গত ৫ এপ্রিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত একটি গেজেটে জানানো হয়, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘নিয়তি’ চলচ্চিত্রে নৃত্য পরিচালনার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে।
ঘোষণার পর এ পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছেন হাবিব।
ক্ষোভ প্রকাশ করে রোববার সন্ধ্যায় গ্লিটজকে বলেন, “নিয়তি’ ছবিতে আমি কাজ করিনি। আমার নামটা কেন গেল? যেহেতু আমি কাজ করিনি তাহলে পুরস্কারটা আমি কীভাবে নেব?
এর মাধ্যমে আমাকে অপমান করা হয়েছে। আমি হাস্যকর পাত্র হয়ে গেলাম।”
২০১৬ সালের জুনে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে ছবিটি মুক্তি পায়। কলকাতার এসকে মুভিজ ও ঢাকার জাজ মাল্টিমিডিয়া ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।
চূড়ান্তভাবে পুরস্কার ঘোষণার পরপরই তিনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কাছে অভিযোগ করেন বলে জানান এ নৃত্য পরিচালক।
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এ প্রযোজক বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে দাবি করেন হাবিব।
তার ভাষ্যে, “পুরস্কার ঘোষণার দিনই আমি কোম্পানিতে (জাজ মাল্টিমিডিয়া) অভিযোগ করেছি। বলেছি, যেভাবেই হোক পুরস্কারটা ক্যান্সেল করেন।…উনি বললেন, ‘তুমি কাজ করেছো এটা বলো, বাকিটা আমি বুঝব।”
যার বিনিময়ে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির সব ছবিতে তাকে কাজের অফার করা হয় বলে দাবি হাবিবের।
“কিন্তু আমি বলেছি, এটা সম্ভব না। রুম থেকে কোনো রকমে বের হয়ে এসেছি। কারণ একজনের রুমে গিয়ে ব্ল্যাকমেইল করলে কী করব।”-যোগ করলেন প্রায় দুই’শ চলচ্চিত্রের এ নৃত্যপরিচালক।
বিষয়টি নিয়ে কী বলছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া?
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আবদুল আজিজের দাবি, ছবিটির প্রডিউসার জাজ মাল্টিমিডিয়া না।
কিন্তু ছবির পোস্টারে জাজের নাম গেছে। গণমাধ্যমেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাজ মাল্টিমিডিয়ার নাম এসেছে।
এ প্রসঙ্গে আজিজ বলেন,“অনেক ছবিই জাজের নামে যায়। এটা একটা মার্কেটিং পলিসি। অনেকে জাজের দিকে আগ্রহী বলেই এমনটা করা হয়।”
এই বিষয়ে প্রযোজকের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি চাপার জন্য ওকে কখনও জোর করিনি। এগুলো উল্টাপাল্টা কথা বলেছে। জানি না ও পাগল হয়ে গেছে কিনা।”
প্রশ্ন উঠেছে, সিনেমায় কাজ না করেও হাবিবের নাম কীভাবে গেল জুরি বোর্ডের কাছে?
এর সম্ভাব্য একটা কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক ফারুক।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘চলচ্চিত্র পরিবার’।
ফারুকের অভিযোগ, ছবিটির কোরিওগ্রাফার আমাদের দেশের না।
রোববার সন্ধ্যায় তিনি গ্লিটজকে বলেন, “ছবির সেন্সর সনদপত্র নেওয়ার জন্য স্থানীয় একজনের নাম দিতে হবে। ওরা ভাবছে হাবিব সরল-সোজা মানুষ। ওর নাম দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
কিন্তু হাবিব তো পুরস্কার নেবে না। তাহলে ফাঁসল প্রডিউসার। আমরা জানি সব জায়গায় জাজের নাম, আজিজের নাম ছিল। উনি জবাবদিহি করবেন।”
তার কণ্ঠেও ক্ষোভ, “জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলে তাদের বিচার হওয়া উচিত। আমি মনে করি এটা অপরাধ।
দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এটা নিয়ে এই সমস্ত খামখেয়ালিপনা করলে আমি বলব, পুরস্কারই বন্ধ করে দিক।”
বিষয়টি নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (চলচ্চিত্র অধিশাখা) শাহীন আরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি কাগজগুলো দেখিনি। সেন্সরবোর্ডে জমা দিয়েছে, জুরি বোর্ড দেখেছে। লিখিতভাবে আবেদন করে অস্বীকার করলে বিষয়টি প্রমাণ হবে। যদি সত্যিই সে না করে তাহলে তো বাদ যাবে।”
সেন্সরবোর্ড থেকে কার নাম পাঠানো হয়েছিল জুরি বোর্ডে?
তৎকালীন সেন্সরবোর্ডের সচিব মুন্সি জালাল উদ্দিন গ্লিটজকে নিশ্চিত করেন, ছবিটি ছাড়পত্র নেওয়ার সময় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে হাবিবের নামই দেওয়া ছিল। সে হিসেবে তার নামই পাঠানো হয় জুরিবোর্ডে।
তবে ছবিটির পরিচালক জাকির হোসেন রাজি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছবিতে নৃত্য পরিচালক হিসেবে হাবিব কাজ করেননি।