আমার অনেক রকমের অনেক চরিত্র করা বাকি: দীপান্বিতা

চারুনীড়ম কাহিনিচিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন অভিনয়শিল্পী দীপান্বিতা মার্টিন। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় গ্লিটজ..

রুদ্র হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2018, 03:01 PM
Updated : 13 March 2018, 03:45 PM

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে টেলিভিশনে প্রচারিত হয় আবু শাহেদ ইমন পরিচালিত নাটক ‘গোল্ডেন এ প্লাস’।

সমসাময়িক সময়ে শিক্ষার্থীদের সংকট নিয়ে নির্মিত নাটকটিতে অভিনয় করে চারুনীড়ম কাহিনিচিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন দীপান্বিতা মার্টিন। দীর্ঘদিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।

গ্লিটজ: গত বছর প্রচারিত ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকটির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। কেমন লাগছে?

দীপান্বিতা: খুবই ভালো লাগছে। ভালো লাগছে শুধু ব্যক্তিগত অর্জন বলে নয়, একটা ভালো কাজের স্বীকৃতি যে পেয়েছি আমরা পুরো টিম সেটাই ভালো লাগার।

ভালো কাজের স্বীকৃতি যদি থাকে, তাহলে সেই কাজকে ঘিরে যারা অন্যান্য ভূমিকায় কাজ করবে, সেটা অভিনেত্রী হোক, ক্যামেরাম্যান হোক, সবারই স্বীকৃতিটা অটোমেটিক্যালি চলে আসে।

আমি বলবো যে, ভালো কাজটার জন্যই আসলে আমি স্বীকৃতি পেলাম। এরপর আমি এরকম পরিশ্রম করে আরেকটি ভালো কাজের অনুপ্রেরণা পাবো।

গ্লিটজ: ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ নাটকটি প্রচারের পরপরই ব্যাপক সাড়া পড়ে। এতে আপনার চরিত্র ও গল্পের মানবিক দিকগুলো কেমন মনে হয়েছে?

দীপান্বিতা: মানবিক দিক যদি বলি, গল্পটা ছিল একটা শিশুকে ঘিরে, যার ওপর অপ্রয়োজনীয় বোঝা চাপানো হয়।

বাবা মা’র অতৃপ্তি, যা আমরা আসলে ভবিষ্যত প্রজন্মের উপর চাপিয়ে দেই, ‘যেটা আমি পরিনি, সেটা তোমাকে পারতে হবে’। সেটা চাপিয়ে দেয়ার ফলে আসলে অনেক মেধা অনেক মন মরে যায়।

নাটকটির সঙ্গে আমার জীবনের একটা মিল বলি, আমি যখন খুব ছোট, আমি নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমি অভিনেত্রী হবো।

ক্লাস সিক্স থেকেই আমি অভিনয়কে খুব ভালোবাসতাম। ওই ভালো লাগাটা নিয়েই আমি এগোতে চেয়েছি।

আমি খুব কৃতজ্ঞ আমার মায়ের কাছে। কেননা তখন যদি আমার মা আমাকে তার ইচ্ছা পূরণের পথে পরিচালিত করতেন তাহলে আমি হয়তো অভিনেত্রী হতে পারতাম না।

আমার চরিত্রটি আসলে খুব একটা শিক্ষিত নারী নয়। স্বামী দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত। জাতিগতভাবেই আমাদের যে শিক্ষিত মা প্রয়োজন তাই আমার ডিরেক্টর ও স্ক্রিপ্টরাইটার দেখাতে চেয়েছেন।

গ্লিটজ: গতবছরের একটি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারটি দেওয়া হলো। হতবছরের আপনার অভিনীত আর কোন কাজটিকে সেরা মানবেন আপনি?

দীপান্বিতা: গতবছরে এ কাজটির পাশাপাশি অন্য আরেকটি কাজের কথা বলবো। সেটি হলো আফজাল হোসেনের ‘ছোটকাকু’।

সমাজ পরিবর্তন করতে চায় এমনই একজন মেয়ে। তার বাবা রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত, কিন্তু সে তার বাবার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে।

দুটো কাজই আমার কাছে প্রিয়। স্বীকৃতি যেহেতু এটার মধ্য দিয়ে এসেছে আমি সমানভাবেই হ্যাপি।

গ্লিটজ: চারুনীড়ম প্রতিবছরই এ পুরস্কারটি দিচ্ছে। কী বলবেন এ আয়োজন প্রসঙ্গে?

দীপান্বিতা: পুরস্কার প্রদানের দিন মঞ্চে আয়োজক গাজী রাকায়েত ভাই একটা কথা বলেছেন, যেটা আমি পরে ভেবেছি। ওটার কথা শোনার আগে আমার ভাবনাটা একটু অন্যরকমই ছিল ।

ওনার কথাটা আমার মনে ধরলো, উনি বলেছিলেন, মূল্য উদ্দেশ্য আসলে পুরস্কারটা নয়, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে অনুপ্রেরণা। এক ঘন্টার নাটক যেন হারিয়ে না যায়।

একটা ভালো গল্প বলার চেষ্টা, একটা ভালো নির্মাণের চেষ্টা সে বিষয়টিকে মাথায় রেখে তারা যে অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছেন সেটা আসলে প্রশংসাযোগ্য। অনেক ভালো একটি উদ্যোগ।

গ্লিটজ: ছোটবেলা থেকেই মঞ্চে কাজ করছেন, ছোটপর্দায় নিয়মিত অভিনয় করেছেন, বড়পর্দায়ও করেছেন কিছু। চরিত্রঅভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রি কি আপনাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পেরেছে?

দীপান্বিতা: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, একজন ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হিসেবে আমার যে যে চরিত্রগুলোতে কাজ করবার ক্ষমতা রয়েছে, যোগ্যতা রয়েছে, সে ধরণের চরিত্র আমাকে অনেকসময়ই দেওয়া হয়না।

তার কারণ হিসেবে আমাকে বলা হয়, আপনাকে নিয়ে করলে চ্যানেল এটা চালাবে না। এটা আমার জন্য বড় রকমের একটা কষ্ট হয়েই ধরা দেয়।

কিন্তু দর্শকের কাছ থেকে আমি কী পেয়েছি সেটা বলতে গেলে বলবো, তাদের ভালোবাসার জন্যই বোধহয় বাংলাদেশে আমি অভিনয়টাই এখনো করি। আরও অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো করলে আমি আর্থিকভাবে, সামাজিকভাবে আরও ভালো অবস্থানে থাকতে পারতাম।

তারপরও অনেক মোহ ত্যাগ করে, অনেক যুদ্ধ-কষ্ট সহ্য করে এই যে অভিনয়টা করি। যখন রাস্তায়, শপিংমলে, এয়ারপোর্টে আমার জন্য মানুষের চোখে ভালোবাসা দেখি তখন মনে হয় অভিনয়টাই কন্টিনিউ করি।

কিন্তু আমার ডিরেক্টর বন্ধুরা, যারা আমাকে নিয়ে কাজ করেছেন তাদের বলছি না, আসলে ভাস্টলি এক্সপ্লোর করার যে জায়গাটা, আমি আসলে সে সুযোগটা অনেক কম পেয়েছি।

অনেকেই বলেছে তুমিতো ইনট্রোভার্ট। এর উত্তরে আমি বলবো, সেটা আমার আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

চরিত্রঅভিনেতা হিসেবে এতদিনের যে মূল্যায়নের ঘাটতি ছিল তা অনেকাংশেই লাঘব হয়েছে চারুনীড়ম পুরস্কারটির মাধ্যমে।

কিন্তু আমি বলবো, আমারতো আসলে অনেক রকমের অনেক চরিত্র করা বাকি। সেই সুযোগগুলো আমি আসলে সেভাবে পাচ্ছি না।

গ্লিটজ: যারা চরিত্রাভিনেতা, সত্যিই অভিনয়টাকে শিল্প মেনে চর্চা করছেন তারা কি আসলে চকমকে গ্ল্যামারের কাছে হেরে যাচ্ছেন? ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান প্রেক্ষাপটে কী বলবেন?

দীপান্বিতা: হেরে যাচ্ছে না, আমার মনে হয় আমার দেখা মেয়ে বন্ধুরা বা ছেলে বন্ধুরা আমরা প্রত্যেকেই লড়াই করছি। হেরে যাওয়া বলা যেতো যদি আমরা অভিনয়টা ছেড়ে দিতাম। আমরা তো তা করিনি।

কিন্তু আমাদের লড়াইটা আরেকটু দেখা, আরেকটু মূল্যায়ন করার দরকার ।

এখানে হারা জেতা আসলে বিষয় না। দেশের বাইরে যদি তাকান, কলকাতার দিকে যদি তাকান, চকমকে গ্ল্যামারের বাইরেও অভিনয়ের যে জায়গাটা তারও একটি প্যারালাল ঘরানা আছে।

আমাদের এখানেও সে জায়গটা তৈরি হওয়া উচিত। আমি গ্ল্যামার নিয়ে যারা কাজ করে তাদের ব্যাপারে খুব শ্রদ্ধাশীল। কেননা সে তার জায়গায় যাচ্ছে। এটিকে আসলে না মানার কোনো জায়গা নেই।

গ্লিটজ: চরিত্রাভিনেতারা আসলে কতটুকু গুরুত্ব পাচ্ছে নাটকে?

দীপান্বিতা: খুবই কম গুরুত্ব পাচ্ছি।

গ্লিটজ: কেন এটা হয়েছে বলে মনে হয়?

দীপান্বিতা: কেননা সেরকম গল্প নেই, সে রকম নির্মাণ নেই। যে চার পাঁচটা কাজ হচ্ছে সেগুলোতে আমরা হয়তো কাজ করছি, কিন্তু পেশা হিসেবে নিয়ে বেঁচে থাকার পথটা দুর্গম হয়ে পড়ছে। এখন যে ধরণের গল্প আর নির্মাণশৈলী সে ধরণের কাজে চরিত্রের প্রয়োজন দেখতে পাচ্ছি না।

গ্লিটজ: অভিনয়কেন্দ্রীক ব্যস্ততা এখন কীরকম?

দীপান্বিতা: আসাদ জামানের পরিচালনায় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘থার্টি ফার্স্ট ডিসেম্বর’-এর কাজ শেষ করলাম। আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্র ‘ইলিশের স্বাদ’, অনিন্দ্য চাকীর রচনা ও পরিচালনায়, কলকাতা থেকে কাজটি করে এলাম।

জীবন জীবিকার জন্য কয়েকটি ধারাবাহিকে কাজ করছি। আরেকটি চলচ্চিত্রে কাজ করার কথা রয়েছে। সেটির ব্যাপারে সব চূড়ান্ত না হওয়ায় নামটা এখনই বলছি না।

ছবি:  যায়েদ ইসলাম