবেদের মধ্যে অনেককে টাকাও দিয়েছেন।

 

হয়তো শাহনাজ রহমতউল্লাহ ও আলাউদ্দিন আলী সাহেবকে জিয়াউর রহমান সাহেব ডাকতেন। কিন্তু তার আগেই তো তিনি শহীদ হলেন। পরবর্তী পর্যায়ে কিন্তু বিএনপির অনেক অনুষ্ঠান আমরা করেছি। শাহনাজ রহমতউল্লাহও ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সামনে বহুবার ‘প্রথম বাংলাদেশ’ গানটা করেছেন। গানটা জনগণের হয়ে গেছে। এটা নিয়ে অহংকার করা উচিত।

গ্লিটজ: জিয়াউর রহমান ‘দলীয় সংগীত’ হিসেবে গানটি কী কারণে পছন্দ করেছেন বলে মনে করেন আপনি?

মনিরুজ্জামান মনির: প্রচন্ড দেশপ্রেম আর প্রকৃতি হলো গানের মূল উপজীব্য বিষয়। দেশকে ভালোবাসার বিষয়টি গানের কথা ও সুরে জড়িয়ে আছে। আলাউদ্দিন আলী সুরও করেছেন মারাত্মক।

গ্লিটজ: গানটি শোনার পর মুগ্ধ জিয়াউর রহমান আপনাকে চাকরিও দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন সেই নিবন্ধে…

মনিরুজ্জামান মনির: অনেককেই চাকরি দিয়েছেন। আশি সালের দিকে একবার তিনি আমাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, কী করি? বললাম, ‘বেকার।’ বললেন, ‘কোয়ালিফিকেশন কী?’ বললাম, ‘গ্রাজুয়েশন।’ তারপরে উনি বললেন, চাকরি করবেন নাকি? বললাম, দিলে করব।

পরে বঙ্গভবন থেকে সংস্কৃতিমন্ত্রী আমিরুল ইসলাম কালাম সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে বলা হলো। উনি আমাকে বেশ আদর-আপ্যায়ন করলেন। ওইদিনই শিল্পকলা একাডেমিতে প্রবেশনাল অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম।

গ্লিটজ: পরে আপনি জাসাসে যোগ দিলেন কবে?

মনিরুজ্জামান মনির: নব্বইয়ের দশকের দিকে ওরাই আমার নাম দিয়েছিল। আমার পোস্ট ছিল কি না আমি জানতামই না। তবে বর্তমান কমিটিতে আছি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে।